ভয়ংকর বাগান – ভৌতিক গল্প

ভয়ংকর বাগান - ভৌতিক গল্প

হোসেনপুর গ্রাম। লোকজন এই গ্রামকে পরীর গ্রাম বলে ডাকে। অনেক আগে নাকি এই গ্রামে অনেক পরী থাকতো। গ্রাম থেকে একটু দূরে একটা বাগান আছে। ওই বাগানেই নাকি পরীদের আস্তানা ছিল। যদিও কেউ দেখে নি ; সবাই লোকমুখে শুনেছে। তবে এখন আর কেউ পরী টরী বিশ্বাস করে না।আর এই বাগানে এখন আর অদ্ভুত বা অলৌকিক কোন ঘটনা ঘটে না।

বাগানে বিভিন্ন রকম গাছের সমাহার।অনেক পুরানো কয়েকটা বট গাছ আর আম গাছও আছে। বাগানটা কারও একার সম্পত্তি না। তাই গ্রামের সকল লোকজন ই সেখান থেকে ফলমূল পেড়ে খেতো। তবে কেউই কখনও বাগানের গাছপালা কাটতো না। একদিন গ্রামের একটু প্রভাবশালী লোক নুর হোসেন ঘোষণা দিলেন বাগানের সবচেয়ে বড় আর পুরানো বট গাছটা তিনি কাটবেন। তার কিছু কাঠ দরকার। গ্রামের লোকজন মনে মনে নাখোশ হলেও মুখে কিছু কিছু বললো না। পরদিন সকালে শরীফ আর আমির নুর হোসেনের কথামত গাছ কাটতে গেল। কিছুক্ষণপর ওরা দেখলো পুরো করাতটা রক্তে লাল হয়ে গেছে। আর গাছের কাটা জায়গা থেকে অনবরত রক্ত পড়ছে। ভয়ে করাতটা রেখেই সেখান থেকে ওরা দৌড়ে চলে আসলো।

গ্রামে ছড়িয়ে গেল কথাটা। ভয়ে আর কেউ বাগানে গেল না। সেদিন রাতে ঘরে ঘুমাচ্ছিল আমির। হঠাৎ কিসের শব্দে যেন ঘুম ভেঙ্গে গেল ওর। চোখে মেলে তাকিঁয়ে ও তো অবাক। ও যে বাগানে সেই বট গাছটার নিচে শুয়ে আছে। ভালো করে চোখ কচলে দেখলো ; না সত্যিই ও বাগানে। কিন্তু বুঝতে পারলো না ও ঘর থেকে এখানে আসলো কি করে ? গাছের ফাঁক দিয়ে চাদেঁর আলো বাগানে আসছিলো। একটা বাদুরের ডাক শুনা গেল। হঠাৎ বাগানে ঝড় শুরু হল। গাছগুলো বাতাসে এলোমেলো ভাবে দুলতে লাগলো। তখনই আবছা আলোতে আমির দেখতে পেল বট গাছ থেকে সাদা কাপড়ে মুড়ানো কে যেন নামলো। ভয়ে কাপঁতে লাগলো ও।

তবে ওটার মুখটা দেখে আর মুখ দিয়ে কথা বের হলো না ওর। পরদিন সকালে আমিরের ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া গেল বাগানে। পুরো শরীরে করাতের আঘাতের চিহ্ন। লাশটা দেখে শিউরে উঠলো গ্রামবাসী। তারপর থেকে বাগানের আশপাশ দিয়ে মানুষের হাটাঁচলা বন্ধ হয়ে গেল। দু’দিন পরের কথা। নিজের গাড়িতে করে শহরে যাচ্ছিল নুর হোসেন। রাত তখন প্রায় আটটা বাজে। নির্জন একটা রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলছিল। অকস্মাৎ একটা বটগাছ কোথা থেকে যেন রাস্তার মাঝে গাড়িটার সামনে এসে পড়লো। ব্রেক কষার সময় পেল না ড্রাইভার।তবে অ্যাক্সিডেন্টে সবাই আহত হলেও মারা গেলেন নুর হোসেন।

তবে সবচেয়ে অদ্ভুত কথা হচ্ছে ওই রাস্তার মাঝে তো দূরের কথা আশেপাশের কয়েক কিলোমিটারের ভিতরেও বট গাছ নেই। গ্রামে ছড়িয়ে পড়লো অদ্ভুত সেই বটগাছটার কথা। গ্রামবাসীরা বুঝতে পারলো বটগাছটা কাটার জন্যই এরকম হচ্ছে। ভয়ে ভয়ে দিন কাটাতে লাগালো শরীফ। হুজুরের কাছ থেকে তাবিজ আনলো। কয়েকজন কবিরাজেরও পরামর্শ নিল ও। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী দিন কাটাতে লাগলো শরীফ। এক সপ্তাহ পরের কথা। ভুলটা সেদিনই করলো শরীফ। মাঝরাত। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘর থেকে বের হল শরীফ। হঠাৎ নুপূরের বাজনা শুনে সেদিকে ঘুরে তাকালো ও। দেখে তো অবাক।

সুন্দর অপরূপ একটা মেয়ে দাড়িঁয়ে আছে। এই মেয়েকে তো কখনও এই গ্রামে দেখে নি ও। কৌতুহল হল ওর। মেয়েটা ইশারায় ডাকলো ওকে। যৌবনের তাড়নায় মেয়েটার পিছনে ছুটলো শরীফ। ভূলে গেল হুজুরের দেওয়া বিধি নিষেধ। মন্ত্র মুগ্ধের মতো মেয়েটার পিছন পিছন হাটঁতে লাগলো। রাতজাগা পাখিরাও নিশ্চুপ। আকাশের চাদঁটাও স্থির। নির্জন রাস্তা ধরে হাটঁতে হাটঁতে মেয়েটা বাগানের কাছে এসে পড়লো। আবার শরীফকে ইশারায় ডাকলো। পুলকিত শরীফ কোনকিছু না ভেবে বাগানে ঢুকে পড়লো। বটগাছটার গোড়ায় এসে উধাও হয়ে গেল মেয়েটা। শরীফ দেখলো বট গাছের দুইটা ডালে ঝুলছে সাদা কাপড় পড়া আমির আর নুর হোসেনের লাশ।

ঘোর কেটে গেল শরীফের। বুঝতে পারলো কত বড় ভুল করেছে ও। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গছে।তখনই বাগানে ঝড় শুরু হল। গাছগুলো বাতাসে এলোমেলো ভাবে দুলতে লাগলো। আবছা আলোতে শরীফ দেখতে পেল বট গাছ থেকে সাদা কাপড়ে মুড়ানো কে যেন নামলো। পরদিন সকালে শরীফের লাশটাকে বটগাছে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেল। তারপর থেকে ওই বাগানের কোন গাছ তো দূরের কথা গাছের পাতাও ছিড়ে নি কেউ। তারপর থেকে আর কোন অদ্ভুত ভয়ংকর ঘটনা ঘটে নি ওই বাগানে।

You May Also Like

About the Author: Anuprerona

Read your favourite literature free forever on our blogging platform.