Wednesday, August 27, 2025
Homeবাণী ও কথাএ ডেড উইমেন্স সিক্রেট - গী দ্য মোপাসা

এ ডেড উইমেন্স সিক্রেট – গী দ্য মোপাসা

এ ডেড উইমেন্স সিক্রেট – গী দ্য মোপাসা

মহিলা কোনও ব্যথা অনুভব না করেই মারা গেছেন। তাঁর নিথর দেহ বিছানার ওপর পড়ে আছে। দু’চোখ বন্ধ। চেহারায় প্রশান্তির ছাপ। তার মাথার লম্বা, সাদা চুলগুলো বিছানার ওপর এমনভাবে বিন্যস্ত হয়ে পড়ে আছে, দেখে মনে হয় মৃত্যুর মিনিট দশেক আগে তিনি এগুলো পরিপাটি করে আঁচড়েছেন। লাশ দেখে মনে হবে কোনও পবিত্র আত্মার বসবাস ছিল এই দেহে।।

বিছানার পাশে হাঁটু গেড়ে বসে আছেন মৃত মহিলার ছেলে। তিনি একজন বিচারক। ন্যায় বিচারের জন্য তাঁর যথেষ্ট খ্যাতি রয়েছে। তার পাশেই মহিলার একমাত্র মেয়ে বসে কাঁদছে। তাকে সবাই সিস্টার ইউলালি বলে ডাকে। ছোটকাল থেকেই সে চার্চের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মাঝে বড় হয়েছে।

ওদের বাবার সম্বন্ধে ওরা তো বলতে গেলে কিছুই জানে না। শুধু জানে, মাকে কখনও সুখ দিতে পারেনি।

মেয়েটা বার বার মায়ের হাতে চুমু খাচ্ছে। মহিলার অন্য হাতটা বিছানার চাদর খামচে ধরে আছে।

দরজায় টোকা দেয়ার শব্দ শুনে ভাই-বোন সেদিকে তাকাল। ডিনার সেরে ফিরে এসেছেন প্রিস্ট। তাকে বিমর্ষ দেখাচ্ছে। পেশাদারী ভঙ্গিতে বললেন, ‘মাই পুওর চিলড্রেন, এই দুঃখের সময় আমি তোমাদের সাথে থাকতে চাই।’

সিস্টার ইউলালি হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘ধন্যবাদ, ফাদার। কিন্তু আমরা মায়ের সাথে থাকতে চাই একান্তে। তাঁকে দেখার এই শেষ সুযোগ। যখন ছোট ছিলাম, তখন আমরা একসাথে ছিলাম। আর এখন…’ প্রচণ্ড দুঃখে তার চোখ থেকে পানি পড়তে লাগল। কথা শেষ করতে পারল না।

তার কথা শুনে প্রিস্ট বাউ করে বললেন, ‘তোমাদের যেমন ইচ্ছা, বাছা।’ তিনি বিছানার পাশে হাঁটু মুড়ে বসে বুকে ক্রুশ আঁকলেন। তারপর প্রার্থনা করে নিঃশব্দে উঠে দাঁড়ালেন। বিড়বিড় করে বললেন, ‘উনি খুব ভাল মানুষ ছিলেন।’

ঘরের এক কোনায় রাখা ঘড়ির টিকটিক্ শব্দ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। বাইরে থেকে আসা বাতাসে খড় আর কাঠের মিষ্টি গন্ধ। চাদের নরম আলো জানালা দিয়ে ঘরে ঢুকেছে। ব্যাঙের ডাক আর ঝিঝি পোকার শব্দ ছাড়া আর কোনও শব্দ নেই।

মনে হচ্ছে এক নীরব প্রশান্তি মৃত মহিলাকে ঘিরে রেখেছে।

দু’ভাই-বোন মৃতদেহের পাশে হাঁটু মুড়ে বসে উচ্চস্বরে অঝোরে কাঁদছে! আস্তে আস্তে তাদের কান্নার শব্দ কমে এল। উভয়েই এখন ফোঁপাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর দুজনে উঠে দাঁড়িয়ে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।।

পুরানো স্মৃতিগুলো বার বার ওদের মনে পড়ে যাচ্ছে। যেসব স্মৃতি একদিন আগেও খুব সুখের ছিল, আজ সেগুলো শুধুই বেদনার। মা-র প্রতিটা কথা, হাসি, মনে পড়ছে। জীবনের প্রতি পদে পদে কীভাবে চলতে হবে, মা সবসময় ওদের গুরুত্ব দিয়ে শেখাত। মাকে ছাড়া এই পৃথিবীতে আর কাউকে ওরা বেশি ভালবাসেনি। মা-ই ছিল ওদের সব। আর এখন…! এই বিশাল পৃথিবীতে ওরা নিঃস্ব, অসহায়, এতিম!

সন্ন্যাসিনী বোন তার ভাইকে বলল, ‘তোমার মনে আছে, মা সবসময় নিজের পুরানো চিঠিগুলো পড়ত। ওগুলো ড্রয়ারে আছে। চলো ওগুলো পড়ি। চিঠিগুলোতে নিশ্চয়ই আমাদের দাদা-দাদীর কথা লেখা আছে। ওঁদের তো আমরা দেখিনি। তবে চিঠি পড়ে হয়তো ওঁদের কথা জানতে পারব। মনে পড়ে, ওঁদের কথা মা প্রায়ই বলতেন?’

ড্রয়ারে ওরা দশটা ছোট প্যাকেট পেল। প্যাকেটগুলো বহু ব্যবহারে মলিন হয়ে গেছে। তবে সাবধানে বাঁধা, একটার পর একটা সুন্দর করে সাজানো। চিঠিগুলো ওরা বিছানার উপর রাখল। একটার ওপর ‘বাবা’ লেখা দেখে তুলে নিয়ে খুলে পড়তে লাগল।

হাতের লেখার ধরনটা পুরানো ধাঁচের। প্রথম চিঠির শুরুতে লেখা ‘প্রিয় আমার’। দ্বিতীয়টায় লেখা ‘আমার ছোট্ট সুন্দর মামণি’। পরেরটায় লেখা ‘আমার প্রিয় মামণি’।

হঠাৎ ইউলালি জোরে জোরে পড়তে লাগল। চিঠির মধ্যে তার মা-র ছোটবেলার কথা লেখা। তার ভাই বিছানার পাশে বসে মায়ের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে চিঠির কথাগুলো শুনতে লাগল।

ইউলালি পড়া থামিয়ে হঠাৎ বলল, ‘পড়া শেষ হলে চিঠিগুলো মা-র কবরে দিয়ে দেব।’

সে আরেকটা প্যাকেট তুলল। এতে কোনও নাম নেই। মৃদু কণ্ঠে পড়তে লাগল, আমার ভালবাসা, তোমাকে আমি পাগলের মত ভালবাসি। গতকাল থেকে আমাদের স্মৃতির কথা মনে করে আমি যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছি। তোমার ঠোট দুটো আমি নিজের ঠোটে, তোমার চোখ দুটো নিজের চোখে আর তোমার বুক আমি নিজের বুকে অনুভব করছি। আমি তোমাকে ভালবাসি, তোমাকে ভালবাসি। আমাকে তুমি পাগল করেছ। আমার দু’হাত খোলা, তোমাকে জড়িয়ে ধরার জন্য আকুল হয়ে আছি। আমার দেহ-মন তোমাকে পাবার জন্য আকুল হয়ে আছে।

মহিলার ছেলে হঠাৎ উঠে দাঁড়াল। ইউলালি পড়া থামিয়ে দিয়েছে। বোনের হাত থেকে চিঠিটা নিয়ে নীচের স্বাক্ষরটা দেখল। ওখানে লেখা-তোমার ভালবাসা, হেনরী। কিন্তু ওদের বাবার নাম তো রেনে, তা হলে কি এটা ওদের বাবার লেখা নয়?

ছেলেটা চিঠির প্যাকেট থেকে আরেকটা চিঠি বের করে পড়তে লাগল। ওতে লেখা- ‘আমি তোমার আদর ছাড়া বাঁচতে পারব না।’

সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কঠিন দৃষ্টিতে মা-র দিকে তাকাল ও। ইউলালি মূর্তির মত সোজা হয়ে দাড়িয়ে ভাইয়ের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। ওর চোখের কোণায় জল টলমল করছে।

মহিলার ছেলে আস্তে করে জানালার পাশে এসে দাঁড়াল। বাইরের অন্ধকার রাতের দিকে তাকিয়ে রইল চুপচাপ।

যখন সে ঘুরে বোনের দিকে তাকাল, দেখল, তার চোখে পানি নেই। এখনও মাথা নিচু করে বিছানার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।

সে দ্রুত চিঠিগুলো নিয়ে এলোমেলোভাবে ড্রয়ারে ছুঁড়ে ফেলল, তারপর বিছানার পর্দাটা টেনে দিল। জানালা দিয়ে যখন দিনের প্রথম আলো ঘরে প্রবেশ করল তখন সে আর্মচেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। যে মায়ের জন্য কয়েক ঘন্টা আগেও সে অঝোরে কেঁদেছে, যার স্মৃতি তাকে প্রচণ্ড আঘাত দিয়েছে, তার দিকে একবারও না তাকিয়ে আস্তে করে বলল, ‘আমাদের এখন চলে যাওয়া উচিত, বোন।’

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here


Most Popular

Recent Comments