Saturday, July 27, 2024
Homeথ্রিলার গল্পভৌতিক গল্পভৌতিক গল্প: মৃতদেহ

ভৌতিক গল্প: মৃতদেহ

ভৌতিক গল্প: মৃতদেহ

প্রচণ্ড বৃষ্টি, মাঝেমধ্যেই বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। নির্জন অন্ধকার রাস্তায় বসে আছি, তবে অন্ধকার চোখে সয়ে গেছে। বেশ দেখতে পাচ্ছি, মাত্র কয়েক হাত দূরেই পড়ে আছে লোকটা। আর তার থেকে কিছুটা দূরে আমার মোটরসাইকেল।

অফিসের বুড়ো দারোয়ান বারবার মানা করেছিলেন এই ঝড়ের রাতে বের হতে। শুনিনি ওনার কথা। এখন ভুগতে হচ্ছে। একটা রাত অফিসে থাকলে কী হতো? ওনার ঘরেই শুতে বলেছিলেন। থেকে যেতাম।

লোকটা একটুও নড়ছে না। একদম হুট করেই আমার মোটরসাইকেলের সামনে এসে পড়েছিল ব্যাটা। ভাগ্যিস ঠিকমতো ব্রেক কষেছিলাম…তারপরও ধাক্কা লেগেছে। কিন্তু ব্রেক না কষলে তো ভয়াবহ অবস্থা হয়ে যেত।

এখন কী করব? মোটরসাইকেলটা কোনোমতে দাঁড় করিয়ে এই ব্যাটাকে রাস্তায় রেখে পালাব নাকি ওকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাব? একা মানুষ আমি, ওকে তুলব কী করে? আবার এই নির্জন রাস্তায় আমাকে কেই–বা সাহায্য করবে?

আচ্ছা, এই ঝড়–বৃষ্টির রাতে এই ব্যাটা নিঝুম রাস্তা দিয়ে পায়ে হেঁটে কোথায় যাচ্ছিল? যেখানে এই রাস্তা নিয়ে নানা গুজব শোনা যায়। ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুতই।

মাত্র এক ঘণ্টা আগের দৃশ্যপট যেন চোখের সামনে ভেসে উঠল।

বেশ কিছু কাজ জমেছিল হাতে। কয়েক দিনের জন্য ছুটিতে যাচ্ছি, তাই ভাবলাম সব কাজ শেষ করে নিই। এসে আবার এই সব পুরোনো কাজের ঝামেলা কে নেবে!

সেই চক্করে বেজে গেল রাত নটা। অফিস প্রায় ফাঁকা, সবাই সন্ধ্যাবেলায়ই বাড়িতে চলে গেছে। রাত আটটা থেকে শুরু হয়েছে মুষলধারে বৃষ্টি। ভেবেছিলাম এক-আধ ঘণ্টায় থেমে যাবে।

কিন্তু থামার নামই নিচ্ছে না!

কাজ শেষ করে সবকিছু গুছিয়ে অফিসের গেটে এলাম। বুড়ো দারোয়ান কাকার সঙ্গে আমার বেশ ভালো সম্পর্ক। তুমি বলেই ডাকেন উনি আমাকে।

বাবা দীপক এখন বের হচ্ছ? আমাকে দেখেই বলে উঠলেন উনি।

হ্যাঁ কাকা, একটু কাজ ছিল। কদিনের জন্য ছুটিতে যাচ্ছি তো।

তোমার বাড়ি না হাইওয়ের বাঁ দিকের রাস্তাটা দিয়ে যেতে হয়? ওনার চোখে শঙ্কা।

হ্যাঁ কাকা।

ওই রাস্তা কিন্তু ভালো না।

ওসব গল্প কত শুনেছি কাকা। শোনাই যায়।

তোমার বয়স আর কতই? বাস্তবতা কতটা বোঝো? শোনো, এই বৃষ্টির রাতে একা যেয়ো না। আমার ঘরে কষ্ট করে থেকে যাও। কাল যেয়ো।

না কাকা, বাড়িতে ফিরতে হবে। মা চিন্তা করবেন।

হুম… আচ্ছা তবে এক কাজ করো, আমার রেইনকোটটা নিয়ে যাও। কাল দিয়ে যেয়ো।

না কাকা দরকার নেই। আর তা ছাড়া বললাম না, আমি ছুটিতে যাচ্ছি! কাল আসব না। রেইনকোটের দরকার নেই।

এই বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল চালাতে পারবে?

আরে কী যে বলেন কাকা, কত ঝড়–তুফানের মধ্যে চালালাম। এ তো মামুলি বৃষ্টি।

ঠিক আছে বাবা, তুমি যা ভালো বোঝো। আর শোনো, ওই রাস্তায় কেউ লিফট চাইলে খবরদার গাড়ি দাঁড় করাবে না!

কাকার কথা না শোনার ফল খুব তাড়াতাড়িই বুঝতে পারলাম। এত জোরে বৃষ্টি হচ্ছিল যে দু-তিন মিনিটের মধ্যেই ভিজে জবজবে হয়ে গেলাম। কিছুটা যেতেই গিয়ে পড়লাম নির্জন হাইওয়েতে। রাস্তায় তেমন গাড়ি নেই। মাঝেমধ্যে দু-একটা ট্রাক যাচ্ছে।

হেডলাইটের আলোয় বেশি দূর দেখা যাচ্ছে না।

কিছুক্ষণের মধ্যেই হাইওয়ে পেরিয়ে সেই বাঁ দিকের রাস্তাটায় উঠলাম। এ রাস্তা আরও নিঝুম।

পুরো শহরে এই রাস্তা নিয়ে নানা গুজব চালু আছে। সন্ধ্যার পর থেকেই এদিক দিয়ে মানুষ হেঁটে তো দূরের কথা, গাড়িতে করেও যেতে চায় না। এই রাস্তা নাকি অশুভ, এখানে অপার্থিব প্রেতরা থাকে।

অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে এখানে।

এই তো কদিন আগেই দুই বন্ধু মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিল। এমন সময় একটা ট্রাক তাদের চাপা দেয়। তখন কেবল সন্ধ্যা হয়েছিল। পরে ট্রাকচালকের কাছ থেকে শোনা যায় যে মোটরসাইকেলটা নাকি হুট করেই তার ট্রাকের সামনে এসে পড়েছিল, ওর কিছু করার ছিল না।

এই রাস্তায় নাকি প্রায়ই এক রহস্যময় মহিলাকে লিফট চাইতে দেখা যায়। যারা ওকে লিফট দেয়, তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না।

এসব কী ভাবছি আমি? সামলে নিলাম নিজেকে। কোনো জায়গা সম্পর্কে এই সব ভুতুড়ে ঘটনা শুনতে কিন্তু বেশ মজা লাগে। কিন্তু এমন এক ভয়ংকর রাতে একা একা ওই জায়গায় যাওয়াটা মোটেই সুখকর নয়।

বৃষ্টি যেন ক্রমাগত বাড়ছেই! ভাগ্যিস হেলমেট এনেছিলাম।

রাস্তার দুই পাশের গাছগুলোকেও কেমন যেন রহস্যময় লাগছে।

ও কী! পুরো শরীর যেন শিউরে উঠল। স্পষ্ট দেখতে পেলাম বিশালাকৃতির একটা কিছু এই গাছ থেকে ওই গাছে লাফ মেরে আমার সঙ্গে সঙ্গে চলেছে।

মুখ ঘুরিয়ে নিলাম, পুরো শরীর কাঁপছে!

আবার তাকালাম! এবারও দেখা যাচ্ছে ওটাকে… ওটা কী…

ধুমম… কী থেকে যে কী হয়ে গেল!

তারপর আমি আর আমার মোটরসাইকেল ভূপাতিত। আর ওই লোকটা…

উঠে দাঁড়িয়েছি। লোকটা মনে হয় বেঁচে নেই, উপুড় হয়ে পড়ে আছে ব্যাটা। পালাতে হবে আমাকে। এখানে থেকে কে ফাঁসবে? পুলিশ এলে কী বলব আমি? আমার মোটরসাইকেলের ধাক্কায় মরেছে ও?

ঠিক তখনই শক্তিশালী হেডলাইটের আলো ভেসে এল, সম্ভবত একটা গাড়ি আসছে। তাড়াতাড়ি রাস্তার ডান দিকের একটা বড় গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম আমি।

গাড়িই একটা। বেশ বড় মাইক্রোবাস। পড়ে থাকা লোকটার একদম সামনে থামল ওটা। গাড়ি থেকে নামল চারজন লোক।

মুহূর্তেই দেহটাকে ঘিরে ফেলল ওরা। দেহটাকে চিত করল ওরা। তারপর একজন ঝুঁকে পড়ে কী যেন দেখল।

মুহূর্তেই চিৎকার করে উঠল সে, ‘আরে! এ তো দেখি মরে গেছে। চল চল, আমাদের এখানে থাকা ঠিক না।’

ওরা সরে গেল। হেডলাইটের আলোয় আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম মৃতদেহটার মুখ।

গাড়িটা চলে গেল ওখান থেকে।

আমি চুপচাপ এগিয়ে গেলাম, তারপর দেখতে লাগলাম মৃতদেহটাকে। এতক্ষণ ভাবছিলাম যে পালিয়ে যাব। কিন্তু মুখ দেখার পর সেই চিন্তা বাদ দিয়েছি।

কী করে পালাই বলুন তো?

আপনি কি পালাতে পারতেন? নিজের মৃতদেহকে এভাবে রাস্তায় রেখে?

লেখা: সঞ্জয় অসিন কাম্বলে
অনুবাদ: লুৎফুল কায়সার

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments