Friday, April 26, 2024
Homeরম্য গল্পকৃপণের ধন - মজার গল্প

কৃপণের ধন – মজার গল্প

'কৃপণের ধন' মজার গল্প

কৃপণের স্বভাব, টাকা থাকলেও ভাল কিছু খেতে পারে না। কাউকে ভাল কিছু খাওয়াতেও পারে না। পাওনাদারের পাওনাও মেটাতে পারে না। তাদের ভান্ডারে টাকা জমা হলেই তারা খুশী, কিন্তু খরচের বেলায় কলজেটা ছিঁড়ে যায়। এ জন্যে কৃপণরা সমাজের অনেক সমস্যারও সৃষ্টি করে। তাদের দিয়ে ভাল কিছু আশাও করা যায় না। আজ এক কৃপণের গল্প বলবো।

অনেক কাল আগের কথা। তখন দিল্লীর সম্রাট ছিলেন কলিঙ্গ। দিল্লীতে বাস করতো কানাইলাল নামের এক কৃপণ বণিক। এই বণিকের ছিল অঢেল ধন দৌলত। তার সিন্দুকে থরে- থরে সাজানো থাকতো মনি-মুক্তা, হিরা-জহরত, সোনা-রূপা। এত ধন দৌলত থাকলে কি হবে, তার বুকটা খা খা করতো। কেবল সে ভাবতো আরো ধন দৌলত কি করে উপার্জন করা যায়, সে কথা। আশে পাশে লোকজন না খেয়ে থাকলেও তার মন গলতোনা।

একদিনের ঘটনা বলি। সওদাপত্র বিক্রি করে কানাইলাল ঘরে ফিরলো। খাওয়া দাওয়ার কথা ভুলে গিয়ে প্রথমেই সে বসে গেলো ধনদৌলতের হিসেব করতে। মোহরের থলেগুলো গুণতে গিয়ে দেখলো একটা খোয়া গেছে। আবার গুনলো, আশে পাশে দেখলো, সত্যি একটা থলে হারানো গেছে। কানাইলাল হায় হায় করে চিৎকার করে উঠলো।

বুক চাপড়াতে চাপড়াতে বললোঃ হায়রে, আমার মোহরের থলে কোথায় গেল। কানাইলাল পাগলের মত ছুটে গেলো বাইরে। যে পথ দিয়ে এসছিল, সে পথে খুঁজলো থলেটা। দুঃখের বিষয় থলেটা খুঁজে পেল না। উপায় না দেখে কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে ছুটে গেলো সম্রাট কলিঙ্গের কাছে। খুলে বললো সব কথা। সম্রাট কলিঙ্গ সব কিছু জেনে নিলেন কানাইলালের কাছে। তারপর তাকে প্রবোধ দিয়ে বললেনঃ দুঃখ করোনা, আমি তোমার হারানো থলে ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করছি। সম্রাট কলিঙ্গের আদেশে রাজ্যে ঢেঁড়া পিটিয়ে দেয়া হলো। বলা হলো, হারানো মোহরের থলেটা কেউ ফেরত দিলে তাকে পুরস্কার দেয়া হবে। পথ চলতে চলতে এক বুড়ি পেয়েছিল সেই থলেটা। বুড়ি ছিল খুবই গরীব। পরনে তার তালি দেওয়া কাপড়। ক্ষুধায় কাতর হয়ে পথ চলতে তার কষ্ট হচ্ছিল। তা হলে কি হবে, পরের টাকার প্রতি একটুও তার লোভ হলোনা । চলতে চলতে বুড়ি ভাবছিল, হায়রে, যে লোকটা থলেটা হারিয়েছে, তার না জানি কি অবস্থা। এমন সময় সে শুনতে পেলো সম্রাটের লোকেরা টেঁড়া পিটিয়ে হারানো থলেটার খোঁজ করছে। বুড়ি চলে গেলো সম্রাট কলিঙ্গের দরবারে। মোহরের থলেটা ফিরিয়ে দিলো সম্রাটকে। সম্রাট বুড়ির সাধুতা দেখে খুবই খুশী হলেন। বুড়ির জন্য তার খুব মায়া হলো। তিনি তার বিষয়-আশয়, পরিবারপরিজনের খোঁজ নিলেন।. জানতে পারলেন, বুড়ির আছে বিয়েরযোগ্য একটি মেয়ে। সম্রাট মনে মনে ভাবলেন, বুড়ির জন্য ভাল একটা কিছু করতে হবে। তিনি বুড়িকে বললেনঃ তুমিতো ইচ্ছে করলে সব মোহরই নিতে পারতে। মেয়েটাকে ভাল জায়গায় বিয়ে দিতে পারতে। তুমি তা করোনি। আমি তোমার সাধুতার জন্য তোমাকে পুরস্কার দেবো।

এমন সময় সম্রাটের দরবারে ছুটে এলো সেই কৃপণ বণিক–নাম যার কানাইলাল। সম্রাট তাকে অভয় দিয়ে বললেনঃ তোমার মোহর পাওয়া গেছে। এখন এই বুড়িকে পঞ্চাশটি মোহর দিয়ে দাও। সম্রাট মোহরের থলেটা তুলে দিলেন কানাইলালের হাতে। কানাইলাল তার হারানো মোহরের থলে পেয়ে ভারী খুশী হলো। কিন্তু বেশিক্ষণ সে খুশী থাকতে পারলোনা। বুকটা ব্যথায় দুপ্‌ করে উঠলো। তাকে যে এখ্খুনি পঞ্চাশটি মোহর হারাতে হবে। তুলে দিতে হবে ওই ছেঁড়া কাপড় পরা গরীব বুড়িটার রা হাতে। কৃপন কানাইলাল কিছুতেই পঞ্চাশটি মোহর ছিঁড়ে যাচ্ছে। কানাইলাল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিছু একটা ফন্দি আঁটলো। তারপর থলে থেকে মোহরগুলো ফেললো মাটিতে। ভাল করে গুণে দেখলো। চিৎকার. করে কেঁদে বল্লো, মহারাজ আমার থলেতে যে যাটটি মোহর কম রয়েছে। নিশ্চয়ই ওই বুড়িটা আমার ষাটটি মোহর চুরি করেছে।

বুড়ি মনে মনে খুব আঘাত পেলো। সে ভাবলো, মানুষের উপকার করতে এসে বুড়ো বয়সে এই ছিল আমার ভাগ্যে! শেষ পর্যন্ত চুরির অপবাদ! আমি ইচ্ছে করলেতো সবটাই নিতে পারতাম। সম্রাট সবই বুঝতে পারলেন। তার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেলো, কানাইলাল কৃপন, লোভী–মিথ্যাবাদী। সম্রাটের মনে পড়ে গেলো, কানাইলাল তাকে জানিয়েছিল, থলেতে মাত্র পাঁচশ’ মোহর রয়েছে। সম্রাট রাগ দমন করে কানাইলালকে জিজ্ঞেন করলেনঃ আগে তুমি ষাট মোহরের কথা বলোনি কেন?

কানাইলাল বললোঃ মনে ছিল না।

সম্রাট বললোঃ তা হলে এই থলে তোমার নয়।

পাঁচশ’ মোহর হারিয়েছে এমন দাবীদারও রয়েছে আমার দরবারে। সে আমার একজন ক্রীতদাস। তা হলে মোহরগুলো আমার ক্রীতদাসের। বলতে পারো আমারই। এখন আমার মোহরগুলো আমি যাকে খুশী তাকে দিতে পারবো। সম্রাট মোহরের থলেটা তুলে দিলেন বুড়ির হাতে। বললেনঃ তুমি এই মোহরগুলো নিয়ে মেয়েটাকে ভাল বিয়ে দাও। ভালভাবে খাও দাও। বুড়িতো পুরোটা থলে পেয়ে মহা খুশী। এখন এটাতো আর পরের ধন নয়, কিংবা নয় চুরি করা মোহর। স্বয়ং সম্রাট এটা দিয়েছেন।

সমাট বুড়ির হাতে মোহরের থলেটা তুলে দিয়ে কানাইলালের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ তুমি এখন যাও, তোমার পাঁচশ’ ষাট মোহরের থলেটা যখন পাওয়া যাবে, ফেরত দেয়া হবে। কৃপণ বণিক কিছু বলতে চাইলো।

সম্রাট তাকে ধমক দিয়ে বললেনঃ এই মোহরের থলে তোমার নয়। ফের যদি চাও, তোমাকে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। সম্রাটের সামনে আর কিছুই বলার সাহস পেলোনা কানাইলাল। প্রহরীরা তাকে দরবার থেকে বের করে দিলো। কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে পথ চললো সে। পাগলের মত বিড় বিড় করে বলতে থাকলো, হায়, এ আমি কি করলাম। থলেটা পেয়েও হারালাম স্বভাবের দোষে। কৃপণের দশা এমনই হয়ে থাকে।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments