Friday, May 3, 2024
Homeবাণী-কথাঅনুবাদ গল্পরিপভ্যান উইংকল - ফখরুজ্জামান চৌধুরী

রিপভ্যান উইংকল – ফখরুজ্জামান চৌধুরী

রিপভ্যান উইংকল - ফখরুজ্জামান চৌধুরী

হাডসন নদীর ওপর দিয়ে জাহাজে করে যারা গেছে তাদের সবারই দৃষ্টি কেড়েছে ক্যাটসাকিল পাহাড়গুলো। নদীর পশ্চিম দিকে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে এ পাহাড়শ্রেণি।

এসব রূপকথার পাহাড়ের নিচে আছে এক গ্রাম। অনেক বছর আগে সে গ্রামে বাস করত একজন লোক; নাম তার রিপভ্যান। উইংকল পরিবারের সদস্য বলে রিপভ্যান উইংকল নামেই সবার কাছে ছিল তার পরিচয়।

গ্রামের সবাই তাকে খুব ভালোবাসতেন। ছেলেরা তাকে পথে দেখলেই আনন্দে চিৎকার করে উঠত। খেলাধুলার ব্যাপারে ছেলেদের সে খুব সাহায্য করত, তাদের খেলার জিনিস বানিয়ে দিত, ঘুড়ি ওড়ানো শেখাত, মার্বেল খেলা শেখাত।

রিপের এই আড্ডাবাজ মনোভাব গ্রামের অলস বন্ধুরা মেনে নিলেও তার স্ত্রী কিন্তু মেনে নিল না। নিজের কোনো দোষ খুঁজে পায় না রিপ। দোষের মধ্যে শুধু সে কখনও বিশেষ কাজ করত না। পরিশ্রম বা অধ্যবসায়ের ভয়ে কিন্তু সে অমন করত না। কারণ প্রায়ই সে এক টুকরো ভিজে পাথরের ওপর বসে থাকত। হাতে থাকত ইয়া বড় এক লাঠি। শান্তশিষ্টভাবে বসে বসে সে মাছ ধরত। কিন্ত ভুলেও কোনো মাছ তার বড়শিতে ধরা পড়ত না। সে একটা ফাঁদ কাঁধে করে উঁচু পাহাড় আর বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়াত কাঠবেড়ালি আর বুনো কবুতর ধরার জন্য। পাড়াপড়শির সবচেয়ে কঠিন কাজটাও সে করে দিত। ঢেঁকিতে ধান বানতে অথবা পাথরের প্রাচীর গড়তেও সে তাদের সাহায্য করত। এককথায় রিপভ্যান উইংকল অন্যের উপকার করে দেয়ার জন্য সবসময় রাজি থাকত।

রিপভ্যান উইংকলের ছেলেগুলো খুব বজ্জাত হয়ে উঠল। বাপের ছন্নছাড়া ভাব তাদেরকে আরও অলস হবার জন্য সাহসী করে তুলল। রিপভ্যানের তবুও জ্ঞান হলো না। নিজেও সরল জীবনযাপন কামনা করে। পরিশ্রম করে টাকা রোজগারের চেয়ে উপোস থাকাই যেন শ্রেয়।

রিপভ্যান উইংকল হেসে-খেলে জীবন কাটালেও তার স্ত্রী সবসময় আলসেমি আর অসাবধানতার জন্যে

ঘ্যানঘ্যান করত। পরিবারটাকে সে ধ্বংস করছে বলেও তাকে সে গাল দিত। রিপ শুধু কাঁধ দুলিয়ে, মাথা উঁচিয়ে, চোখ বন্ধ করে কোনো কথা না বলে তার জবাব দেয়। আর মাঝে মাঝে সে বাড়ির বাইরে চলে গিয়ে ঝগড়া লাগা বন্ধ করে।

রিপের একমাত্র পোষা প্রাণী ছিল তার কুকুর উলফ্। কুকুরটাও তার মনিবের মতোই রিপের স্ত্রীর কাছে অবজ্ঞা আর লাঞ্ছনা লাভ করত। স্ত্রী মনে করত, কুকুরটাই তার মনিবকে বেয়াড়া করে তুলেছে। কারণ কুকুরটাই ছিল রিপের একমাত্র ভ্রমণসঙ্গী। আর কুকুরটা যেন ভাবত, ‘বেচারা রিপ কর্ত্রী তোর সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করেছে? আমি বেঁচে থাকতে তোর বন্ধুর অভাব হবে না।’ উল্‌ফ্ হয়তো সমস্ত হৃদয় দিয়ে মনিবের দুঃখ বোঝার চেষ্টা করত।

শরৎকালের একদিন। রিপ ক্যাটসকিল পাহাড়ের একটা অংশে বসেছিল। বসে বসে সে কাঠবেড়ালি শিকার করছিল। বন্দুকের শব্দ পাহাড়ের গায়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল। ক্লান্ত হয়ে একসময় সে ঘাসের ওপর শুয়ে পড়ল। রিপ দেখল, নিচে তরতর করে বয়ে চলেছে হাডসন নদী। নদীর বুকে পড়েছে বেগুনি রঙের ছায়া।

রিপ উঠে নিচে নামতে যাবে, এমন সময় হঠাৎ সে শুনতে পেল কে যেন তার নাম ধরে ডাকছে। চারিদিকে তাকিয়ে সে কাউকে দেখতে পেল না। ভাবল, তার শোনার ভুল হতে পারে। কিন্তু আবারও শুনতে পেল সেই ডাক, ‘রিপভ্যান উইংকল’।

কুকুরটা ভয়ে ঘেউ ঘেউ করে ওঠে মনিবের পাশে এসে দাঁড়াল। রিপের একটু ভয় হলো। সে তাকিয়ে দেখল, অদ্ভুত একটা লোক পাথরের উপর দিয়ে হেঁটে আসছে। লোকটাকে রিপ চিনতে পারল না। হতে পারে কোনো সাহায্যপ্রার্থী, তাই রিপ এগিয়ে গেল লোকটার কাছে। লোকটা সত্যি অদ্ভুত আকৃতির। মাথায় একঝাঁক ভারী চুল, মুখে চকচকে দাড়ি। আর পোশক পুরোনো ওলন্দাজ ধাঁচের। কাপড়ের জামায় তার বুক ঢাকা। পরনে ব্রিচেস। ঢিলেঢালা ব্রিজেসের গায়ে বোতাম লাগানো, আর হাঁটুর দিকটা বেশ উঁচু। কাঁধে আর মদ-ভরা একটা ভান্ডা সে রিপকে কাছে এসে বোঝা নিয়ে সাহায্য করতে ইশারা করল।

বোঝা ভাগাভাগি করে তারা পাহাড় বেয়ে নেমে এল। রিপ শুনতে পেল পাহাড়ের মাঝে যেন বাজ ডাকছে। থমকে দাঁড়াল সে। কিন্তু সাহসে ভর করে আবার লোকটাকে অনুসরণ করল। ওরা কিছুক্ষণ পর উন্মুক্ত একটা খাদে এসে পৌঁছাল। উপরে গাছের ডালের ফাঁকে আকাশ আর মেঘ দেখা যায়।

এতক্ষণ পর্যন্ত রিপ আর তার সঙ্গী কোনো কথা না বলে পথ হাঁটছিল। লোকটা সম্বন্ধে রিপ নানা কথা ভাবতে লাগল।

উন্মুক্ত খাদে রিপ আরেকটা অদ্ভুত জিনিস দেখল। জায়গাটার মাঝখানে বসে কতগুলো অদ্ভুত লোক কী যেন খেলছে। তাদের পোশাকও অদ্ভুত গোছের। তাদের কেউ পরেছে ছোট্ট পাজামা, আবার কেউ পরেছে জামা। তাদের বেল্টের সাথে ছুরি ঝোলানো।

এদের প্রত্যেকে রিপের সাথির মতো ব্রিচেস পরেছে। তাদের মুখও অদ্ভুত রকমের। কারো মাথা বড়, কারো মুখ বড়, আর শুয়োরের মতো ছোট ছোট চোখ। আবার কারো মুখ যেন নাকের সমান। মাথায় সাদা পাউরুটির মতো হ্যাট, হ্যাটে মোরগের ছোট্ট লাল পালক বসানো। এদের রয়েছে ভিন্ন আকার আর রঙের দাড়ি।

এদের মধ্যে যে সর্দার তাকে দেখলেই চেনা যায়। সে একজন বুড়ো মানুষ। রিপ দেখে অবাক হলো,

লোকগুলো আমোদপ্রিয় হলেও কেমন যেন গম্ভীর হয়ে বসে আছে। ওদের দেখে তারা পুতুলের মতো তাকিয়ে রইল।

রিপ কেমন যেন ভড়কে গেল। তার সঙ্গী এবার ভান্ডের মদ একটা পাত্রে ঢেলে ওকে বসতে বলল। ভয়ে ভয়ে আদেশ পালন করল রিপ। লোকগুলো নীরবে মদ পান করে খেলতে শুরু করল।

ধীরে ধীরে রিপের ভীতিভাব কেটে গেল। কেউ আর তার দিকে তাকিয়ে নেই দেখে সে সহস করে মদ্য পানের কথা ভাবল। অনেকক্ষণ ধরে বেচারার তৃষ্ণা পেয়েছিল। ঢক্ ঢক্ করে সে মদ পান করতে লাগল, আর ধীরে ধীরে তার মাথা ভারী হয়ে এল, চোখ বন্ধ হয়ে এল। অবশেষে সে ঘুমিয়ে পড়ল।

ঘুম থেকে জেগে রিপ দেখল সে সবুজ উপত্যকায় শুয়ে আছে। এখানেই লোকটার সাথে তার প্রথম দেখা হয়েছিল। চোখ রগড়ে সে দেখল, সকাল হয়েছে। বনে বনে পাখি ডাকছে। ভোরের বাতাস বইছে। কিন্তু সেই লোকগুলো আর নেই।

স্ত্রীর কথা মনে পড়ে ভীত হলো রিপ। বাইরে রাত কাটাবার কৈফিয়ত স্ত্রীকে সে কেমন করে দেবে। ‘ওহ বড্ড অন্যায় হয়ে গেছে এভাবে ঘুমিয়ে পড়াটা’- মনে মনে উচ্চারণ করল রিপ।

তার বন্দুকের খোঁজ করল সে। কিন্তু তার তেল-চকচকে পরিষ্কার বন্দুকটার পরিবর্তে সে দেখতে পেল ময়লা একটা বন্দুক পড়ে আছে। বন্দুকটার নলে মরচে ধরেছে, আর তার বাঁট পোকায় খেয়ে ফেলেছে। এবার তার সন্দেহ হলো, পাহাড়ের ভূতগুলো তার সাথে এই চালাকি করেছে। তাকে মদ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে তার বন্দুকটা তারা চুরি করেছে। উলফকেও ধারে কাছে কোথাও দেখা গেল না।

তাড়াতাড়ি এ ভূতুড়ে পাহাড় থেকে বেরিয়ে আসতে চাইল রিপ। কিন্তু যাবার কোনো পথ পেল না। পাথরগুলো দেয়ালের মতোই পথের উপর দাঁড়িয়ে আছে। বেচারা রিপ শিস দিয়ে কুকুরটাকে ডাকল। তার ডাকের জবাব দিল মরা গাছে বসে থাকা কিছু কাক ‘কা-কা’ করে।

অবশেষে মরচে-ধরা বন্দুকটা সম্বল করেই পথ খুঁজতে লাগল রিপ। বহু কষ্টে সে বেরিয়ে এল। তাকে যে করেই হোক বাড়িতে ফিরতেই হবে।

গ্রামের কাছে আসতে একদল লোকের সঙ্গে তার দেখা। আশ্চর্য, তাদের কাউকে সে চেনে না। অথচ গ্রামের সবাই তার কতই না পরিচিত। এদের কাপড়চোপড়ও একটু নতুন ধরনের। এ ধরনের পোশাকের সাথে তার পরিচয় নেই। লোকগুলো তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, আর তাদের চিবুকে হাত বুলাচ্ছে। ওদের দেখাদেখি রিপও তাই করল, আর তখনই সে বুঝতে পারল তার চিবুকে ঝুলছে কয়েক ফুট লম্বা দাড়ি।

এবার গ্রামে ঢুকল সে। একদল ছেলেমেয়ে তার পিছু পিছু দৌড়াতে শুরু করল। কুকুরগুলো তার কাছ দিয়ে যাবার সময় ঘেউ ঘেউ করে তেড়ে এল, যেন আজব এক চিড়িয়া দেখতে পেয়েছে তারা।

রিপ অনুভব করল রাতারাতি গ্রামের পরিবেশ বদলে গেছে। নতুন ধাঁচের সব বাড়িঘর, লোকজনের সংখ্যাও আগের চেয়ে অনেক বেশি! কিন্তু তা কী করে সম্ভব হলো। দূরের পাহাড়, হাডসন নদী সবই তো ঠিক আছে, পথ ভুলে অন্য গ্রামে ঢুকে পড়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। গত রাতের মদের পাত্রটা তার এই অবস্থা করে ছেড়েছে।

অতিকষ্টে পথ চিনে সে নিজের ঘরের দিকে যেতে লাগল। কিন্তু সে দেখল- তার বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে, ছাদ ভেঙে পড়েছে, জানালা দরজা সব ভেঙে একাকার। অর্ধ-অনাহারী একটা কুকুর বাড়ির আশেপাশে ঘুরছে। তাকে দেখতে অনেকটা উলফের-এর মতোই মনে হয়। রিপ তার নাম ধরে ডাকল। কিমুত কুকুরটা দাঁত খিচিয়ে চলে গেল।

ঘরের ভেতরে ঢুকল রিপ। স্ত্রী ডেম ভ্যান উইংকল আর তার ছেলেদের খোঁজ করল। কিন্ত কাউকে দেখতে না পেয়ে সত্যিই তার ভয় হলো।

এবার সে দৌড়ে তার পুরোনো আড্ডাখানা সরাইখানায় গেল। কিন্তু তারও কোনো পাত্তা নেই। তার জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে বিরাট একখানা কাঠের ঘর। ঘরটার দরজায় লেখা, ‘দি ইউনিয়ন হোটেল’। মালিক : জোনাথন ডুলিটল।

লম্বা দাড়ি, মরচে-ধরা বন্দুক আর একপাল ছেলেপিলেসহ রিপের দিকে হোটেলের সবারই দৃষ্টি পড়ল। তারা রিপের চারদিকে ঘিরে ধরল। তারা সবাই রাজনীতি নিয়ে নানা প্রশ্ন করল রিপকে। কিন্তু সেসব কথার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারল না।

রিপের কানের কাছে একজন মুখ এনে জিজ্ঞেস করল, রিপ ফেডারেল, না গণতন্ত্রী। এবারেও রিপের বোকা হবার পালা। একজন বিশিষ্ট এবং সবজান্তা লোক ভিড় ঠেলে রিপের কাছে এগিয়ে এল। মাথায় তার টুপি আর হাতের ছড়ি। সে এসে হুঙ্কার ছাড়ল কেন রিপ ভোটের সময় বন্দুক কাঁধে দলবল নিয়ে এসেছে এবং কেন সে দাঙ্গা বাধাতে চায়?

এবার লোকজন চিৎকার করে উঠল, ‘এই লোকটা গুপ্তচর। উদ্বাস্ত্ত। তাকে মার লাগাও।’

বিশিষ্ট লোকটি অতিকষ্টে শান্তি রক্ষা করল। অচেনা অপরাধীর পরিচয় জানতে চাইল। বেচারা রিপ সবিনয়ে বলল যে, তাদের কোনো ক্ষতি করবে না সে। সে এসেছিল তার প্রতিবেশীদের খোঁজখবর নিতে।

‘ঠিক আছে তাদের নাম বলো’।

রিপ একটু থেমে বলল, ‘নিকোলাস ডেভার কোথায়?’

কতক্ষণ সবাই চুপ থাকার পর এক অতি বৃদ্ধ ব্যক্তি সরু গলায় জবাব দিল, ‘সে তো আঠারো বছর আগে মারা গেছে।’

‘ব্রম ডুচার কোথায়?’

‘সে তো যুদ্ধ শুরু হতেই সৈন্যদলে যোগ দিয়ে চলে গেছে এবং মারাও গেছে বলে আমরা জেনেছি।’

‘স্কুল মাস্টার ভ্যান বুশেল কোথায়?’

‘সেও যুদ্ধে গিয়েছিল। সেখানে সে বড় পদও পায়। এখন সে একজন কংগ্রেসি।’

বন্ধুদের এরকম পরিবর্তন ও পৃথিবীতে তাকে একা দেখে রিপের হৃদয় দমে গেল। প্রতিটা উত্তর আর দৃশ্যই তাকে হতভম্ব করতে লাগল। এমতাবস্থায় হ্যাট-পরা লোকটি আবার জিজ্ঞেস করল, ‘কিন্তু তুমি কে?’

‘খোদা জানেন’, রিপ কেঁদে উঠল, ‘আমি আর আমি নেই। আমি অন্য কেউ। তা না হলে এক রাতের ব্যবধানে কী এত পরিবর্তন আসে? আমি পাহাড়ে ঘুমিয়ে পড়ি। পাহাড়িরা আমার বন্দুক বদলে দিয়েছে।’

উপস্থিত লোকদের কেউ কেউ মাথা ঝাঁকাতে লাগল। একজন ছোঁ মেরে বন্দুকটা কেড়ে নিল। ছুড়ি আর টুপিওয়ালা লোকটা গোলমাল আন্দাজ করে দ্রুত সরে পড়ল।

ঠিক তখন ভিড় ঠেলে এগিয়ে এল ফিটফাট একজন মহিলা ছাইরঙের বৃদ্ধলোকটাকে সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। তার কোলে একটি শিশু। শিশুটা ভয় পেয়ে কাঁদতে শুরু করলে মহিলাটি বলল, ‘এই রিপ থাম্, ও তোকে কিছু করবে না।’ শিশুটির নাম ও তার মায়ের কণ্ঠস্বর রিপের মনে পুরাতন স্মৃতি জাগিয়ে দিল।’ তোমার নাম কী গো?’ জিজ্ঞেস করল সে।

‘জুনিথ গার্ডনার’।

‘বাপের নাম?’

‘আহা, তাঁর নাম ছিল রিপভ্যান উইংকল। কিন্তু আজ থেকে বিশ বছর আগে সেই যে তিনি বন্দুক নিয়ে বেরিয়ে গেলেন, আর ফেরেননি। তার কুকুরটা একা একা ফিরে এসেছে। তিনি কি বন্দুক নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন না ইন্ডিয়ানরা তাঁকে মেরে ফেলেছেন কেউ তা বলতে পারে না। তখন আমি এতটুকুন ছিলাম।’

রিপের তখন আর একটা কথা জিজ্ঞেস করা বাকি।

‘তোমার মা কোথায়?’

‘আহা, তিনিও কদিন আগে মারা গেছেন।’

এবার রিপ আর নিজেকে সামলাতে পারল না। তার মেয়ে আর নাতিকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘আমি তোমার বাবা। একসময়ের যুবক রিপভ্যান উইংকল আজ হাড্ডিসার বুড়ো।’

সবাই তো একদম অবাক। ভিড় ঠেলে এক বুড়ি এসে ভুরুর ওপর হাত রেখে বলল, ‘সত্যি! রিপভ্যান উইংকলই বটে। বুড়ো প্রতিবেশী, এসো এসো,বিশ বছর কোথায় ছিলে?’

রিপ তার কাহিনী বলল। দীর্ঘ বিশ বছর তার কাছে এক রাত্রি মোটে! এমন তাজ্জব কথা কে শুনেছে কবে।

পিটার হলো এখানকার পুরোনো অধিবাসী এবং এখানকার লোকদের সম্বন্ধে তার পুরো জ্ঞান। সে রিপের কথাগুলো বিশ্বাস করল; সে আরও বলল যে, তার বংশের ঐতিহাসিকগণ বলেছেন, ক্যাট্‌সকিল পাহাড়ে অদ্ভুত ধরনের লোক সত্যি আছে। তারা নাকি উন্মুক্ত খাদে খেলা করে বেড়ায় এবং পাহাড়ের মধ্যে বাজের মতো শব্দও শোনা যায়।

রিপভ্যান উইংকল আর কিছুই নয়-সেই ঐতিহাসিকদের কথা প্রমাণ করে এলেন মাত্র।

[ওয়াশিংটন আরভিং রচিত ‘রিপভ্যান উইংকল’ অবলম্বনে]

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments