Friday, April 19, 2024
Homeকিশোর গল্পসত্যি - সুকুমার রায়

সত্যি – সুকুমার রায়

টিয়াপাখির বুদ্ধি - সুকুমার রায়

ইনি কে জানো না বুঝি? ইনি নিধিরাম পাটকেল।
কোন নিধিরাম? যার মিঠাইয়ের দোকান আছে?

আরে দুৎ! তা কেন? নিধিরাম ময়রা নয়— প্রে—ফে—সার্‌ নিধিরাম!
ইনি কি করেন?

কি করেন আবার কি? আবিষ্কার করেন!

ও বুঝছি! ঐ যে উত্তর মেরুতে যায়, যেখানে ভয়ানক ঠাণ্ডা— মানুষজন সব মরে যায়—
দূর মুখ্যু! আবিষ্কার বললেই বুঝি উত্তর মেরু বুঝতে হবে, বা দেশ বিদেশ ঘুরতে হবে? তাছাড়া বুঝি আবিষ্কার হয় না?
ও! তাহলে?

মানে, বিজ্ঞান শিখে নানা রকম রাসায়নিক প্রক্রিয়া করে নতুন নতুন কথা শিখছেন, নতুন নতুন জিনিস বানাচ্ছেন। ইনি আজ পর্যন্ত কত কী আবিষ্কার করেছেন তোমরা তার খবর রাখ কি? ওঁর তৈরি সেই গন্ধবিকট তেলের নাম শোননি? সেই তেলের আশ্চর্য গুণ! আমি নিজে মাখিনি বা খাইনি কিন্তু আমাদের বাড়িওয়ালার কে যেন বলেছেন যে সে ভয়ঙ্কর তেল। সে তেল খেলে পরে পিলের ওষুধ, মাখলে পরে ঘায়ের মলম, আর গোঁফে লাগালে দেড় দিনে আধহাত লম্বা গোঁফ বেরোয়।

সে কী মশাই! তাও কি হয়?

আলবাৎ হয়! বললে বিশ্বাস করবে না, কিন্তু নন্দলাল ডাক্তার বলেছে ভুলু মিত্তিরের খোকাকে ওই তেল মাখিয়ে তার এয়া মোটা গোঁফ হয়ে গেছিল।
কি আবোল তাবোল বকছেন মশাই!

বিশ্বেস করতে না চাও বিশ্বেস করো না, কিন্তু চোখে যা দেখেছ তা বিশ্বেস করবে ত? কী কাণ্ড হচ্ছে দেখছ তো? ঐ দেখ নিধিরাম পাটকেলের নতুন কামান তৈরি হচ্ছে। নতুন কামান, নতুন গোলা, নতুন সব। একি সহজ কথা ভেবেছ? ওই রকম আর গোটা পঞ্চাশ কামান আর হাজার দশেক গোলা তৈরি হলেই উনি লড়াই করতে বেরুবেন। সব নতুন রকম হচ্ছে বুঝি?

নতুন না তো কি? নতুন, অথচ সস্তা! ওই দেখ কামান আর গোলা। কামানে কি আছে? নল আছে আর বাতাস ভরা হাপর আছে। নলের মধ্যে গোলা ভরে খুব খানিক দম নিয়ে ভ—শ্‌ করে যেমনি হাপর চেপে ধরবে অমনি হশ্‌ করে গোলা গিয়ে ছিট্‌কে পড়বে আর ফট্‌ করে ফেটে যাবে।
তারপরে?

তার পরেই তো হচ্ছে আসল মজা। গোলার মধ্যে কি আছে জান? বিছুটির আরক আছে, লঙ্কার ধোঁয়া আছে, ছারপোকার আতর আছে গাঁদালের রস আছে, পচা মুলোর একস্ট্রাকট আছে, আরও যে কত কি আছে, তার নামও আমি জানি না। যত রকম উৎকট বিশ্রী গন্ধ আছে, যত রকম ঝাঁঝালো তেজাল বিটকেল জিনিস আছে, আশ্চর্য বৈজ্ঞানিক কৌশলে সব তিনি মিশিয়েছেন ঐ গোলার মধ্যে। সেদিন ছোট একটা গোলা ওঁর হাত থেকে প’ড়ে ফেটে গিয়েছিল শুনেছ তো?

তাই নাকি? তারপর হল কি?

যেমনি গোলা ফাটল অমনি তিনি চট্‌ করে একটা ধামা চাপা দিয়েছিলেন, নইলে কি হত কে জানে। তবু দেখছ ওষুধের গন্ধে আর ঝাঁঝে প্রফেসারের চেহারা কেমন হয়ে গেছে। তার আগে ওঁর চেহারা ছিল ঠিক কার্তিকের মত; মাথাভরা কোঁকড়া চুল আর এক হাত লম্বা দাড়ি! সত্যি!
সত্যি নাকি?

সত্যি না তো কি?

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments