Friday, April 26, 2024
Homeকিশোর গল্পগল্প (বড়মামা) - সুকুমার রায়

গল্প (বড়মামা) – সুকুমার রায়

টিয়াপাখির বুদ্ধি - সুকুমার রায়

“বড়মামা, একটা গল্প বলো না।”
“গল্প? এক ছিল গ, এক ছিল ল আর এক ছিল প—”
“না— ও গল্পটা না। ওটা বিচ্ছিরি গল্প— একটা বাঘের গল্প বল।”

“আচ্ছা । যেখানে মস্ত নদী থাকে আর তার ধারে প্রকাণ্ড জঙ্গল থাকে— সেইখানে একটা মস্ত বাঘ ছিল আর ছিল একটা শেয়াল।”
“না, শেয়াল তো বলতে বলিনি— বাঘের গল্প।”

“আচ্ছা, বাঘ ছিল, শেয়াল-টেয়াল কিছু ছিল না। একদিন সেই বাঘ করেছে কি একটা ছোট্ট সুন্দর হরিণের ছানার ঘাড়ে হালুম ক’রে কামড়ে ধরেছে—”
“না— সেরকম গল্প আমার শুনতে ভালো লাগে না। একটা ভালো গল্প বল।”

“ভালো গল্প কোথায় পাব? আচ্ছা শোন— এক ছিল মোটা বাবু আর এক ছিল রোগা বাবু। মোটা বাবু কিনা মোটা, তাই তার নাম বিশ্বম্ভর, আর রোগা বাবু কিনা রোগা, তাই তার নাম কানাই।”

“বিস-কম্বল মানে কি মোটা, আর কানাই মানে রোগা?”
“না; মোটা কিনা, তাই তার মস্ত মোটা নাম— বিশ্‌-শম -ভর, আর রোগা লোকের নাম কানাই।”

“রোগা কানাই বলল, ‘মোটা বিশ্বম্ভর, তোমার এমন বিচ্ছিরি ঢাকাই জালার মতন চেহারা কেন?’ মোটা বিশ্বম্ভর বলল, ‘রোগা কানাই, তোর হাত পা কেন কাঠির মতন, হাড়গিলের ঠ্যাঙের মতন, রোদে-শুকনো দড়ির মতন।’ তখন তারা ভয়ানক চটে গেল। রোগা বলল, ‘মোট্‌কা লোকের বুদ্ধি মোটা।’ মোটা বলল, ‘রোগা লোকের কিপটে মন।’
“মোটা বুদ্ধি মানে কি বোকা বুদ্ধি?”

“হ্যাঁ। তারপর শোন— মোটা আর রোগা তখন খুব ঝগড়া করতে লাগল। এ বলল, ‘রোগা মানুষ ভালো নয়’— ও বলল, ‘মোটা হলেই দুষ্টু হয়।’ তখন তারা বলল, ‘আচ্ছা চল তো পণ্ডিতের কাছে— বইয়েতে কি লেখা আছে— জিজ্ঞাসা কর তো।’
“বইয়েতে কি সব কথা লেখা থাকে?”

“হ্যাঁ, থাকে। তারা তখন দুজনেই পণ্ডিতের কাছে গিয়ে নালিশ করল। পণ্ডিতমশাই নাকের আগায় চশমা এঁটে, কানের ফাঁকে কলম গুঁজে, মুণ্ডু নেড়ে, টিকি ঝেড়ে তেড়ে বললেন, ‘রোসো! দাঁড়াও, একটু বসো— রোগা এবং মোটা এদের কে কি রকম পাজী, বিচার করব আজই।’ এই বলে পণ্ডিতমশাই তাকিয়ার উপর পাশ ফিরে নাক ডাকিয়ে ঘুমুতে লাগলেন। রোগা কানাই আর মোটা বিশ্বম্ভর বসেই আছে বসেই আছে— এক ঘণ্টা যায়, দু ঘণ্টা যায়! তখন পণ্ডিতমশাই চোখ রগড়িয়ে বললেন, ‘ব্যাপারখানা কি?’ বাবুরা বলল, ‘আজ্ঞে, সেই রোগা আর মোটার কথা।’ পণ্ডিত বললেন,’ঠিক ঠিক’— এই বলে প্রকাণ্ড একখানা বই নিয়ে মুখ বাঁকিয়ে হেলেদুলে, ষাঁড়ের মতন সুরটি ক’রে তিনি বলতে লাগলেন— ‘বইয়ে আছে—

মোটকা মানুষ হোঁৎকা মুখ,
বুদ্ধি মোটা আহাম্মুক—’
অমনি রোগা কানাই হো হো ক’রে হেসে উঠল। তখন পণ্ডিত বললেন—
‘শুকনো লোকের শয়তানি
দেমাক দেখে হার মানি।’

তাই শুনে মোটাবাবু হেসে লুটোপুটি। তখন পণ্ডিত বললেন, ‘বইয়ে লিখেছে—

মস্ত মোটা মানুষ যত
আস্ত কোলা ব্যাঙের মতো
নিষ্কর্মা সব হদ্দ কুঁড়ে
কুমড়ো গড়ায় রাস্তা জুড়ে!
—আর—
চিমসে রোগা যত ব্যাটা
বিষম ফাজিল বেদম জ্যাঠা
শুঁটকো লোকের কারসাজী
হিংসুটে আর হাড় পাজী।।
তাই শুনে রোগা মোটা দুয়ে মিলে ভয়ানক রকম চটে গেল।

পণ্ডিত বললেন—
‘দুটোই বাঁদর দুটোই গাধা
রোগা মোটা সমান হাঁদা।
ভণ্ড বেড়াল পালের ধাড়ী
লাগাও মুখে ঝাঁটার বাড়ি।
মাথায় মাথায় ঠুকে ঠুকে
চুন কালি দাও দুটো মুখে।।’

“এই বলে পণ্ডিতমশাই এক টিপ নস্যি নিয়ে, নাকে মুখে গুঁজে, আবার নাক ডাকিয়ে ঘুমুতে লাগলেন।”
“তারপর সেই বাবুরা কী বললে?”

“বাবুরা হাঁ ক’রে বোকার মতো মাথা চুলকোতে চুলকোতে বাড়ি চলে গেল, আর ভাবল পণ্ডিতটা কী বোকা!”

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments