Tuesday, April 16, 2024
Homeবাণী-কথাঅনুবাদ গল্পঅনুবাদ গল্প: ম্যাকএলিগটের ডোবা

অনুবাদ গল্প: ম্যাকএলিগটের ডোবা

অনুবাদ গল্প: ম্যাকএলিগটের ডোবা

‘এই ছেলে, এই,’ হেসে কুটিকুটি হয়ে বলল এক চাষি, ‘তুমি তো দেখছি বোকার হদ্দ! চারপাশে এত পুকুর রেখে তুমি কিনা ম্যাকএলিগটের ডোবায় মাছ ধরতে বসেছ! ছ্যাঁ!

‘দেখছ না, ডোবাটা এক্কেবারে ছোট। আর তোমার তো জানারই কথা, আশপাশের লোকজনের বাড়িতে নোংরা-আবর্জনা জমলে ওগুলো এখানেই ছুড়ে ফেলে দিয়ে যায় তারা।

‘সুতরাং বুঝতেই পারছ, এখানে ছিপ ফেলে বড়জোর কোনো ছেঁড়া জুতা কিংবা কোনো ক্যান বা ময়লা জমা বোতল পেতে পারো। তবে শোনো ছোকরা, তুমি যদি তোমার হাতে কেঁচো আর মনের ইচ্ছা নিয়ে আগামী ৫০ বছর এখানে ঠায় বসে থাকো, তাহলেও কোনো মাছ পাবে না। তার আগেই তোমার মুখে লম্বা দাড়ি গজিয়ে যাবে, বুঝেছ!’

‘ওহ, আচ্ছা…তাই!’ জবাব দিল ছোট্ট ছেলে মার্কো। ‘আপনার কথা শুনে সত্যি বলেই মনে হচ্ছে। তিন ঘণ্টা ধরে একনাগাড়ে বসে আছি এখানে, কিন্তু এখনো একটা মাছও পেলাম না। মনে হয় আসলেই কোনো মাছ নেই এখানে…।’

‘তবে, তারপরও কেন যেন মনে হচ্ছে মাছ আছে!’, বলল মার্কো।

‘কারণ ডোবার ওই পানির নিচে কী আছে, সেটা আপনি কখনোই বলতে পারবেন না, বুঝেছেন? ডোবাটা হয়তো ধারণার চেয়েও অনেক অনেক বড়। বইয়ে পড়া কোনো ডোবার মতোও তো হতে পারে ওটা। হয়তো মাটির অনেক নিচ দিয়ে ছোট কোন নদীর সঙ্গে মিলেছে এই ডোবাটা। কিংবা ধরুন, মাটির নিচের কোনো নদী হয়তো এখান থেকেই শুরু হয়েছে, তারপর ওই দূরের মাঠের নিচ দিয়ে বয়ে গেছে সেটা, কে জানে?

‘নদীটি হয়তো ওই বড় রাস্তার ঠিক নিচ দিয়ে এমনভাবে বয়ে গেছে যে কেউই কখনো দেখতে পায় না। ওই যে দূরে ওয়াগনটা দেখছেন, নদীটা হয়তো তার ঠিক নিচে দিয়ে বয়ে গেছে! ওই যে কাপড় মেলে দিচ্ছেন মিসেস আমব্রোসো। ঠিক তার পায়ের নিচ দিয়েও বয়ে যেতে পারে নদীটা!

‘সেই নদী হয়তো বয়ে যাচ্ছে…কুলকুল করে…ছল ছল করে…সে কথা কে বলতে পারে?…ঠিক ওই স্নিডেন হোটেলের নিচ দিয়েও বয়ে যেতে পারে ওটা! ওই যে ছেলেগুলো কাঠের বল খেলছে, হয়তো তাদের পায়ের তলার সবুজ ঘাসের ঠিক নিচ দিয়ে বয়ে গেছে! তারপর নদীটি হয়তো পাহাড়ের নিচ দিয়ে এঁকেবেঁকে চলে গেছে অনেক অনেক দূরে!

‘এটি নদীও হতে পারে আবার এখন হয়তো সেটা আর নদী নয়। বরং এই ম্যাকএলিগটের ডোবাটা এখন কোনো সাগরে মিশেছে! তাই যদি হয়, তাহলে কিছু মাছ সাঁতরে আমার দিকে আসতেও তো পারে! সত্যিই যদি এটা ঘটে, তাহলে নিঃসন্দেহে মাছেরা এখানে আসবেই আসবে।

‘কিছু স্মার্ট মাছ হয়তো অন্যদের পথ দেখিয়ে দেবে। মানে, আমি যেখানে মাছ ধরতে বসেছি, পাঠিয়ে দেবে সেদিকে। সে জন্যই বলছি, আমি যদি অনেকক্ষণ এখানে বসে অপেক্ষা করি, আমার যদি ধৈর্য থাকে, আমি যদি ভালো মানুষ হই, তাহলে কে জানে, এই ম্যাকএলিগটের ডোবাতেও একটা মাছ ধরে ফেলতে পারি!

‘আমার ধরা মাছটা না হয় একটু পাতলাই হলো।

‘কিংবা একটু না হয় গোবদা গোবদা হলো।

‘কিংবা খুদে কোনো মাছ হলেও ক্ষতি নেই। হয়তো মাছটা অনেক অনেক লম্বা হবে।

‘যেকোনো ধরনের! যেকোনো আকারের! যেকোনো রং বা আকৃতির হোক না কেন, ক্ষতি কী!

‘মাছটা যেমন খুশি হোক না কেন, এখানে মাছ ধরে আপনার চোখ খুলে দিতে চাই আমি।

‘আবার ওটা যদি কোনো কুকুরের মতো দেখতে ডগফিশও হয়, তাতেও অবাক হব না!

‘ওই ডগফিশটার গলায় হয়তো একটা কলার থাকতে পারে! থাকতে পারে লম্বা কানও।

‘নাহয় একটা ঘোড়া মাছই ধরলাম। অথবা মাছটা দেখতে একটু গরুর মতো হলেও ক্ষতি নেই। কিছু মাছ গ্রীষ্মমণ্ডল থেকেই আসুক নাহয়। ওই মাছগুলো হবে রোদে পোড়া আর গরম–গরম। ফলে তারা সাঁতার কেটে এখানে আসতে চাইবেই। এমনটা হতেই পারে, না হলেই বা কী যায় আসে?
‘হয়তো কুকুরের মতোই ঘেউ ঘেউ করে বসতে পারে মাছটা! এমনকি সেটা অনেকগুলো ক্যাটফিশকেও তাড়িয়ে আনতে পারে আমার দিকেই!

‘আবার চাকার মতো লেজওয়ালা একটা মাছও ধরতে পারি আমি! কিংবা ধরুন, জাহাজের পালের মতো পাখনাওয়ালা কোনো মাছই নাহয় ধরলাম। অথবা এমন কোনো মাছ, যারা হাই জাম্প দিতে পারে। মাছটার যদি লম্বা গোঁফ থাকে, তাতেও কোনো সমস্যা নেই।

‘কোঁচকানো নাকওয়ালা মাছ হলেই বা ক্ষতি কী। ধরুন, মাছটা নাহয় মোরগের মতোই হলো। কিংবা তার পেটটা হোক না দাবার বোর্ডের মতো। মাছটা স্ট্রবেরি জেলি দিয়ে তৈরি হলেই বা কী সমস্যা?

‘নাহয় একটা ঘোড়া মাছই ধরলাম। অথবা মাছটা দেখতে একটু গরুর মতো হলেও ক্ষতি নেই। কিছু মাছ গ্রীষ্মমণ্ডল থেকেই আসুক নাহয়। ওই মাছগুলো হবে রোদে পোড়া আর গরম–গরম। ফলে তারা সাঁতার কেটে এখানে আসতে চাইবেই। এমনটা হতেই পারে, না হলেই বা কী যায় আসে? কারণ, স্রোতে ভেসে উত্তর দিকের এই ম্যাকএলিগোটের ডোবায় এসে ওরা একটু ঠান্ডা হওয়ার সুযোগ চাইতেই পারে।

‘কে জানে, হাডসন বে ছাড়িয়ে দূর থেকে কিছু এস্কিমো মাছও এখানে আসতে চাইতে পারে। অনেক লম্বা সফর হলেও হয়তো এখন এদিকেই এগিয়ে আসছে তারা।

‘আমি তো একটা ইল মাছও ধরতে পারি, অনেক লম্বা উদ্ভট একটা ইল, যার দুদিকেই দুটো মাথা।

‘নিয়মমতো এ রকম মাছ কেউ ধরতে পারে না। কিন্তু ম্যাকএলিগটের ডোবায় তো ও রকম কোনো আইন নেই। এখানে এই সুযোগ পেতেই পারি আমি।

‘একটা ভয়াবহ রকম মনমরা মাছ ধরলেই বা দোষ কী! কিংবা ধরা যাক, সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে আগত থলিওয়ালা কোনো ক্যাঙারু মাছ এদিকে চলে এল।

‘ম্যাকেরেল বা ট্রাইটের মতো পুঁচকে মাছ কে ধরতে চায় বলুন? তার বদলে আমি লম্বা নাকওয়ালা একটা করাত মাছ ধরতে চাই। যে মাছের নাক বয়ে নেওয়ার জন্যও একজন সহকারী লাগে।

‘আমি যদি ধৈর্য নিয়ে ভদ্রভাবে অনেকক্ষণ এখানে অপেক্ষা করি, তাহলে কে জানে ম্যাকএলিগটের ডোবায় কী ধরতে পারব!

‘সেই মাছটা হয়তো থ্যাবড়া ঘাড়ওয়ালা কোনো গলদা চিংড়িও হতে পারে। যার গায়ে হয়তো নরম খোসা আর পেশিগুলো হতে পারে শক্তিশালী। আমার টোপ গিলে ফেললে তার সঙ্গে ভীষণ ধস্তাধস্তি হবে! তাকে ডাঙায় তুলতে দুই থেকে তিন ঘণ্টাও লেগে যেতে পারে। অবশ্য তার পরের মাছটা হয়তো ফুলের মতো সহজ–সরল হবে।

‘কিংবা দ্রুতগতিতে ছুটতে পারা কোনো মাছও ধরে ফেলতে পারি আমি। এমনটা হবে, হতেই পারে। আমি কিন্তু সত্যি বলছি, রসিকতা করছি না!

‘কিংবা ধরুন, এমন কোনো মাছও হতে পারে, যে কিনা স্কি করে দ্রুতবেগে পানির তলার অদ্ভুত কোনো দ্বীপের নিচের দিকে যেতে পারে। স্কি করতে করতে আমার কাছে চলে আসতেই পারে সেই মাছটা।

‘এমন হওয়া তো অসম্ভব নয়, তাই না?

‘সার্কাস মাছ কিংবা অ্যাক্রোব্যাট স্কুল থেকে পাস করা কিছু মাছ হয়তো এখন ম্যাকএলিগটের ডোবায় জমজমাট শো দেখাতে শুরু করেছে।

‘অদ্ভুত অচেনা কোনো জায়গা থেকে আসা একটা মাছও কিন্তু ধরে ফেলতে পারি। মাছটার বাড়ি হয়তো তিব্বতের ওপাশে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু নদীতে। সেখানে ঝরনাগুলো এতটাই খাড়া আর ভয়ংকর যে মাছটা ঝরনা থেকে প্যারাস্যুটের মতো বাতাসে ভাসতে ভাসতে নিচে পানিতে নেমে আসে।

‘পৃথিবীর গভীরতম মহাসাগর থেকে আসা কোনো মাছও আমি ধরে ফেলতে পারি।

‘এমনকি তিমিদেরও ধরতে পারব আমি। একদল তিমি। তারা হয়তো লেজ ঝাপটাতে ঝাপটাতে চারদিকে পানি ছিটাতে ছিটাতে এদিকেই এগিয়ে আসছে।

‘পঞ্চাশটা তিমি ধরার পর আমার মাছ ধরা শেষ হবে আজ। কারণ, সবাই বলে তিমিদের চেয়ে নাকি বড় কোনো জন্তু নেই। তারপরও আমি মনে হয় তিমিদের চেয়েও বড় কিছু একটা ধরে ফেলব আজ। মাছটা এতই বড় হবে যে তার কাছে তিমিদেরও খুদে সার্ডিন মাছের মতো লাগবে।

‘সাগর অনেক অনেক রকমের মাছে টইটম্বুর। কারও যদি ধৈর্য থাকে, তাহলে তার ইচ্ছাপূরণ হতেই পারে। আর এসব কারণেই ম্যাকএলিগটের ডোবায় মাছ ধরতে বসেছি, বুঝেছেন? আর এ জন্যই আমার ধারণা, আমি বোকা নই।’

লেখা:ড. সুজ
অনুবাদ : আবুল বাসার

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments