Saturday, April 20, 2024
Homeরম্য গল্পসরস গল্পমোল্লা নাসিরুদ্দিন হোজ্জা'র মজার গল্প সমগ্র

মোল্লা নাসিরুদ্দিন হোজ্জা’র মজার গল্প সমগ্র

মোল্লা নাসিরুদ্দিন হোজ্জা'র মজার গল্প সমগ্র

মোল্লা নাসিরউদ্দিন হোজ্জা ছিলেন একজন বেঁটে প্রকৃতির মানুষ। মাথায় পাগড়ি আর গায়ে জোব্বা পরে একটা গাধার ওপর চড়ে তিনি ঘুরে বেড়াতেন। হোজ্জাকে নিয়ে এক হাজারেরও বেশি গল্প চালু আছে। কোনো গল্পে তাকে খুব বুদ্ধিমান একজন মানুষ মনে হয়। আবার কোনো গল্পে তার আচরণ একেবারেই বোকার মতো হয়। তবে তিনি সারাবিশ্বে পরিচিতি পেয়েছেন তার রসবোধের কারণে। তার কথাবার্তা আমাদের যেমন হাসায়, তেমনি ভাবায়ও বটে।

আজকের গল্পের আসরে এই লেখায় মোল্লা নাসিরউদ্দিন হোজ্জার  মজার গল্প সমগ্র নিয়ে সাজানো হয়েছে।

সাবান দিয়ে গোসল করছি

নদীর ময়লা পানিতে নাসিরুদ্দিন হোজ্জাকে নামতে দেখে পথিক প্রশ্ন করলেন, ‘হোজ্জা, নদীতে কী করছেন?’
হোজ্জা: গোসল করছি।
পথিক : কিন্তু নদীর পানি তো খুবই ময়লা।
হোজ্জা: সমস্যা নাই। সাবান দিয়ে গোসল করছি।


মোল্লা এক বাড়িতে চাকরের কাজ করছে

মোল্লা এক বাড়িতে চাকরের কাজ করছে। মনিব তাকে ডেকে বললেন, ‘তুমি অযথা সময় নষ্ট কর কেন, তিনটা ডিম কিনতে কেউ তিনবার বাজারে যায়? এবার থেকে সব কাজ একবারে সেরে আসবে।’

একদিন মনিব অসুখে পড়লে মোল্লাকে বললেন ডাক্তার ডাকো। মোল্লা গেল কিন্তু ফিরলো অনেক দেরিতে আর সাথে অনেক লোক।

মনিব বললেন, ‘ডাক্তার কই?’
তিনি আছেন সাথে আরো অনেকে আছেন, বললো মোল্লা।
– আরো কেন?
– আজ্ঞে ডাক্তার বললো পুলটিশ দিতে লোক চাই। জল গরম করতে কয়লা লাগবে, কয়লাওয়ালা চাই। আপনি যদি মারা যান তো দোয়া পড়ার লোক চাই। আপনাকে কবর দেওয়ার লোক চাই, আপনি মরলে পরে লাশ বইবার লোক চাই। তাই সবই একবারে এনেছি।


অপয়া যে কে, সেটা বুঝতে পারলেন না

শিকারে বেরিয়ে পথে প্রথমেই নাসিরুদ্দীনের সামনে পড়ে রাজামশাই খেপে উঠলেন। লোকটা অপয়া। আজ আমার শিকার পণ্ড। ওকে চাবকে হটিয়ে দাও।

রাজার হুকুম তামিল হল। কিন্তু শিকার হলো জবরদস্ত। রাজা শিকার থেকে ফিরে নাসিরুদ্দীনকে ডেকে পাঠালেন। ‘ভুল হয়ে গেছে মোল্লা। আমি ভেবেছিলাম তুমি অপয়া। এখন দেখছি তা নও।’

নাসিরুদ্দীন তিন হাত লাফিয়ে উঠল। আপনি ভেবেছিলেন আমি অপয়া? আমায় দেখে আপনি ২৬টি হরিণ মারলেন আর আপনাকে দেখে আমি ২৬ ঘা চাবুক খেলাম। আপয়া যে কে, সেটা বুঝতে পারলেন না?


মধুর মত মিষ্টি

হোজ্জা বাজারে বসেছেন আঙুর বিক্রেতা হিসেবে। এক বন্ধুকে দেখে তার কাছেই আঙুর বিক্রি করতে চাইলেন। কিন্তু বন্ধু বললেন, তার কাছে টাকা নেই। হোজ্জা উদার মানুষ। বললেন, ‘আপনি বন্ধু মানুষ। টাকা পরে দিলেও চলবে। দুটো আঙুর মুখে দিয়ে দেখুন, মধুর মত মিষ্টি।’

বন্ধু অপারগতা জানিয়ে বললেন, তিনি রোজাদার। হোজ্জা বললেন, ‘রোজার মাস আসতে এখনো দুই মাস বাকি। এখনই রোজা?’

বন্ধু বিগত বছরের ভাঙা রোজাগুলো পূরণ করার কথা জানালেন। সাথে সাথে হোজ্জা বললেন, ‘ভাই আমি তোমার কাছে আঙুর বিক্রি করবো না। কারণ যে লোক খোদার বাকি পূরণ করতে দশ মাস লাগায়, সে আমার বাকি টাকা দিতে ক’বছর লাগাবে?’


পোশাকটি আসলে আমার

হোজ্জার বাড়িতে এক বন্ধু এসেছেন বেড়াতে। সন্ধ্যায় প্রতিবেশীদের সাথে পরিচয় করাতে নিয়ে যাওয়ার সময় হোজ্জা নিজের একটি ভালো পোশাক ধার দিলেন।

প্রথম বাড়িতে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় এও জানালেন, ‘এর গায়ে যে পোশাকটি দেখছেন, তা আসলে আমার।’ সেখান থেকে বেরিয়ে বন্ধু মহা ক্ষ্যাপা। ‘কী দরকার ছিল ওটা বলে আমাকে অপমান করার?’ হোজ্জা ক্ষমা চাইলেন।

দ্বিতীয় বাড়িতে গিয়ে বললেন, ‘এর গায়ে যে পোশাকটি দেখছেন, তা আসলে এরই।’ এবার তো বন্ধু আরো ক্ষ্যাপলেন। ‘পোশাকটি নিয়ে তুমি কিছু না বলাই ভালো।’

তৃতীয় বাড়িতে গিয়ে হোজ্জা বললেন, ‘ইনি আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এর গায়ে যে পোশাকটি দেখছেন, সে সম্পর্কে কিছু না বলাই ভালো!’


বিড়ালে সব মাংস খেয়ে ফেলেছে

হোজ্জা এক কেজি মাংস কিনে এনে গিন্নিকে দিলেন রান্না করতে। গিন্নি রান্নার পর সব মাংস খেয়ে ফেললো। হোজ্জা নদী থেকে গোসল সেরে এসে খেতে বসলে মাংস না দেখে জিজ্ঞাসা করলে গিন্নি জানালো, বিড়ালে সব মাংস খেয়ে ফেলেছে।

হোজ্জা তাড়াতাড়ি বিড়ালটাকে ধরে ওজন করে দেখলেন যে সেটার ওজন এক কেজি। গিন্নিকে তখন বললেন, ‘এটা যদি বিড়াল হয় তবে মাংস কোথায়, আর এটা যদি মাংস হয় তবে বিড়ালটা কোথায়?’


বিবি তোমার কথাই ঠিক

হোজ্জা তখন কাজী। বিচার-আচার করেন। একদিন বিচারে বসেছেন। ফরিয়াদি আসামি সম্পর্কে তার অভিযোগের বয়ান দিচ্ছে। হোজ্জা মনযোগ দিয়া তার কথা শুনছেন। বাদীর বলা শেষ হলে মাথা ঝাকিয়ে বললেন, ‘তোমার কথাই ঠিক।’

এবার আসামি বলে উঠল, ‘হুজুর, আমার দুইটা কথা ছিল।’ হোজ্জা বললেন, ‘ঠিক আছে তুমি তোমার বক্তব্য বল।’ আসামির বক্তব্যও মনযোগ দিয়ে শোনার পর হোজ্জা বললেন, ‘তোমার কথাই ঠিক।’

হোজ্জার স্ত্রী পর্দার আড়ালে এতক্ষণ সব কথা শুনছিলেন। বিরক্ত হয়ে স্বামীকে তিনি বললেন, ‘দুজনই ঠিক হয় কিভাবে? হয় আসামির কথা ঠিক, না হয় ফরিয়াদির কথা ঠিক।’

হোজ্জা স্ত্রীর দিকে ফিরে সমর্থনসূচক হাসি দিয়ে বললেন, ‘বিবি তোমার কথাই ঠিক।’


জামার ভিতর আমি

এক রাতে হোজ্জা দেখে বাগানে এক লোক দাঁড়িয়ে আছে। চোর ভেবে হোজ্জা ধনুক বের করে চোরের দিকে তীর ছুঁড়ল। পরদিন সকালে গিয়ে দেখে তারই জামা মেলে দেয়া ছিল। যেটাকে হোজ্জা চোর মনে করে তীর ছুঁড়েছিল এবং সেই তীর জামায় বিদ্ধ হয়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে হোজ্জা মোনাজাত করে আল্লার কাছে শুকরিয়া জানায়।

হোজ্জার বিবি অবাক হয়ে বলে, ‘তুমি এখন মোনাজাত করছ কেন?’

হোজ্জা : ভাগ্যিস জামার ভিতর আমি ছিলাম না।


তাহলে আমি ঘুমাচ্ছি

একদিন হোজ্জা চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল। এমন সময় তার শালা এলো-
শালা : আপনি কি ঘুমাচ্ছেন?
হোজ্জা : কেন জিজ্ঞেস করছ?
শালা : আপনি যদি আমাকে কিছু টাকা ধার দিতেন।
হোজ্জা : তাহলে আমি ঘুমাচ্ছি। এখন আমাকে একা থাকতে দাও।


হোজ্জার সঙ্গে তার স্ত্রীর ঝগড়া

এক রাতে হোজ্জার প্রতিবেশী শুনল হোজ্জার সঙ্গে তার স্ত্রীর ঝগড়া চলছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর ভারি একটা কিছু পড়ার আওয়াজ হলো তারপর সব চুপচাপ।

পরদিন সকালে-
প্রতিবেশী : কাল রাতে আপনার বাসায় ভারি কিছু একটা পড়ার শব্দ পেলাম।
হোজ্জা : আমার বিবি রাগ করে আমার কোর্তা জানালা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়।
প্রতিবেশী : একটা কোর্তা পড়ায় এত শব্দ হয়?
হোজ্জা : আরে কোর্তার ভিতর তো আমিও ছিলাম।


তুমি না, তোমার ভাই মারা গেছে

হোজ্জার গ্রামে যমজ ভাই ছিল। একদিন শোনা গেল, ওই যমজ ভাইদের একজন মারা গেছে।
রাস্তায় ওই যমজ তাদের একজনকে দেখে হোজ্জা দৌড়ে গেলেন তার দিকে। জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কোন জন মারা গেছে-তুমি না, তোমার ভাই?’


এর পরের প্রশ্ন

হোজ্জা একটা স্টল খুলে ওখানে নোটিশ টাঙিয়ে দিলেন।
‘যেকোনো বিষয়ে দুই প্রশ্নের জবাবের বিনিময়ে পাঁচ পাউন্ড।’

একজন পথচারী হন্তদন্ত হয়ে তাঁর কাছে এসে টাকাটা হাতে দিয়ে বলল, ‘দুটো প্রশ্নের জন্য পাঁচ পাউন্ড, একটু বেশি নয় কি?’

‘হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন’, হোজ্জা বললেন, ‘এর পরের প্রশ্ন?’


হোজ্জার বিধবাকে বিয়ে

হোজ্জা এক বিধবাকে বিয়ে করলেন, বিয়ের পাঁচ দিন পর নতুন বউ একটি ছেলেসন্তান জন্ম দিল। হোজ্জা তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে বাজারে গিয়ে স্কুলের ব্যাগ, বই থেকে শুরু করে সব কিনতে শুরু করলেন। মানুষজন তাঁকে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি এসব কিনছেন কেন?’

জবাবে হোজ্জা বললেন, ‘আমার বাচ্চা যদি নয় মাসের সফর পাঁচ দিনে শেষ করতে পারে, তাহলে তো সে স্কুলে যাওয়ার জন্য যেকোনো সময় প্রস্তুত হতে পারে।’


গাধার পিঠে লবণ বোঝাই

একদিন হোজ্জা গাধার পিঠে লবণ বোঝাই করে বাজারের দিকে রওনা দিলেন। পথে একটা নদী পড়ল। গাধাসহ নদী পার হলেন। কিন্তু নদীর পানিতে লবণ গলে একাকার। পণ্য হারিয়ে হোজ্জা বিরক্ত। গাধা তো মহা খুশি বোঝা থেকে বেঁচে গিয়ে।

এর পরেরবারও হোজ্জা ওই পথ দিয়ে গেলেন, তবে এবার তুলা বোঝাই করে। গাধা যখন নদী পার হলো তখন তুলা ভিজে ওজন বেড়ে গেল। গাধা ওজনদার মাল নিয়ে টলমল পায়ে এগিয়ে যেতে লাগল।

‘হাহ্‌!’ হোজ্জা চেঁচিয়ে বললেন, ‘ভেবেছিলি প্রতিবার পানি দিয়ে গেলে পিঠের ওপরের মালের ওজন কমে যাবে, তাই না?


দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার

এক সন্ধ্যায় হোজ্জা হঠাৎ দেখতে পেলেন একদল ঘোড়সওয়ার তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে। তিনি দিব্যদৃষ্টিতে যেন দেখতে পেলেন তাঁকে ধরে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে কিংবা সেনাবাহিনীতে জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।

হোজ্জা লাফ দিয়ে দেয়াল টপকে গোরস্থানে গিয়ে একটা খালি কবর দেখে শুয়ে পড়লেন। তার আচরণে কৌতূহলী হয়ে ঘোড়সওয়াররা গোরস্থানে ঢুকে পড়ল। দেখল হোজ্জা একটা খালি কবরে শক্ত কাঠ হয়ে শুয়ে আছে। ‘কবরের ভেতর কী করছেন আপনি? আমরা কি সাহায্য করতে পারি?’

‘প্রশ্ন করেছেন বলেই সব প্রশ্নের সোজাসাপটা জবাব দেওয়া যায় না’, হোজ্জা বললেন। ‘পুরো ব্যাপারটা আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করছে। যদি বলি আপনাদের জন্য আমার এখানে আসা আর আমার জন্যই আপনাদের এখানে আসা-তাহলে কি কিছু বুঝবেন?’


ভেবেছিলাম তুমি অশুভ

রাজার মেজাজ খারাপ। রাজপ্রাসাদ থেকে বেরিয়ে শিকারে যাওয়ার পথে হোজ্জা সামনে পড়ে গেলেন।
‘শিকারে যাওয়ার পথে হোজ্জার সামনে পড়ে যাওয়াটা আমার ভাগ্যের জন্য খারাপ’, প্রহরীদের রাগত গলায় বললেন রাজা। ‘আমার দিকে ওকে তাকাতে দিয়ো না-চাবুকপেটা করে ওকে পথ থেকে সরিয়ে দাও।’

প্রহরীরা তা-ই করল।
শিকার কিন্তু ভালোই হলো।
রাজা হোজ্জাকে ডেকে পাঠালেন।

‘আমি সত্যি দুঃখিত, হোজ্জা। ভেবেছিলাম তুমি অশুভ। কিন্তু তুমি তা নও।’

‘আপনি ভেবেছিলেন আমি অশুভ!’ হোজ্জা বললেন। ‘আপনি আমাকে দেখার পর ভালো শিকার করেছেন। আর আমি আপনাকে দেখে চাবুকপেটা খেয়েছি। কে যে কার অশুভ, বুঝলাম না।’


আমি একজন চোরাচালানি

গাধার পিঠে চেপে হোজ্জা প্রায়ই ইরান, গ্রিস চলে যান। প্রতিবারই গাধার পিঠে দুই বোঝা খড় চাপিয়ে নিয়ে যেতেন এবং ফিরে আসতেন পায়ে হেঁটে। প্রতিবার তাঁকে তল্লাশি করা হতো বেআইনি সামগ্রীর খোঁজে। কিছুই পাওয়া যেত না।
‘কী নিয়ে যান আপনি, হোজ্জা?’
‘আমি একজন চোরাচালানি।’

কয়েক বছর পর হোজ্জার অবস্থা আরও রমরমা। মিসরের উদ্দেশে রওনা দিলেন। সেখানে একদিন এক সীমান্তরক্ষী তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন।

‘বলুন হোজ্জা, কী করে গ্রিস ও ইরানের আইন ফাঁকি দিয়ে গেলেন আর এখানেও বেশ ভালোই আছেন, কী চোরাচালান করতেন যে কখনোই ধরা যেত না?’
‘গাধা।’


ঘুমন্ত অবস্থায় হাঁটি

একদিন এক গার্ড দেখল হোজ্জা তাঁর শোয়ার ঘরের জানালা খুলে বেরিয়ে আসতে চাইছেন। তখন ছিল গভীর রাত।
‘কী করছেন আপনি হোজ্জা? এভাবে বাইরে আসতে চাইছেন কেন?’

‘হিস্‌স্‌স্‌! ওরা বলে আমি নাকি ঘুমন্ত অবস্থায় হাঁটি। সেটা দেখার জন্যই চেষ্টা করে যাচ্ছি।’


তুর্কোমানের ষাঁড়

এক তুর্কোমানের ষাঁড় হোজ্জার বাগানের বেড়া ভেঙে ভেতরে ঢুকে তছনছ করে দিয়ে মালিকের কাছে ফিরে গেল। হোজ্জা পুরো ব্যাপারটা লক্ষ করলেন, তারপর একটা বেত নিয়ে বেরিয়ে এসে ষাঁড়টাকে পেটাতে শুরু করলেন।

‘কোন সাহসে আমার ষাঁড়কে আপনি পেটাচ্ছেন!’ তুর্কোমান চেঁচিয়ে বলল।

‘কিছু মনে করবেন না আপনি’, হোজ্জা বললেন, ‘ও পুরো ব্যাপারটা জানে। এটা ওর আর আমার ব্যাপার!’


অতিথিপরায়ণ ব্যক্তি

একদিন এক চায়ের স্টলে হোজ্জা সবাইকে বললেন, ‘আমি একজন অতিথিপরায়ণ ব্যক্তি।’
‘বেশ, তাহলে আজ দুপুরে আমাদের সবাইকে খাওয়ান’, সবচেয়ে চতুরজন কথাটা বলল।
হোজ্জা তাদের নিয়ে নিজ বাসার দিকে রওনা দিলেন।

বাড়ির কাছে এসে হোজ্জা বললেন, ‘আমি আগে আগে বাসায় গিয়ে স্ত্রীকে বলি আর তোমরা আসতে থাকো।’
খবরটা শোনার পর স্ত্রী রেগে আগুন, ‘ঘরে কোনো খাবার নেই, ওদের ফিরে যেতে বলো।’
‘তা পারব না, আমি যে অতিথিপরায়ণ, তার একটা সুনাম আছে।’

‘বেশ, তাহলে তুমি ওপরের তলায় গিয়ে বসো; আমি ওদের বলছি তুমি বেরিয়ে গেছ, বাড়িতে নেই।’
এক ঘণ্টা পর অতিথিরা এসে দরজায় ধাক্কা দিল আর বলতে লাগল, ‘আমাদের ভেতরে ঢুকতে দাও হোজ্জা।’
হোজ্জার স্ত্রী দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন।

‘হোজ্জা তো বাড়ি নেই।’

‘সেকি আমরা তো তাকে বাড়িতে ঢুকতে দেখেছি আর দরজার দিকে লক্ষ রেখেছি তার ঢোকার পর থেকে। বের তো হয়নি।’
স্ত্রী চুপ করে গেলেন।

ওপরতলার জানালা দিয়ে হোজ্জা পুরোটাই দেখছিলেন। নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে জানালা দিয়ে ঝুঁকে বললেন, ‘আমি কি পেছনের দরজা দিয়ে বাইরে যেতে পারি না?’


মরুভূমিতে দৌড়

‘আমি যখন মরুভূমিতে গিয়েছিলাম তখন আমার কারণে একটি বেদুইন গোষ্ঠী দৌড়ের ওপর ছিল।’ একদিন হোজ্জা বললেন সবাইকে গর্বের সঙ্গে।

‘কিন্তু কীভাবে?’

‘একেবারে সহজ। হঠাৎ ওদের সামনে দিয়ে যেই দৌড় লাগিয়েছি, অমনি পুরো দলটা আমার পিছু পিছু দৌড় লাগাল, ব্যস।’


আজকে সপ্তাহের কোন দিন

হোজ্জাকে একদিন একজন রাস্তায় থামিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘আজকে সপ্তাহের কোন দিন?’
‘বলতে পারব না’, জবাবে হোজ্জা বললেন, ‘আমি এই এলাকায় নতুন। জানি না এখানকার মানুষেরা সপ্তাহের কোন দিনটি মেনে চলে।’


তুমি একটা নেকড়ে

হোজ্জার এক প্রতিবেশী শিকারে গিয়ে নেকড়ের কবল থেকে এক ভেড়াকে বাঁচিয়ে বাড়ি নিয়ে আসে, পালবে বলে। শিকারির যত্নে ভেড়াটি দিন দিন নাদুস-নুদুস হয়ে উঠল। একদিন শিকারির লোভ হলো ভেড়ার মাংস খাওয়ার জন্য। তাই জবাই করতে উদ্যত হতেই ভেড়াটি ভয়ে বিকট শব্দে চিত্কার জুড়ে ছিল। ভেড়ার চিত্কারে হোজ্জার ঘুম গেল ভেঙে। ব্যাপারটা বোঝার জন্য সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবেশীর বাড়িতে ছুটে গেলেন হোজ্জা।

হোজ্জাকে দেখে শিকারি প্রতিবেশী লজ্জিত গলায় বললেন, ‘এই ভেড়াটার প্রাণ বাঁচিয়ে ছিলাম একবার।’
‘তাহলে ও তোমাকে গালি দিচ্ছে কেন?’
‘গালি দিচ্ছে?’
‘ভেড়া বলছে, “তুমি একটা নেকড়ে”।’


স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর ওষুধ

হোজ্জা একবার স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য এক হেকিমের কাছ থেকে ওষুধ নিয়েছিলেন।
কয়েক মাস পর হোজ্জা তাঁর হেকিমের কাছে গেলেন ওই ওষুধ আনার জন্য।
‘আচ্ছা, গতবার তোমাকে কী ওষুধ দিয়েছিলাম, একেবারেই মনে করতে পারছি না।’
‘তাহলে ওই ওষুধ এখন থেকে আপনি নিজেই খাবেন’, হোজ্জা বিনীত গলায় বললেন।


কে বেশি পেটুক

নাসিরুদ্দিন হোজ্জার বাড়িতে তাঁর কিছু বন্ধু এসেছেন। অতিথিদের তরমুজ দিয়ে আপ্যায়ন করলেন হোজ্জা। বন্ধুদের সঙ্গে খেতে বসলেন হোজ্জা নিজেও।

হোজ্জার পাশেই বসেছিলেন তাঁর এক দুষ্টু বন্ধু। তরমুজ খেয়ে খেয়ে বন্ধুটি হোজ্জার সামনে তরমুজের খোসা রাখছিলেন। খাওয়া শেষে দেখা গেল, হোজ্জার সামনে তরমুজের খোসার স্তূপ।

দুষ্টু বন্ধুটি অন্যদের বললেন, ‘দেখেছেন কাণ্ড? হোজ্জা কেমন পেটুক? তার সামনে তরমুজের খোসার স্তূপ হয়ে গেছে’!
হোজ্জা হেসে বললেন, ‘আর আমার বন্ধুটির সামনে দেখছি একটা খোসাও নেই! উনি খোসাশুদ্ধ খেয়েছেন! এখন আপনারাই বলুন, কে বেশি পেটুক!’

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments