Friday, April 26, 2024
Homeবাণী-কথাবালির ঘর – দিলীপকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

বালির ঘর – দিলীপকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

বালির ঘর – দিলীপকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

দরজায় অনেকক্ষণ ধরে কে কড়া নাড়ছে। মৃগাংক আধা আধো ঘুমের মধ্যেও শুনতে পেল। এই সাতসকালে কে কড়া নাড়ছে। নিশ্চয়ই ঠিকে ঝি। মৃগাংক ভাবল, বাসবী নিশ্চয়ই উঠবে। কিন্তু উঠল না। খাটের ওপাশে শুয়ে আছে ও। বেশবাস অগোছালো। ঘুমুচ্ছে। মৃগাংক এবার ডাকল, দেখ না, ঠিকে ঝি বোধহয়। গলার স্বরে খানিকটা বিরক্তি। ওর ডাক বাঘী শুনতে পেয়েছে কিনা ঠিক বোঝা গেল না। কিন্তু পরক্ষণেই গোটাকয়েক রিক্তিসূচক অস্ফুট আওয়াজ করে পাশ ফিরল বাঘী। উঠবার কোন লক্ষণ নেই। মৃগাংক এবার বিছানায় গড়িয়ে গড়িয়েই বাবীর কাছাকাছি এল। ঠেলল হাত দিয়ে, দেখ না, দুগগার মা এসেছে নিশ্চয়ই।

গায়ে হাত লাগতেই একেবারে যেন ফোঁস করে উঠল, উঃ, বাবা, ঘুমুতেও পারব না একটু। খুলে দাও না দরজাটা।

দরজায় আবার কড়া নাড়ার আওয়াজ। এবার মৃগাংক বিছানা ছেড়ে উঠল, মুখে রিক্তির ছাপ স্পষ্ট। মেজাজটা খিচড়ে গেছে। খাট থেকে নেমে দেখল, বেবিকটে শুয়ে আছে বুবুল, ওর একমাত্র ছেলে। বছর দেড়েক বয়েস। মশারি তুলে ঘুম ঘুম। চোখে বুবুলকে দেখল একবার। যাক্, নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে।

ঘর থেকে বেরোলেই বারান্দা, তারপর ফ্ল্যাটের সদর দরজা। বারান্দায়। বেরোতেই একঝলক আলো চোখে লাগল। রোদ উঠে গেছে। বেলা কম হয়নি। ঘড়ি দেখল মৃগাংক। সাড়ে ছটা, অর্থাৎ ভোর হয়েছে অনেক আগেই। বারান্দার জানলা দিয়ে আকাশ দেখল ও। নির্মেঘ নীল। শরতের আকাশের মত। ঘরের জানলাগুলো বন্ধ থাকায় সময় বোঝা যায় না। সদর দরজা খুলতেই দেখল, দুগগার মা নয়, একটা বাচ্চা মেয়ে। মৃগাংক চিনতে পারল না।

মেয়েটি কেমন যেন ভয় ভয় মুখে থেমে থেমে বলল, দুগগার মা আজ আসতে পারবে না, বলে দিয়েছে।

মৃগাংক অস্বস্তি অনুভ্র করল, একেই গকাল বেশ রাত করে শোয়া হয়েছে, তার ওপর বাঘী যদি শোনে ঠিকে ঝি আজ আসতে পারবে না, তবে আর রক্ষে থাকবে না। এদিকে বুবুলকে রাখে যে মেয়েটা-মালতী, সে তো আগে থেকেই বলে কয়ে দিনকয়েকের ছুটি নিয়েছে। ওর মাসীর নাকি বিয়ে।

মৃগাংক জিজ্ঞেস করল, কেন, হয়েছে কি দুগগার মার!

—চোখের অসুখ হয়েছে।

—চোখের অসুখ!

মেয়েটা চলে গেলে দরজা বন্ধ করতে করতে বলল, যেন নিজেকেই, দ্যুৎশালা, যত ঝামেলা সাতসকালে। মনে মনে বিরক্ত ও ক্লান্ত বোধ করল।

ঘরে ফিরে কোন শব্দ না করেই খাটে উঠল, তারপর আবার শুয়ে পড়ল টান টান হয়ে। ভাবল, খবরটা এখন দিয়ে কাজ নেই। পরে বললেই হবে। কিন্তু বাসবী জেগেই ছিল, অবশ্য বিছানা ছেড়ে ওঠেনি, ও ব্যাপারটা বোধহয় আন্দাজ করেছে। বালিশে মুখ গুঁজেই বলল, কে, কার সঙ্গে কথা বলছিলে—

মৃগাংক যেন শুনতেই পায়নি, এমনভাবে চুপ করে রইল।

—কে এসেছিল, আবার জিজ্ঞেস করল বাসবী। আর চুপ করে থাকা চলে না। ওপাশ ফিরে শুয়েছিল মৃগাংক, পাশ না ফিরে বলল, চিনি না একটা বাচ্চা মেয়ে, বলল, দুগগার মা নাকি আজ আসবে না।

—কেন, ওর আবার কী হল! বাসবীর গলার স্বর এবার বেশ তীক্ষ্ণ।

–চোখ উঠেছে, কলকাতায় সকলের হচ্ছে।

—চোখ উঠেছে তো হয়েছে কি, বাসন ক’খানা মেজে দিয়ে যেতে পারল না। বাসবীর বলার রুক্ষ ভঙ্গীটা মৃগাংকর ভাল লাগল না।

আশ্চর্য, ঝিয়ের চোখ উঠেছে, কেন উঠেছে, এসব কী করে জানবে ও।

ভেতরে ভেতরে উত্তপ্ত হলেও ঠাণ্ডা গলায় বলল, জোর করলে হয়ত আসতে পারে, কিন্তু বুবুল, বুবুলের কথা ভেবেই আর কিছু বললাম না।

একটু থেমে হঠাৎ সমাধান খুঁজে পেয়েছে এমনভাবে বলল মৃগাংক, আজকের মত কাঁচের বাসনগুলো বের করে নাও না।

—তুমি তো বলেই খালাস! যত্ত ঝামেলা তো আমার। মুখ ঝামটে উঠল বাসবী।

এবার মৃগাংকর মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে। মুখে বেশ কয়েকটা খারাপ কথা এসে গিয়েছিল, কিন্তু বাসবীর চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে গেছে বুবুলের। কাদছে। মৃগাংক কিছু বলবার আগেই বেবিকট থেকে বুবুলকে কোলে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল বাসবী।

মৃগাংক ভেবেছিল আরো কিছুক্ষণ শুয়ে থাকবে, কাল রাতে ঘুমটা ভালো হয়নি। কিন্তু মেজাজটা বেশ খিচড়ে গেছে, আর ঘুম-টুম হবে না। ভাবল বাড়ি থেকে এক্ষুণি বেরিয়ে যায়, ঝামেলা আর পোষায় না। বন্ধু কেবিনে গেলে পাড়ার দু’য়েকজন পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হবে, ওখানেই চা খেতে খেতে আড্ডাও মারা যাবে। কিন্তু পরক্ষণে মনে পড়ল, বুবুলের জন্য দুধ আনার সময় হয়ে গেছে। পাড়ায় একটা খাটাল আছে, সেখান থেকে রোজ আনতে হয়। ঠিক সময়মত না গেলে আবার খাঁটি দুধ পাওয়া যায় না, দুধ জল মিশেল হয়ে যায়। আগে ঠিক এমন ছিল না। ইদানিং

হরিণঘাটার দুধ প্রায়ই খারাপ হতে থাকায়, কার্ড রিনিউ করবার নানা ঝামেলায়। অনেক লোকই তিক্তবিরক্ত হয়ে এদিকে ভিড় জমিয়েছে। এতগুলি খদ্দের বেমককা পেয়ে শিউচরণের ব্যবহার বেশ দুবিনীত হয়ে উঠেছে, অথচ এই লোকটাই আগে। কিরকম আশ্চর্য বিনয়ী ভদ্র ছিল, নরম করে কথা বলত। আজকাল তো কথায় কথায় বলে, এখানে নাহি পোষায় তো দোসরা জায়গা চলিয়ে যান।

লোকটার কথা শুনে মাঝে মাঝে গা জ্বলে যায় মৃগাংকর, কিন্তু কিছু করবার উপায় নেই। বুবুলের জন্য দুধ চাইই। অথচ শিউচরণ ছাড়া আর কোন গয়লা ও তল্লাটে নেই। ট্রামলাইনটা পেরিয়ে আরো দুয়েকজন আছে বটে, তবে ওখানকার অবস্থাও তথৈবচ।

দুধ নিয়ে ফিরে আসামাত্র বাসবী বাজারের থলে দুটো এগিয়ে দিল নিঃশব্দে। বেশ বোঝা যায়, ঝি আসেনি বলে মুখ গম্ভীর, ব্যাজার।

মৃগাংক বলল, দাঁড়াও, বাথরুমটা ঘুরে আসি আগে।

মৃগাংকর এই এক দোষ। সকালের প্রাতঃকৃত্য সারতে ঝাড়া একটি ঘণ্টা লাগে। কিন্তু আজ হাতমুখ ধুয়ে, দাঁত মেজে, প্রাতঃকৃত্য সেরে মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যে বেরিয়ে এল বাথরুম থেকে। বাসবী তখন রান্নাঘরে গতরাত্রের বাসনপত্ৰ মাজতে বসেছে। তারই ঝনঝন আওয়াজ হচ্ছে। বুবুল ওদিকে কয়লা রাখবার জায়গা থেকে একমনে কয়লা তুলছে, খাচ্ছে, হাতে মুখে মাখছে।

বুবুলের ব্যাপারে কোনোরকম অবহেলা সহ্য করতে পারে না মৃগাংক। গলায় ঝঝ মিশিয়ে মৃগাংক বলল, ওদিকে বুবুল তো কয়লা খাচ্ছে, দেখতে পাচ্ছ না।

বাসনপত্রের ঝনঝন শব্দ উঠল, দুটো হাতে কত আর সামলাবো। তোমারই তো প্রাতঃকৃত্য সারতে পুরো একটি ঘণ্টা। খোটা নিঃশব্দে হজম করল মৃগাংক, তারপর কিছু না বলে বুবুলকে বাথরুমে নিয়ে গেল, ওর মুখ থেকে কয়লার টুকরো বার করল, হাত-মুখ ধোয়ালো সাবান দিয়ে।

ঠিক করল, বুবুলকে নিয়েই বাজারে যাবে। বুবুলকে নিয়ে বাজারের থলে দুটো হাতে নিয়ে রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে গম্ভীরমুখে জিজ্ঞেশ করল বাসবীকে, কি আনতে হবে।

আরো গম্ভীর স্বরে উত্তর এল, যা খুশি।

এরপর হঠাৎ বাসবী ওর কোল থেকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল বুবুলকে। থমথমে গম্ভীর মুখে বাজার গেল মৃগাংক। বাড়ির কাছেই ছোট বাজার। জিনিসপত্রের দাম চড়া হলেও সময় সংক্ষেপের জন্য এখানেই বাজার সারে মৃগাংক। বাজারে ঢোকবার মুখে দেখা শোভনবাবুর সঙ্গে। শোভন বলল, এই যে মৃগাংকবাবু, কি খবর? আপনার তো আজকাল দেখা পাওয়াই যায় না।

–চলে যাচ্ছে, ঠাণ্ডা গলায় জবাব দিল। পরক্ষণেই মনে হল, একটু যেন অভদ্র হল, তাই পালটা প্রশ্ন করল, ঠোঁটে হাসি ফোঁটাল, আপনি ভালো।

–আর আমার কথা বলবেন না, বাচ্চা দুটোর পেটের অসুখ, তাছাড়া মাও ভুগছে আজ বস্ত্রখানেক। মিসেসের আবার টিউমার, শিগগিরই অপারেশন করতে হবে। আপনি আছে বেশ, ঝাড়া গা হাত পা–

মৃগাংক কিছু শুনল, কিছু শুনল না। এধ্ব সাংসারিক বিশেষত যে ব্যাপারে ওর নিজের কোনো সম্পর্ক নেই, ভালো লাগে না। কিন্তু কি করা, এক পাড়ায় সৎ প্রতিবেশী হিসেবে থাকতে গেলে মুখে সমবেদনার ছায়া ফেলে শুনতেই হবে এসব।

গলার স্বরে সহানুভূরি ভাব ফোঁটাল মৃগাংক, তাহলে তো বেশ ঝামেলায় আছেন দেখছি।

—আর বলবেন না, সংসার নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছি। এদিকে আর এক বিপদ, ভাগনেটাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে, মার্ডার চার্জে। কী যে করি!

এরপর শোভনবাবু পাক্কা মিনিট পনেরো ধরে নিজের সুখ-দুঃখের ফিরিস্তি শুনিয়ে গেলেন। মৃগাংক কুইনিন গেলার মত করে কথাগুলো কোনোরকমে গলাধঃকরণ করল। আবার পরমুহূর্তেই উগরে ফেলল।

মিনিট কুড়ি এভাবে নষ্ট হবার পর তাড়াতাড়ি বাজার সেরে ফিরে দেখল, বাসবী চা তৈরি করছে। ওকে দেখে বলল, এতক্ষণে ফেরা হল। এক্ষুণি তো বলা হবে, অফিসের ভাত চাই!

মৃগাংক বাজারের থলে দুটো রান্নাঘরের দরজায় রেখে হাতমুখ ধুয়ে চেয়ারে বসল। এবার বাসবী দু’কাপ চা করে এক কাপ এগিয়ে দিল ওর দিকে। সঙ্গে দুটো ক্রিম ক্র্যাকার। সামনেই বুবুল ঘুরঘুর করছিল। ওদের চা খেতে দেখে বুবুল এগিয়ে এল বাসবীর দিকে। ওর কোলে চড়ল। বাবী নিজের কাপ থেকে খানিকটা চা’ ঢালল প্লেটে, তারপর বুবুলের মুখের কাছে ধরল। মৃগাংক দেখল, চুকচুক করে চা খাচ্ছে দেড় বছরের বুবুল।

এত বাচ্চা ছেলের চা খাওয়ার ব্যাপারটা ওর দাও হয় না। এ নিয়ে বার দুয়েক কথা কাটাকাটিও হয়ে গেছে বাসবীর সঙ্গে। তাই গত দিন কয়েক চা দেয়নি। বুবুলকে। অন্তত মৃগাংক দেখেনি।

মৃগাংক ভ্রুকুটি করল, ওকে চা দিচ্ছ যে।

বাবী অত্যন্ত সহজ ভঙ্গীতে, যেন কিছুই হয়নি এমনভাবে বলল, কেন, কি হয়েছে, একটুখানি তো চা।

মৃগাংক বুঝল, এখনো চটে আছে বাসবি, কারণ ও চটে গেলেই তবে এমন নৈব্যক্তিক ভঙ্গীতে কথা বলে।

–কিন্তু তোমাকে তো আগেই বলেছি, চা হচ্ছে নেশার জিনিস, বুবুলকে দেবে, ক্ষতি হতে পারে।

—কেন, টুলুদি তো ওর বাচ্চাটাকে চা খাওয়ায়, কফি খাওয়ায়, কিছু তো হয়নি। মৃগাংক ওর জবাব শুনে ধৈর্য হারিয়ে ফেলছিল ক্রমশ, তবু শান্ত গলায় বলল, এফেক্ট তো আর একদিনে বোঝা যায় না। সময় লাগে।

-কেন অতীনদা তো ডাক্তার। তাহলে বুঝি টুলুদিকে কিছু বললে না। অতীনদা বলেছে, চায়ে নাকি কেফিন আছে। এনার্জি যোগায়।

হঠাৎ মৃগাঙ্কর স্বর কর্কশ হয়ে উঠল, হ্যাঁ, অতীনদা যখন বলেছে, তবে আর কি! আমার কথার তো কোন দামই নেই তোমার কাছে। অতীনদা, বুলুদা, এদের কথাই তো তোমার কাছে বেদবাক্য, আর আমি তো ফালতু–

বুলুদার নাম শুনে বাসবির কপালের রগ শক্ত হয়ে উঠল, চিৎকার করে বলল, ইতরের মত কথা বল না।

এরপর নিজের কাপের অবশিষ্ট চা একটানে বেসিনে ঢেলে ফেলে দিয়ে বুবুলকে নিয়ে দুমদাম শব্দে শোবার ঘরে ঢুকল। মৃগাংক বুঝল, আজ কপালে দুর্ভোগ আছে। একবার মনে হল, বুলুর নামটা না বললেই হত। প্রথম যৌবনের ভালবাসা সম্বন্ধে মেয়েদের একটা দুর্বলতা থাকে। বুবুল এতক্ষণ মুখ দিয়ে নানারকম শব্দ করছিল, কথা বলছিল আধধা আধো স্বরে। কিন্তু এখন ও স্তব্ধ হয়ে গেছে, কেমন অসহায় দৃষ্টি। এক চুমুকে বাকি চাটা শেষ করে মৃগাঙ্ক বদ্বার ঘরে এল খবরের কাগজটা নিয়ে। যদি অশান্ত মনটাকে শান্ত করে তোলা যায়। দূর শালা, খবরের কাগজেও আজকাল সেই একই খবর। বাংলাদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ রিফিউজি আসছে।

হারিয়ে নিঃস্ব রিক্তের মত। চারিদিকে কলেরার প্রকোপ। ইনজেকশন পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলা বনধ হতে পারে। পুলিশের গুলি আর আততায়ীর ছোরায় দশজনের মৃত্যু। বোম্বাইয়ে জাম্বো জেট। অন্ধ্রপ্রদেশে হরিজন বালককে পুড়িয়ে মারা সম্পর্কে কমিশন গঠন। ফ্যাক্টরিতে লক আউট। ভিয়েতনামে আবার বোমাবর্ষণ। বোগাস, খবরের কাগজেও সেই একই খবরের কচকচি। শালা, কোথাও শান্তি নেই। বিরক্তিতে কাগজটা ছুঁড়ে মারল দেয়ালে।

অস্বস্তি কাটাবার জন্য ঘরময় পায়চারি করল ক্ষানিকক্ষণ, তারপর পাশের ঘরে গেল। বাসবী শাড়ি পালটাচ্ছে, বুবুলও জামা প্যান্ট পরেছে, পায়ে জুতো। কোথায়ও যাবে মনে হচ্ছে।

খুকখুক করে কাশল একবার মৃগাংক, তারপর বলল, কী ব্যাপার, চললে কোথায়?

কোনা উত্তর নেই,আবার জিজ্ঞেস করল মৃগাংক।

—ভবানীপুর, সংক্ষিপ্ত কাটা জবাব।

ভবানীপুরে বাসবীর বাপের বাড়ি। মৃগাংক আর কিছু বলল না, বলার দরকার আছে মনেও করল না। কারণ, বাসবী একবার যখন ঠিক করেছে, তখন যাবেই। কিছুতেই রোখা যাবে না। বরং রুখতে গেলেই উল্টো ফল হবে। ঝগড়া ঝাটি চিৎকার সমস্ত পাড়া সচকিত হয়ে উঠবে। তার চেয়ে এই ভালো, রাগ পড়লে দু’তিন দিন পরে নিজেই ফিরে আসবে।

বাসবী চলে গেল বুবুলকে নিয়ে। যাবার সময় ল্যাচকির দরজাটা দুম করে বন্ধ করে গেল সশব্দে। এত জোরে শব্দ করবার দরকার ছিল না, হয়তো ছিল, মৃগাংক ভাবল, নিজের রাগকে বাইরে দেখাবার জন্য।

এরপর মেজাজ খারাপ করে বসে রইল বেশ খানিকক্ষণ। অসহ্য হয়ে উঠেছে। ঘর সংসার, আর ভালো লাগে না, ইচ্ছে করে সন্ন্যাসী হয়ে যায়, এখন ও বুঝতে পারে কেন গৌতম বুদ্ধ স্ত্রী পুত্র সংসার ত্যাগ করেছিলেন। মাঝে মাঝে ভাবে ও, জাহাজের নাবিক হয়ে ঘুরে বেড়ায় দেশ বিদেশের বন্দরে।

ঘড়ি দেখল। বেলা হয়ে গেছে, অফিস যেতে হবে। তাড়াতাড়ি দাড়ি কামিয়ে। মান করতে গেল। চৌবাচ্চা ভর্তি টলটলে জল। গায়ে এক মগ ঢালতেই প্রাণটা যেন জুড়িয়ে গেল। মনের ভাবনা, চিন্তা, গ্লানি আপাতত অনেক কম হচ্ছে। হঠাৎ বেশ হালকা লাগছে নিজেকে। বাড়িতে এখন কেউ নেই, একেবারে ফাঁকা, কোনো দায় দায়িত্ব নেই, এই চিন্তাটা মন্দ লাগল না ওর। গুনগুন করে গান করল খানিকটা, ওর মেজাজ এখন বেশ ভালো।

অফিসে গিয়ে নিজের চেয়ারে বসল আয়েস করে। হাতের সামনে টেবিলে অনেকগুলি ফাইল। কিন্তু এখন কোন কাজ করতে ইচ্ছে না। মনটা কেমন উড়ু উড়ু লাগছে। তবু দু’একটা ফাইল টেনে খানিকক্ষণ পড়ল, তারপর সই। কিন্তু এভাবে আর। কতক্ষণ কাটে। টিফিনের পর ফোন তুলে ডায়াল করল। গুডলাক, ফোনে পাওয়া গেল নন্দিতাকে, ওর পুরনো বান্ধবী।

—হ্যাঁলো নন্দিতা, আমি মৃগাংক বলছি।

—কি বল।

—কি করছ?

—আপাততঃ গোটাকয়েক জরুরি চিঠি টাইপ করছি।

—ছুটির পর—

—আপাতত কোন প্রোগ্রাম নেই।

—এই শোনো, মেট্রোর সামনে পাঁচটার সময় আসতে পারবে?

—হঠাৎ, কি ব্যাপার?

–এসোই না—

—ঠিক আছে, তবে পাঁচটা নয়, সওয়া পাঁচটা।

ফোন ছেড়ে দিল মৃগাংক। নন্দিতা ওর কলেজ জীবনের বান্ধবী, কয়েক বছরের জুনিয়র। এককালে ভালবাসা-টাসাও ছিল। কিন্তু বিয়ে হয়নি নানা কারণে। শেষ পর্যন্ত নন্দিতা অবশ্য বিয়ে করেছিল এক মেরিন ইঞ্জিনিয়ারকে। কিন্তু বছর দুয়েক যেতে না যেতেই ডিভোর্স। তারপর থেকে নন্দিতা একলাই থাকে একটা ফ্ল্যাট নিয়ে, পাম এভেনিউতে। ভাল মাইনের চাকরি একটা বিদেশি ফার্মে। মৃগাংকর সঙ্গে বিয়ে না হলেও এখনো বন্ধুত্ব আছে বলা যায়, যদিও ইদানীং আর বিশেষ দেখা-সাক্ষাৎ হত না। বাসবী অবশ্য এসব কিছুই জানে না।

অফিস থেকে পৌনে পাঁচটা নাগাদ বেরোল মৃগাংক। গন্তব্য মেট্রোর দিকে। ফুটপাতের দুধারে দোকান, সেখানে নানান জিনিসের পশরা। এত চওড়া ফুটপাত, অথচ লোকের ভিড়ে পথচলা দায়। এই ক’বছরে প্রচুর লোক বেড়েছে কলকাতায়, অথচ রাস্তা বা ফুটপাত বাড়েনি সে অনুপাতে। ভিড় ঠেলে চলতে চলতে বিরক্তি ফুটে উঠল মৃগাংকর মুখে। ন্যাস্টি! সমস্ত শহরটাকে ভিখিরি আর হকাররাই দখল করে নেবে দেখছি।

মেট্রোর নীচে পৌঁছে দেখল, নন্দিতা এসে গেছে। মৃগাংক বলল, কি, বিফোর টাইম যে!

নন্দিতা হাসল, ঠিক আগের মত, মৃগাংক দেখল, ওর চেহারায় বেশ চাকচিক্য এসেছে, পোশাক-পরিচ্ছদ আগের চেয়ে অনেক স্বচ্ছ, কোমরের অনেকটা অংশই অনাবৃত। ওকে দেখলে কে বলবে ওর বয়স তেইশ-চব্বিশের বেশি, অথচ মৃগাংক জানে, ওর বয়স তিরিশ ছুঁই ছুঁই করছে।

ওরা কাফে-ডি-মণিকোর একটা কেবিনে ঢুকল। নন্দিতা বলল, আজ অফিস একটু তাড়াতাড়ি ছুটে হয়ে গেল, তাছাড়া

—তাছাড়া কি?

–হঠাৎ তুমি এতদিন পরে ডাকলে কেন, কৌতূহল ছিল, বছরখানেক তো কোন পাত্তাই ছিল না তোমার!

গরম কফির কাপে চুমুক দিয়ে মিটিমিটি হাসল মৃগাংক, কৌতূহল মিটেছে?

-দেখছি তোমাকে, বেশ বদলেছ!

–যেমন—

—আগে তুমি বেশ লাজুক ছিলে—

—তুমিও পালটেছ। অবশ্য সবাই পালটায়। তাই নিয়ম। সময় তার অভিজ্ঞতার ছাপ রেখে যায় দেহে, মনে। মৃগাংকর গলাটা বেশ ভরাট শোনাল এবার।

-তুমি কি এইসব জ্ঞানগর্ভ কথা শোনাবে বলে ডেকেছ?

—আরে না না, তোমাকে অনেকদিন পরে দেখতে ইচ্ছে করল, তাই ফোনে ডাকলাম। আচ্ছা, একটা সিনেমা দেখলে হয় না।

—কোথায়।

–মেট্রোতে। বেডসাইড স্টোরি চলছে।

–রক হাডসন, বেশ জমবে, মন্তব্য করল নন্দিতা।

ড্রেস সার্কেলে কর্ণারের দিকে দু’টো সীট নিয়েছে মৃগাংক। এয়ার কণ্ডিশনড় সিনেমা হল, আবছা মৃদু আলো, সিনেমা এখনো শুরু হয়নি। মৃগাংক ভাবছিল, নন্দিতা এখনো কেমন হাসিখুশি, এখনো চার্ম রয়েছে, বাসবীর মত খিটিয়ে যায়নি। অথচ বয়সে বাবীর চেয়ে বড়ই হবে। ওর শরীর থেকে কেমন একটা মৃদু মিষ্টি সুন্দর গন্ধ আসছে, ঘামের গন্ধ নয়। পরক্ষণেই মনে পড়, ওদেব অফিসটা এয়ার কণ্ডিশন, তাইত নন্দিতার চেহার এত ফ্রেশ, একটুও টাল খায়নি। তাছাড়া সঙ্গে বিলেতি সেন্টের শিশি রয়েছে, এইতো একটু আগে ব্লাউজে একটু মেখে নিল।

হলের আলো নিভে গেল ক্রমে। ট্রেলর ছবি শুরু হয়েছে। একটু আগেও দুজনে ফিসফিস করে কথা বলছিল, এখন অবশ্য ততটা বলছে না। মৃগাংক ভাবছিল, নন্দিতার শরীরটা এখনো পৃথিবীর গভীরের মত রহস্যময়। যৌবনের রেখাগুলি কেমন অদ্ভুতভাবে আকর্ষণ করে। মৃগাংক অনুভব করে ‘ব দেহের তাপ বাড়ছে। হঠাৎ অন্ধকারের মধ্যে নন্দিতার একখানা হাত নিজের হাতে তুলে নিল, ফেলতে লাগল আলতোভাবে। নন্দিতা কোন আপত্তি করল না। পরনে স্লিভলেস ব্লাউজ। ওর অনাবৃত হাত বেয়ে, মৃগাংকর হাত উঠল কাঁধ পর্যন এলোমেলোভাবে। তারপর কাঁধ বেয়ে সাপের মত কোমরে নামল ওর হাত, আস্তে আস্তে বিলি কাটছে কোমরের কাছাকাছি অঞ্চলে কিন্তু নন্দিতা নির্বিকার। বরং ওর মুখে যেন একটা প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ের হাসি। একটু পরে নন্দিতা নিচু হল, ওর হাতটা সরিয়ে দিল আলতোভাবে। ওর কানের কাছে মুখ এনে বলল, তুমি আজ বড় দুষ্টুমি করছ, টি বয়। ও মৃদু হাসছিল।

সিনেমা ভাঙ্গল রাত্রি আটটা নাগাদ। নন্দিতা বলল, এবার তুমি বাড়ি ফিরবে তো।

—এখন বাড়ি ফিরে কী করব? আজ বাসবী: নেই, রাগ করে বাপের বাড়ি গেছে।

—ও বুঝলাম, বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া, তাই আমাকে মনে পড়ল।

–না, ইয়ার্কি নয়, একেবারে ডিসগাস্টেড হয়ে গেছি। চল, কোথায়ও রাতের খাওয়াটা সেরে নেয়া যাক্।

পার্কস্ট্রিটে একটা রেস্তেরাঁর সামনে ওদের ট্যাক্সি থামল। রেস্তেরাঁর মুখেই একটা ভিখিরি। স্ট্রেঞ্জ, এখানেও ভিখিরি, দেশটাকে দেখছি এরাই খাবে। বিদেশিদের কাছে আর প্রেস্টিজ রইল না। মৃগাংকর চোখ সরু হল :

এয়ার কণ্ডিশনড রেস্তেরাঁ, ভেতরে কেমন অনুজ্জ্বল আলো, চারদিকে মোহময় পরিবেশ, বিলাস: নারী-পুরুষদের দল, রঙিন প্রজাপতির মত উড়ছে একটু দুরে উঁচু ফ্লোরে ক্যাবারে ড্যান্সার, সমস্ত শরীরে নামমাত্র পোশক দু’পিস। সঙ্গে মিউজিকের চড়া সুর। নাচ শুরু হয়েছে।

এপাশে একটা টেবিল বুক করল ওরা। ফ্রায়েড রাইস, চিকেন তন্দুরি, এছাড়া বিয়ার এক বোত।

–তোমার চলে তো, মৃগাংক জিজ্ঞেস করল।

রহস্যের হাসি হেসে ঘাড় নাড়ল নন্দিতা। খেতে খেতে অল্প-সল্প গল্প করছে, মাঝে মাঝে মৃগাংকর দৃষ্টি ক্যাবারে ড্যান্সারের দিকে, ওর দৃষ্টি যেন ঘোলাটে হয়ে আসছে। ঘোলা • চোখ দুটো নন্দিতার শরীরে কি যেন খোঁজ করছে। এক এক সময় ওর মনে হচ্ছে, নন্দিতাই বুঝি কাবারে নাচছে। এখন নন্দিতা উচ্ছল, হাসছে, ফুলছে, ক্যাবারে মেয়েটির মত ওর যৌবনের রেখাগুলি বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে মৃগাংকর চোখে। ওর মনের আদিম গুহায় নন্দিতাকে ঘিরে কয়েকটি কামার্ত চিন্তা আবর্ত সৃষ্টি করল।

মৃগাংক হঠাৎ ফস করে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা নন্দিতা, তুমি নাচতে পারো।

–হঠাৎ!

–না এমনিই জিজ্ঞেস করলাম।

খাওয়া-দাওয়ার পালা চুকলে রেস্তেরাঁর বিল মিটিয়ে বেরিয়ে এল দুজনে।

–এবার, জিজ্ঞেস করল মৃগাংক।

—চল, আমাকে পৌঁছে দিয়ে আসবে, নন্দিতা হাসছে, রহস্যময় ওর হাসি।

–চল, নন্দিতা ওকে দুর্নিবারভাবে টানছিল, ওর আকর্ষণ এড়ানো মৃগাংকর পক্ষে এই মুহূর্তে দুষ্কর।

পার্কস্ট্রীট থেকে একটা হলদে কালো ট্যাক্সি ছুটল পাম এভেনিউর একটা ফ্ল্যাট লক্ষ করে। ট্যাক্সির অন্ধকারে মৃগাংক বারকয়েক জড়িয়ে ধরল নন্দিতাকে, চুমু খেল, শিখ ড্রাইভারের গোপন লোভাতুর দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে।

ট্যাক্সি থেকে নেমে নন্দিতা বলল, এখান থেকেই বিদায় নেবে, বসবে না একটু। দ্বিরুক্তি না করে ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে নামল মৃগাংক।

নন্দিতার ফ্ল্যাট ছোট হলেও বেশ ছিমছাম, সাজানো গোছানো। কিছুটা বিলাস বহুলই বলা চলে। নন্দিতার শোবার ঘরে ঢুকল ওরা।

প্লিজ, বোস একটু, এক্ষুণি আসছি বলে নন্দিতা পাশের ঘরে গেল। এবার মৃগাংক ঘরের সবকিছু দেখতে লাগল খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। ঘরের একপাশে হালফ্যাশানের শোবার খাটে ডানলোপিলোর নরম বিছানা। আর একপাশে একটা ওয়ারড্রোব ও ড্রেসিং টেবিল, সবই ঝকঝকে, তকতকে। ঘরের দেয়ালে কয়েকটা ক্যালেণ্ডার, সবই বিদেশি মেয়েপুরুষের ছবিওয়ালা। ঘরের আলো মৃদু নীল। এই আলোয় সবকিছুই কেমন মায়াময় মনে হয়। মৃগাংক ঘুরে ফিরে এইসব দেখে বিস্মিত হচ্ছিল মনে মনে। নন্দিতা আগের মত নেই, অনেক পালটেছে। আশ্চর্য, সামান্য কয়েকটা বছরে এত পরিবর্তন। এমন সময়ে নন্দিতা ঘরে ঢুকল, ধীরে ধীরে লঘু পদক্ষেপে। অবাক হল মৃগাংক। ওর পরনে হালকা পিংক কালারের নাইটি, লেসের। তার নীচে আর কিছু নেই। নাইটির স্বচ্ছলতা ভেদ করে ওর চোখ আনারস রংয়ের শরীর দেখতে পেল। নন্দিতা এখন মৃগাংকর খুব কাছে, এত কাছে যেখান থেকে মেয়েদের শরীরের গন্ধ পাওয়া যায়। হালকা গোলাপ ফুলের গন্ধ। নন্দিতা ওর খুব কাছে দাঁড়িয়ে আলতোভাবে ওর কাঁধে হাত রাখল। চোখের কালো তারা নাচিয়ে প্রশ্ন করল, কেমন। লাগছে? ডু আই লুক চার্মিং? তারপর এক ধরনের হাসিতে ভেঙ্গে পড়ল। মৃগাংকর মনে হল, ওর যেন নেশার মত হয়েছে। সবকিছু কেমন স্বপ্নের মত রঙিন মোহময়। নন্দিতা এবার আরো কাছে। মৃগাংকর সমস্ত শরীরে কেমন ঝিনঝিনে ভাব। মহুয়ার। গন্ধে পাগল ভালুকের মত উত্তেজনায় ওর শরীরটা থরথর করে কাঁপছে। এইসব। মুহূর্তে নিজেকে যুক্তি দিয়ে সংযত করে রাখা যায় না। মৃগাংকও পারল না। প্রচণ্ড আবেগে সমস্ত শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরল নন্দিতাকে, নন্দিতার নরম পায়রার মত উষ্ণ শরীরকে। ঘরের মৃদু নীল আলো নিভেছে। নন্দিতা ও মৃগাংক নরম বিছানার অন্ধকারে। শরীরের ভাজে ভঁজে কিছুটা খেলা। হঠাৎ মৃগাংকর কী যেন মনে হল। কপালে কয়েকটা কুঞ্চিত রেখার সারি। কেমন একটা অপরাধবোধ নোঙর ফেলতে চাইছে ওর মনে। কিন্তু নন্দিতা ওকে বাঘিনির মত জাপটে ধরেছে। আর থামবার কোনো উপায় নেই। ক্ৰমে মৃগাংক নিজেকে হারিয়ে ফেলল। ওর নিঃশ্বাস এখন ঘনতর। ক্রমে একসময় বাঘিনি শান্ত হল, ঝড়ের পরে শান্ত সকালের মত।

কিছুক্ষণ পরে মৃগাংক বলল, আমি চলি তাহলে।

নন্দিতা হাসল, বড় ক্লান্ত সে হাসি, কিন্তু কিছু বলল না। মৃগাংক ভাবল, ওর হাসিটা কেমন পুরন, বয়স্ক। ওর মনে হল, নন্দিতার শরীরে এখন অনেক ভাজ।

নিজের ফ্ল্যাটে ফিরে ল্যাচকির চাবি ঘুরিয়ে ঢুকতেই অবাক হয়ে গেল মৃগাংক। বাসবি বসে আছে ওর জন্য, টেবিলে খাবার ঢাকা। অপরাধীর মত মৃগাংক জিজ্ঞেস করল, ফিরলে কখন?

বাসবি বলল, সেই সন্ধেবেলা। জানো আজ সারাদিন খুব মজা হল। দাদার এক বন্ধু বিকাশদা জার্মানি থেকে ফিরেছে। বিকাশদার গাড়ি চড়ে সারাদিন ঘুরলাম আমরা, এয়ারপোর্ট, চিড়িয়াখানা, বোটানিক, কত কি দেখলাম। তুমি তো আর কোনোদিন নিয়ে যাও না।

মৃগাংক তাকিয়ে দেখল, বাসবির সারা মুখ উজ্জ্বল, উদ্ভাসিত। এই মুহূর্তে যে কোনো পুরুষই ওর প্রেমে পড়তে পারে।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments