Tuesday, August 26, 2025
Homeরম্য গল্পপুতা নিয়ে যাও - জসীম উদ্দীন

পুতা নিয়ে যাও – জসীম উদ্দীন

পুতা নিয়ে যাও – জসীম উদ্দীন

হাটে একটা প্রকাণ্ড বোয়াল মাছ উঠেছে। এক ফকীর ভাবল, এই বোয়াল মাছটার পেটি দিয়ে যদি চারটি ভাত খেতে পারতাম! সে মাছের দোকানের কাছে দাঁড়িয়ে রইল। একজন চাষী এসে মাছটি কিনে নিল। মুসাফির তার পিছে পিছে যেতে লাগল। লোকটি যখন বাড়ির ধারে এসেছে তখন মুসাফির তার নিকটে গিয়ে বলল, “সাহেব! আমি মুসাফির লোক। ভিক্ষা করে খাই। কোনোদিন ভালো খাওয়া হয় না। আজ হাটে গিয়ে যখন ঐ বড় মাছটি দেখলাম, মনে বড় ইচ্ছা হল এই মাছটির পেটি দিয়ে যদি চারটি ভাত খেতে পারতাম! তাই আপনার পিছন পিছন এসেছি। দয়া করে যদি আমার মনের ইচ্ছাটা পূরণ করেন বড়ই খুশি হব।”

লোকটি বড়ই দয়ালু। সে খুশি মনেই মুসাফিরকে এনে বৈঠকখানায় বসাল। তারপর মাছটি ভিতরে নিয়ে গিয়ে তার বউকে মুসাফিরের সমস্ত ঘটনা বলে হুকুম করল, “এই মাছটির পেটি বেশ পুরু করে কাটবে। পেটিখানা মুসাফিরকে দিতে হবে।”

এমন সময় লোকটির একটি গরু ছুটে গেল। সে তাড়াতাড়ি গরুটির পিছন পিছন দৌড়াল।। মাছ কাটতে কাটতে চাষীর বউ ভাবল, “বাড়িতে ভালো কিছু খাবার পাক করলেই আমার স্বামী এমন করে মুসাফির নিয়ে আসে। মুরগীর রান, মাছের পেটি সব সময়ই মুসাফিরদের দিয়ে খাওয়ায়। এই বড় মাছের পেটিটাও মুসাফিরকে খাওয়াবে। যেমন করেই হোক মুসাফিরকে আজ তাড়াব।”

এই কথা ভেবে ঐ চাষীর বউ খালি পাটার উপর পুতাখানা ঘষতে আরম্ভ করল আর সুর করে কাঁদতে লাগল।

অনেকক্ষণ কান্না শুনে মুসাফির ভাবল, না জানি বউটার কি সমস্যা হয়েছে। সে বাড়ির ভিতর এসে জিজ্ঞাসা করল, “মা! তুমি কাঁদছ কেন? তোমার কি হয়েছে?”

বউটি বলল, “বাবারে! সে কথা তোমাকে বলবার নয়। আমার স্বামী মানা করেছেন।”

মুসাফির বলল, “মা! আমার কাছে কোনো কথা গোপন করো না।”

বউটি তখন নাকি কান্নার ভান করে বলল, “আমার স্বামী বাড়ির ভিতরে এসে আমাকে বলল, এই মুসাফির বড়ই লোভী। আমাদের পুতাখানা পাটায় ধার দিয়ে চোখা করে রাখ। মুসাফিরের গলার ভিতর দিয়ে ঢুকাইয়া দিব। যাহাতে সে আর কাহারও মাছ দেখে লোভ করতে না পারে। তাই আমি কাঁদছি। হায়! হায়! আমার স্বামী এই মোটা পুতা তোমার গলার ভিতরে ঢুকালে নিশ্চয় তুমি মরে যাবে, তাই আমি কাঁদছি। কিন্তু স্বামীর হুকুম তো আমাকে মানিতেই হবে।”

শুনে মুসাফিরের তো চক্ষুস্থির। সে বলল, “মা জননী! তুমি একটু আস্তে আস্তে পুতা ঘষ। আমি এখনই চলে যাচ্ছি।”

এই বলে মুসাফির তাড়াতাড়ি লাঠি-বোচকা নিয়ে দে চম্পট। এমন সময় বাড়ির কর্তা ফিরে এসে দেখে কাছারি ঘরে মুসাফির নাই। বউকে জিজ্ঞাসা করল, “মুসাফির চলে গেল কেন?”

বউ নথ নাড়তে নাড়তে বলল, “তুমি বাড়ি হতে চলে গেলে মুসাফির বলে কি, তোমাদের পুতাটা আমাকে দাও। দেখ তো, আমাদের একটা মাত্র পুতা। তা মুসাফিরকে দেই কেমন করে? পুতা দেই নাই বলে মুসাফির রেগে চলে গেল।”

স্বামী বলল, “সামান্য পুতাটা দিয়ে দিলেই পারতে। আমি না হয় বাজার হতে আর একটি পুতা কিনে আনতাম। এখনি পুতাটা আমাকে দাও, আর মুসাফির কোন্ দিকে গিয়েছে বল!”

বউ পুতাটি স্বামীর হাতে দিয়ে বলল, “মুসাফির এই দিক দিয়ে গিয়েছে।”

পুতাটি হাতে নিয়ে সে সেই দিকে দৌড়ে চলল। খানিক গিয়ে দেখল, মুসাফির অনেক দূরে হন হন করে চলেছে। সে ডেকে বলতে লাগল, “ও মুসাফির, দাঁড়াও-দাঁড়াও-পুতা নিয়ে যাও।”

শুনে মুসাফির উঠে পড়ে দৌড়। চাষী যতই জোরে জোরে বলে, “ও মুসাফির! পুতা নিয়ে যাও! পুতা নিয়ে যাও!” মুসাফির আরও জোরে জোরে দৌড়ায়। সে ভাবে সত্যই চাষী তার গলায় পুতা ঢুকাইতে আসতেছে। বোচকা-বুচকি বগলে ফেলে সে আরো জোরে দৌড়ায়।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here


Most Popular

Recent Comments