Wednesday, August 27, 2025
Homeথ্রিলার গল্পভৌতিক গল্পইমামের ছেলে - ভৌতিক গল্প

ইমামের ছেলে – ভৌতিক গল্প

কিশোরগঞ্জে এক মাওলানা ছিলেন। তিনি তার এলাকার মসজিদের ইমামতি করতেন। মানে ইমাম ছিলেন। তাঁর এলাকায় মানে পুরো গ্রামেই খুব খ্যাতি, সম্মান ছিলো তাঁর। তিনি জ্বিন তাড়াতেন। এলাকার কাউকে জ্বিনে আছড় করলে তাঁর কাছে আসতো। তাঁর দুই ছেলে এক মেয়ে ছিলো। একদিন তাঁর ছোট ছেলে খুব অসুস্থ হলো। খুব জ্বর।

তো ঐদিন আছরের নামাজের পর দুইজন লোক তাঁর কাছে আসলো। তাদের মধ্যে একজন বললো যে, “হুজুর,আমি অনেক দূরের গ্রাম থেকে আসছি। আমার ছেলেকে জ্বিনে আছড় করেছে। অনেক কবিরাজ দেখিয়েছি কিন্তু কেউ আমার ছেলে কে ভালো করতে পারেনি। আপনার নামে অনেক শুনেছি। যদি আমার উপকার করতে?” তো তিনি খুব সিরিয়াস ছিলেন এগুলা বিষয়ে। তিনি লোকটার কাছে বাড়ির ঠিকানা নিয়ে বললেন আপনারা যান আমি মাগরিব এর নামাজ পড়েই যাবো।

তো নামাজের পর হুজুর বের হলেন ঐ লোকের বাড়ির উদ্দেশ্যে। তিনি ঘাট পার হলেন পরিচিত এক মাঝির নৌকায়। তারপর তিনি হাটা ধরলেন। একটু পর ই এশার আযান দিলো। তিনি নামাজ পড়ার জন্য মসজিদের সন্ধান করতে লাগলেন। এমন সময়ে এক লোকের দেখা পেলেন। তাকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “এখানে কি আশেপাশে মসজিদ আছে?

তখনই ওদেরই মধ্যে একজন মুসল্লি ইমামসাহেব কে হাত দিয়ে ইশারা করে বললেন, “যান সামনে, আপনি নামাজ পড়ান”। তিনি কোনো কথা না বলে স্বাভাবিকভাবেই নামাজ পড়ালেন। নামাজ শেষে তিনি যেতে ধরলেন তারা তাকে বললেন, “ভাই, এখানে এক ছেলে খুব অসুস্থ। হয়তো বাঁচবেনা। ছেলেটার জন্য দোয়া হবে বসেন”। লোকটি বললো,” আমার একটু জরুরি কাজ আছে অনেক রাত হয়ে গেছে তাই দুঃখিত!

আমি বসতে পারবোনা”। এইকথা বলে মসজিদ থেকে বের হলেন। কিন্তু তিনি কোনদিক থেকে আসছিলেন সেই রাস্তা ভুলে গেছেন। হঠাৎ করে তিনি অনুভব করলেন তার হাত কেউ ধরে আছেন।

তাকায় দেখেন তার ছোট ছেলে তার হাত ধরে বলতেছে , “আব্বা আমাকে বাঁচাও। বাঁচাও বাবা আমাকে। বাবা আমাকে বাঁচাবানা?” তার ছোট ছেলের বয়স ৬বছর । সে এখানে ঘাট পার হয়ে কখনোই আসতে পারে না। নিশ্চই এটা খারাপ কিছু। তিনি আর কিছু না ভেবে বাচ্চাটার হাত এক ঝটকা দিয়ে সরায় দিয়ে দৌড় লাগালেন। দৌড়াতে লাগলেন।

পেছন থেকে হাজারোটা বাচ্চার কান্নার আওয়াজ আসতেছিলো। আর শুনতে পাচ্ছিলেন বাচ্চাগুলা বলতেছে, “বাবা আমাকে বাঁচাও। বাচাবানা আমাকে? বাবা? আমাকে বাঁচাও”। তিনি ঘাটের ওপার থেকে তার পরিচিত মাঝির ডাক শুনতে পেলেন , “ইমামসাহেব আছেন?” তিনি মাঝির ডাকে সাড়া দিলেন। তারপর তিনি নৌকায় উঠলেন। মাঝি বললো, “হুজুর, বিপদ হয়ে গেছে”। ইমামসাহেব বললেন, “কি হয়েছে?” মাঝি বললো, “এখন না বলি।

বাড়ি গেলেই বুঝতে পারবেন।” যখন তিনি বাড়ি ফিরলেন দেখেন তার বাড়ির সামনে অনেক লোক। কেউ কেউ কাঁদতেছে। কেউ কেউ তার কাছে এসে তার হাত বুলায় দিচ্ছে। তার মাথায় বুলায় দিচ্ছে। তিনি তখন একটু একটু আইডিয়া পাচ্ছিলেন। যখন তিনি বাড়িতে প্রবেশ করলেন দেখেন তার ছোট ছেলে খাঁটিয়ায় শুয়ে আছে। মারা গেছে। জানতে পারলেন ছেলের নাকি এতই জ্বর আসছিলো তার গায়ে এত তাপ হইছিলো সহ্য করতে না পেরে পুকুরে গিয়ে ঝাপ দেয়। সাঁতার জানতো না। তাই পানিতে ডুবে মারা গেছে।

ইমামসাহেব খুব কষ্ট পেলেন। ভাবলেন আজ যদি তিনি তার ছেলের কাছে থাকতেন হয়তো তার ছেলে কে বাঁচাতে পারতেন। আর তিনি তার সাথে ঘটা ঘটনার সাথে তার ছেলের মৃত্যুর কোনো লিঙ্ক পেলেন না। তিনি আজও বেঁচে আছেন। আজও তিনি কষ্ট পান তার ছোট ছেলের কথা ভেবে।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here


Most Popular

Recent Comments