Saturday, April 20, 2024
Homeবাণী-কথাঅনুবাদ গল্পউইচেস লোভস - ও. হেনরী

উইচেস লোভস – ও. হেনরী

witches loaves

মার্থা মিচাম (Martha Meacham)-এর রুটির দোকানের ওপরের তলাতেই থাকে। চল্লিশ বছর বয়সেও বর জোটেনি তার। আচ্ছা, মার্থা তো আর পাঁচটা মেয়ের চেয়ে কুশ্রী নয়, তবু কে জানে বিয়েটা এখনও হয়ে ওঠে নি তার।

তার খদ্দেরদের মধ্যে একজন দু’তিনদিন অন্তর অন্তরই বাসি রুটি কিনতে আসে। লোকটি মধ্যবয়সী, চশমা আর কটা রঙের দাড়িতে বেশ সম্ভ্রান্ত দেখায় তাকে। লোকটি জার্মান মিশিয়ে ইংরাজী বলে। তার তর্জনীতে একদিন রঙ লেগে থাকতে দেখেছিল মার্থা। তাই তার অনুমান লোকটি নিশ্চয়ই গরীব শিল্পীদের একজন। বেচারা পাঁচ সেন্ট খরচ করে একটা তাজা রুটি কেনার চাইতে পাঁচ সেন্টে দুটো বাসি রুটি কিনে মুন্নিবৃত্তি করে। লোকটির প্রতি সমবেদনায় মনটা ভরে যায় মার্থার।

যখন মার্থা তার তৈরী বিভিন্ন সুখাদ্য, সহযোগে চা খেতে বসে, প্রায়ই ভাবে ঐ বিনীত সুভদ্র লোকটিকে যদি এসব খাওয়াতে পারতো, তার মন ভরে যেতো।

লোকটি সত্যিই শিল্পী কিনা তা জেনে নেবার জন্যে মাথা অনেক দিন আগে কেনা একটা ছবি কাউন্টারের পেছনে ঝুলিয়ে রাখলো। ছবিতে ভেনিসের একটা প্রাসাদ, আর তার ঠিক পেছনেই গন্ডোলার সারি।

এরপর লোকটি যেদিন এলো ছবিটি তার দৃষ্টি ঠিকই আকর্ষণ করলো। বললো, ছবিটি খুব সুন্দর, কিন্তু ভুল পটভূমিকায় আঁকা হয়েছে প্রাসাদটা। যাই হোক, পরীক্ষা সফল হওয়াতে দারুন খুশি মার্থা। তার অনুমান তাহলে নির্ভুল।।

দিবাস্বপ্ন দেখে মার্থা। তার ব্যাঙ্কে জমা টাকা আর দোকানের আয় দিয়ে সে ঐ শিল্পীর আর্থিক ভাবনা ঘুচিয়ে দিয়েছে, আর সেই উজ্জ্বল চোখের শিল্পী একমনে নিজের শিল্পসাধনা করে চলেছে।

মাঝে মাঝে রুটি কিনতে এসে ভদ্রলোক মার্থার সঙ্গে গল্পগুজব করে যান, কিন্তু বাসি রুটি ছাড়া কখনও কিছু কেনেন না, অথচ মার্থার দোকানে থরে থবে সাজানো আছে নানা ধরনের কেক, পেস্ট্রি, রোল। ব্যথায় মন ভরে যায় মার্থার।।

কদিন ধরেই মার্থার মনে হচ্ছে ভদ্রলোক যেন ক্রমশই ক্লান্ত ও শীর্ণ হয়ে যাচ্ছেন। তার ইচ্ছে করে ঐ বাসিরুটির সঙ্গে মুখরোচক কিছু দিয়ে দিতে। কিন্তু শিল্পীর অহংকারে আঘাত লাগবে মনে করে কিছু বলার সাহস হয়না।

মিস মার্থা কাউন্টারে থাকার সময় তার সবচেয়ে সুন্দর নীল বুটিওলা পোষাকটা নিয়মিত পরতে শুরু করলো, রান্নাঘরে মাঝে মাঝে রূপটান তৈরী করতেও দেখা গেল তাকে।

একদিন খদ্দেরটি এসে যথারীতি তার পয়সা বাড়িয়ে দিয়ে বাসি রুটি চাইছিল, ঠিক সেই সময়ে হঠাৎ প্রবল বেগে ঘন্টা বাজিয়ে একটা দমকল চলে গেল, ভদ্রলোক দরজার কাছে গিয়ে ব্যাপারটা দেখতে যেতেই মার্থার মাথায় বিদ্যুত চমকের মত একটা কৌশল খেলে গেল। সে দ্রুত রুটিগুলো ছুরি দিয়ে ফাঁক করে ভেতরে বেশ খানিকটা করে ভাল মাখন ঢুকিয়ে দিল। ভদ্রলোক কিছু সন্দেহ না করেই রুটি নিয়ে চলে গেলেন।।

ভদ্রলোক চলে যাবার সঙ্গে সঙ্গেই মার্থার হৃদয়ে নতুন এক আলোয় ছেয়ে গেল। সে কি খুব বেশি দুঃসাহস দেখিয়ে ফেলেছে? ভদ্রলোক মনে আঘাত পাবেন না তো?

সারাদিন ধরে ভাবলো মার্থা, ভদ্রলোক খেতে বসে মাখন মাখানো রুটি দেখে কি করছেন করছেন, কি ভাবছেন। মার্থাকেই ভাবছেন তো?

দরজার বেলটা বেজে উঠলো। কে যেন পাগলের মত ঘন্টি বাজিয়েই চলেছে। পায়ে দরজা খুলে দিল মার্থা। একজন অপরিচিত তরুণ পাইপ মুখে দাঁড়িয়ে আছে, আর তার পাশে মার্থার সেই শিল্পী। মার্থা অবাক হয়ে দেখলো এতদিনের চেনা সেই শান্ত হাসিখুশি ভদ্রলোকটির মুখ টকটকে লাল হয়ে উঠেছে টুপিটা মাথার পেছনদিকে ঠেলা। চুলগুলো এলোমেলো। সে তার দুটি বদ্ধমুষ্ঠি মাথার দিকে আস্ফালন করতে লাগলো।

সেই সঙ্গে জার্মান ভাষায় চীৎকার করে এমন কতগুলো কথা বললো, যার কিছুই মাথার বোধগম্য হোলো না।

তরুণটি তাকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো, কিন্তু ভদ্রলোক শুনলেন না, গর্জন করে বললেন-আমি যাবো না, যতক্ষণ না ওকে কথা শোনাতে পারছি। তুমি, বুড়ি বেড়াল, তুমি আমাকে নষ্ট করে দিয়েছে, ধ্বংস করে দিয়েছে।

তরুণ ভদ্রলোক ক্রুদ্ধ ব্যক্তিটিকে জোর করে কলার ধরে বাইরে নিয়ে গেল এখন চুল। অনেক বলেছে।

মাথা কোনরকমে তাকটা ধরে নিজের কম্পিত শরীরটাকে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল। জার্মান ভদ্রলোকটিকে রাস্তায় বার করে দিয়ে তরুণটি ফিরে এলো।

-ব্যাপারটা আপনাকে খুলে বলা উচিত, ঐ লোকটি, মানে ব্লুমবার্গার, বাড়ীঘরের নক্সা আঁকার কাজ করে। আজকেই শেষবারের মত কালি দিয়ে একে এত দিনের কাজটা শেষ করেছিল। আপনি হয়তো জানেন প্রথমে পেন্সিল দিয়ে এঁকে নেওয়া হয়, আর সেই আঁকা ঘসে ঘসে মুছে তুলতে বাসি রুটিই সবচেয়ে বেশি কার্যকরী, ভারতীয় রাবারেও অত ভাল মোছে না। তা আজ শেষবারের মত মুছতে গিয়ে ওর কাজটার যা দশা হয়েছে, তা আর বলার নয়। ঐ আঁকাটা দিয়ে এখন বোধহয় স্যাণ্ডউইচ ছাড়া আর কিছু করা যাবে না। বুঝতেই পারছেন, একটানা এতদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে এত বড় একটা কাজ যদি মানে রুটিটা ও বরাবর এখান থেকেই কিনতো তো, তাই আপনার ওপর।

পিছনের ঘরে ফিরে গিয়ে মার্থা নীল পোষকটা খুলে সেই আগেকার মত পুরোনো বাদামী সার্জের পোষাকটা পরে নিল।

আর, জানলা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিল রূপটান তৈরীর সব সাজ সরঞ্জাম।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments