Tuesday, August 26, 2025
Homeকিশোর গল্পচড়াই আর বাঘের কথা - উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

চড়াই আর বাঘের কথা – উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

গৃহস্থের ঘলের কোণে একটি হাঁড়ি ঝোলানো ছিল, তার ভিতরে চড়াই-চড়নী থাকত।

একদিন চড়াই বললে, ‘চড়নী, আমি পিঠে খাব।’

চড়নী বললে, ‘পিঠের জিনিসপত্র এনে দাও, পিঠে গড়ে দেব এখন।’

চড়াই বললে, ‘কি জিনিস লাগবে?’

চড়নী বললে, ‘ময়দা লাগবে, গুড় লাগবে, কলা লাগবে, দুধ লাগবে, কাঠ লাগবে।’

চড়াই বললে, ‘আচ্ছা আমি সব এনে দিচ্ছি।’ বলে সে বনের ভিতর গিয়ে গাছের সরু-সরু শুকনো ডাল মট-মট ভাঙতে লাগল।

সেই বনের ভিতর এক মস্ত বাঘ ছিল, সে চড়াইকে বলত, ‘বন্ধু’।

ডাল ভাঙার শব্দ শুনে সে বললে, ‘মট-মট করে ডাল ভাঙছ, ওকি আমার বন্ধু?’

চড়াই বললে, ‘হ্যাঁ, বন্ধু।’

বাঘ বললে, ‘ডাল দিয়ে কি হবে?’

চড়াই বললে, ‘কাঠ চাই, চড়নী পিঠে গড়বেন।’

শুনে বাঘ বললে, ‘বন্ধু, আমি কখখনো পিঠে খাইনি, আমাকে দিতে হবে।’

চড়াই বললে, ‘তবে জোগাড় সব এনে দাও।’

বাঘ বললে, ‘কি-কি জোগাড় চাই?’

চড়াই বললে, ‘ময়দা চাই, গুড় চাই, কলা চাই, দুধ চাই, ঘি চাই, হাঁড়ি চাই, কাঠ চাই।’

বাঘ বললে, ‘আচ্ছা তুমি ঘরে যাও, আমি সব এনে দিচ্ছি।’ চড়াই তখন ঘরে চলে এল, আর বাঘ দুলতে দুলতে বাজারে চলল। বাজারে গিয়ে বাঘ খালি একটিবার বললে, ‘হাল্লুম!’ অমনি দোকানীরা ‘বাবা গো! বাঘ এসেছে গো!’ পালা, পালা!’ বলে দোকান-টোকান সব ফেলে ছুটে পালাল। তখন বাঘ সব দোকান খুঁজে ময়দা, গুড়, কলা, দুধ, ঘি, হাঁড়ি আর কাঠ নিয়ে চড়াইয়ের বাড়িতে দিয়ে এল।

তারপর চড়নী চমৎকার পিঠে গড়ল, আর দুজনে মিলে পেট ভরে খেল। শেষে বাঘের জন্য একখানা পাতায় করে কতকগুলি পিঠে মাটিতে রেখে দিয়ে, দুজনে চুপ করে হাঁড়ির ভিতর বসে রইল।

বাঘ এসে পিঠে দেখতে পেয়েই খেতে বসে গেল।

একখানা পিঠে মুখে সে বললে, ‘বাঃ! কি চমৎকার!’

আর একখানা মুখে দিয়ে বললে, ‘না, এটা তত ভালো নয়, খালি ময়দা দিয়ে গড়েছে!’

আর একখানা মুখে দিয়ে বললে, ‘ছি! এটাতে খালি ভুষি আর ছাই। চড়াইবন্ধু, এ কি খাওয়ালে!’

আর একখানা মুখে দিয়ে বললে, ‘উঃ হুঁ! এটাতে কিসে গন্ধু! গোবর দিয়েছে নাকি? চড়াই বেটা তো বড় পাজী।’

এমন সময় হয়েছে কি? চড়াই হাঁড়ির ভিতর থেকে নাক-মুখ সিঁটকিয়ে বলছে, ‘চড়নী, আমি হাঁচব।’

শুনে চড়নী ভারি ব্যস্ত হয়ে বললে, ‘চুপ, চুপ! এখন হাঁচতে হবে না, তাহলে বড় মুশকিল হবে।’

তাতে চড়াই চুপ করল। কিন্তু খানিক বাদেই আবার ভয়ানক নাক-মুখ সিঁটকিয়ে হাঁচতে গেল। চড়নী তাতে থামাতে কত চেষ্টা করল, কিছুতেই থামিয়ে রাখতে পারল না।

বাঘ একটা বিশ্রী পিঠে খেয়ে বললে, ‘থু! থু! এটা খালি গোবর দিয়েই গড়েছে, আর কিছু দেয়নি! যদি চড়াইয়ের নাগাল পাই, তাকে কামড়িয়ে চিবিয়ে খাব।’

তারপর আর একাট পিঠে মুখে দিয়ে সে সবে ওয়াক্‌-ওয়াক্‌ করতে লেগেছে, অমনি হ্যাঁ-চ্ছোঃ করে চড়াই ভয়ানক শব্দে হেঁচে ফেললে। সে শব্দে বাঘ সেই যেই চমকে লাফিয়ে উঠতে যাবে, অমনি হাঁড়িসুদ্ধ দড়ি ছিঁড়ে, চড়াই আর চড়নী তার ঘাড়ে পড়ল।

বাঘ কিছুতেই বুঝতে পারলে না, কি বাজ বড়ল, না আকাশ ভেঙে পড়ল! সে খুব ভয় পেয়ে লেজ গুটিয়ে সেখান থেকে ছুট দিল, আর তার ঘরে না গিয়ে থামল না।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here


Most Popular

Recent Comments