Thursday, April 18, 2024
Homeরম্য গল্পটমাস আলভা এডিসনের ১০টি মজার ঘটনা

টমাস আলভা এডিসনের ১০টি মজার ঘটনা

টমাস আলভা এডিসনের ১০টি মজার ঘটনা

টমাস আলভা এডিসন। বিখ্যাত বিজ্ঞানী। বৈদ্যুতিক বাতি, কিন্টোগ্রাফ ও ফোনোগ্রাফ তাঁর বিখ্যাত আবিষ্কার গুলোর কয়েকটি, যা মানুষের জীবনযাপনকে আমূল পাল্টে দিয়েছিল। ১৯৩১ সালে মারা যাওয়ার আগে হাজার খানেক প্যাটেন্ট ছিল তাঁর নামে।

১৮৪৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ওহিওর মিলানে জন্ম নেন এডিসন। বাবা স্যামুয়েল ও মা ন্যান্সি এডিসনের সবচেয়ে ছোট এবং সপ্তম সন্তান ছিলেন এডিসন।

এডিসনের বাবা ছিলেন কানাডা থেকে নির্বাসিত একজন রাজনৈতিক কর্মী।

এডিসনের সব চেয়ে আলোড়ন সৃষ্টি কারী আবিষ্কার হল বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কার। আকাশের বিদ্যুতকে মানুষ তখন ব্যাটারিতে আটকাতে পেরেছিল ঠিকই তার পরও কেউ বিশ্বাস করতে পারছিলেন যে তা থেকে আলো পাওয়া সম্ভব হবে। এডিসন নিজ মেধা ও প্রচেষ্টায় সেই অলৌকিকতাকে বাস্তব রূপ দিয়েছিলেন।

গল্প-১
স্কুল থেকে চিঠি দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলো এডিসনকে, ভালো কিছু একটা যে না সেটা অনুমান করতে পেরেছিলেন ঠিকই, সুতরাং বাবাকে না দিয়ে মাকেই দিলেন চিঠিটা, আর মা কি জানি ভাবলেন, তারপর চোখ মুছে উনার সামনেই জোরে জোরে পড়তে লাগলেন চিঠিটা…

“আপনার পুত্র খুব মেধাবী, এই স্কুলটি তার জন্য অনেক ছোটো এবং এখানে তাকে শেখানোর মতো যথেষ্ট প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষক নেই। দয়া করে আপনি নিজেই তার শিক্ষার ব্যবস্থা করুন।”

আর চিঠির কথা শুনে এডিসনের চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠলো, তারপর থেকে মায়ের কাছেই শিক্ষা নেয়া শুরু করলেন।

এরপর পার হয়ে গেছে অনেকদিন, এডিসন ও অনেক বড় বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী, মার্কেটিং এর বড় কেউকেটা। মা ও আর বেঁচে নেই ততদিনে। কি এক কাজে পুরাতন কাগজ নাড়াচাড়া করছিলেন, হঠাত-ই চোখ পড়লো ভাজ করা এক কাগজের দিকে, হাত বাড়িয়ে নিয়ে পড়তে শুরু করলেন, স্কুলের সেই চিঠি। অদ্ভুত এক অনুভুতি, অজানা এক ব্যাথায় যেনো বুকের পাজর ভেঙ্গে আসতে চাইলো, চোখ ফেটে পানি পড়তে লাগলো। তাতে লিখা ছিলো…

“আপনার সন্তান স্থুলবুদ্ধি সম্পন্ন, সে এই স্কুলের উপযুক্ত নয়, আমরা কোনোভাবেই তাকে আমাদের স্কুলে আর আসতে দিতে পারি না।”

তারপর তার ডাইরিতে লিখলেন “টমাস আলভা এডিসন একজন স্থুলবুদ্ধি সম্পন্ন শিশু ছিলেন।একজন আদর্শ মায়ের দ্বারা তিনি শতাব্দীর সেরা মেধাবী হয়ে উঠলেন”।

গল্প-২
এখন যেটা বলছি সেটা উনার বড়কালের গল্প, তখন তিনি বেশ টাকাওয়ালা মানুষ, গেছেন ট্যাক্স অফিসে রিটার্ন জমা দিতে, গিয়ে নিজের নাম লিখতে গিয়ে পড়েছেন বিরাট ফ্যাসাদে, কিছুতেই নিজের নাম মনে করতে পারছেন না, মার খেলে মানুষ বাপের নাম ভুলে যায় কিন্তু উনি দিব্যি নিজের নামটাই ভুলে বসে আছেন। বসে বসে চুল ছিড়ছেন আর দাত কিড়মিড় করছিলেন, হঠাত প্রতিবেশীর সাথে দেখা “কি ব্যাপার টমাস কি করো এখানে” মুহুর্তেই মনে পড়ে গেলো নিজের নামখানি।

যৌবনকালের কথা বাকি থাকবে কেনো? সেটাও বলে দেই ফাঁকে…

কাজ করছিলেন ল্যাবরেটরিতে, আর খেয়াল চাপলো হেলিকপ্টার বানাবেন, আর জ্বালানী হিসেবে থাকবে বারুদ, আগ পিছ না ভেবে যেই চিন্তা সেই কাজ, একটা নমুনা বানিয়ে যেই চালাতে গেলেন, সাথে সাথে বুম! পুরো ল্যাবরেটরি তে আগুন ধরে গেলো। পড়ি কি মরি, কোন মতে বের হয়ে চাচা আপন প্রান বাঁচালেন!

গল্প-৩
টমাস আলভা এডিসন যখন টাংস্টেন তারের পৃথিবীর প্রথম বৈদ্যুতিক বাল্বটি আবিষ্কার করেন তখন তার ল্যাবে ভীষণ ভীড়-ভাট্টা,সাংবাদিক,বন্ধু বান্ধবে গিজ গিজ করছে। বাল্বটি যখন প্রথমবারের মত জ্বলে উঠলো তখন সবাই আনন্দে হই হই করে উঠলো। এবার এডিসন সাবধানে বাল্বটি খুলে তার চাকরের হাতে দিয়ে বললেন, “সাবধানে পাশের ঘরে রেখে আসো।” সাবধানে বলার কারণেই কিনা এডিসনের বেকুব চাকর পৃথিবীর প্রথম বাল্বটি তৎক্ষণাৎ হাত থেকে ফেলে ভেঙে চুরমার করে দিলো।

আশেপাশের সবাই হায় হায় করে উঠলো। সিটিয়ে গেল চাকরটি, শুধু এডিসন কিছু বললেন না। এর কিছু দিন পর দ্বিতীয় বারের মতো এডিসন বাল্বটি তৈরী করলেন। বলা যায় পৃথিবীর দ্বিতীয় বৈদ্যুতিক বাল্ব। এবারও তার ল্যাবে ভীড় আগের মতোই। এবারও বাল্বটি জ্বলে উঠলো সবাই আনন্দে হই হই করে উঠলো এবং এবারও এডিসন বাল্বটি সাবধানে পাশের ঘরে রেখে আসার জন্য তার চাকরকে ডাকলেন। সবাই আঁৎকে উঠলো,“কি করছেন, কি করছেন, ঐ গাধাটা আবার বাল্বটা ভাঙবে, আপনি নিজ হাতে রেখে আসুন, নইলে আমাদের কারো হাতে দিন।

এডিসন স্মিত হেসে বললেন-“ও যদি এবারও বাল্বটা ভাঙে সেটা আমি আবার তৈরী করতে পারবো কারণ এর ম্যাকানিজমটা আমার মাথায় আছে; কিন্তু প্রথম বাল্বটি ভাঙ্গার পর আমার চাকরের আত্ম বিশ্বাস ভেঙে যে চুরমার হয়েছে সেটা জোড়া লাগাতে বাল্বটা এবারও তার হাতেই দিতে হবে”।চাকরটি অবশ্য বাল্বটি না ভেঙ্গে ঠিক জায়গায় রেখে আসতে পেরেছিলো।

গল্প-৪
তেলাপোকার মতো হতচ্ছাড়া উড়ন্ত পতঙ্গ দেখে অনেকে নিজেই ভয়ে লাফিয়ে ওড়া শুরু করেন। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী এডিসন তেলাপোকাকে ভয় পেতেন কিনা জানা যায়নি, তবে তিনি একটি যন্ত্র তৈরি করেন যা দিয়ে বিদ্যুতের সাহায্যে তেলাপোকা মারা যেত।

গল্প-৫
ছেলেবেলা থেকেই কৌতূহলী মন নিয়ে বেড়ে উঠেছিলেন আলভা এডিসন। মাত্র পাঁচ-ছয় বছর বয়স থেকেই বিশ্বখ্যাত এই বিজ্ঞানী জন্ম দিয়েছেন মজার সব কাণ্ড-কারখানা। এমন কিছু ঘটনা অনেকেরই জানা। হাঁস যদি ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে পারে; তবে মানুষ কেন পারে না? এমন কৌতূহল নিয়ে তিনি একবার হাঁসের খাঁচায় ঢুকে বসে ছিলেন চুপচাপ। হাঁস কীভাবে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটায় সেটাই দেখছিলেন নিবিড়ভাবে। সেই শৈশবেই তাঁর অকাট্য যুক্তি ছিল এমন- হাঁসের নিচে ডিম রাখলে তা থেকে বাচ্চা বের হলে আমার পেট থেকে কেন হবে না?

গল্প-৬
বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসনের কথা তো আমরা সবাই জানি। তিনি ছিলেন খুব ভুলোমনা,কোনো কিছুই মনে রাখতে পারতেন না। তো একবার তিনি তার এক বন্ধুকে তার বাসায় খাবার দাওয়াত দিলেন। অথচ দাওয়াতের দিন এডিসন নিজেই বন্ধুকে দাওয়ার দেয়ার কথা ভুলে গেলেন। যথাদিনে বন্ধু এসে হাজির। এসে দেখেন বাড়িতে কেউ নেই। বন্ধুটি তাই তার বিজ্ঞানী বন্ধুটির জন্য অপেক্ষা করতে থাকলো। কিন্তু সময় গড়িয়ে যায়, বন্ধুতো আসে না। অবশেষে খিদে লাগায় বন্ধুটি খিদে সইতে না পেরে টেবিলে রাখা খাবারের প্লেট নিজেই সাবাড় করে দেয়। কিছুক্ষন পরে এডিসন আসলেন।

এসে বন্ধুকে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন “আরে দোস্ত, তুমি এই অসময়ে আমার বাসায়! দাঁড়াও দেখি তোমার জন্য কোনো খাবার আছে কিনা”। এই বলে তিনি টেবিলে রাখা খাবারের প্লেটটির ঢাকনা তুলে দেখেন প্লেটটি খালি। এর পর আফসোস করে বন্ধুকে বলতে লাগলেন, “এই দেখো কান্ড,তোমার জন্য কিছুই রইল না। যাওয়ার সময় যে আমি খাবারটি খেয়ে গেছিলাম তাও ভুলে গেছি।”

গল্প-৭
এডিসনের একটি গ্রীষ্মকালীন নিবাস ছিল যেটি নিয়ে তার অনেক গর্ব ছিল। অতিথিদেরকে তিনি গোটা বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখাতেন যেটি শ্রম সাশ্রয়কারী নানা উপকরণ দিয়ে সাজানো ছিল। বাড়ির পেছনের আঙ্গিনায় একটি ঘোরানো দরজা ছিল যেটি ঠেলে বাড়িতে ঢুকতে হতো। এটি ঘোরাতে বেশ কষ্ট করতে হতো। এক অতিথি একবার এডিসনকে জিজ্ঞাসা করলেন, বাড়িভর্তি এত সব শ্রম সাশ্রয়কারী গ্যাজেট রাখার পরও এরকম ভারী একটা ঘোরানো দরজা রাখার মানেটা কী?’

এডিসনের উত্তর ছিল, ‘ঘটনা হচ্ছে, যতবারই কেউ ঘোরানো দরজাটি ঠেলে ততবারই বাড়ির ছাদের ট্যাংকিতে আট গ্যালন করে পানি জমা হয়!’

গল্প-৮
লাইট বাল্বের আবিষ্কারক টমাস আলভা এডিসন অন্ধকারকে ভয় পেতেন। এডিসন সম্পর্কিত আরও মজার একটা তথ্য আছে সেটা হল, ১৯৪১ সালে যখন তিনি মারা যান তখন তার শেষ নিঃশ্বাস একটি বোতলে ভরা হয়েছিল। এই কাজটি যিনি করেছিলেন তিনি হলেন ফোর্ড মোটর কোম্পানির মালিক হেনরি ফোর্ড।

গল্প-৯
বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন অনেক আগে একটি হেলিকপ্টার বানানোর বুদ্ধি করেছিলেন যেটা চলবে বন্দুকের বারূদ দিয়ে। কিন্তু তাঁর এই বুদ্ধিটা খুব একটা বুদ্ধিমানের মত ছিল না..!! কারণ এটা বানাতে যেয়ে তিনি তাঁর পুরো ল্যাবরেটরি উঁড়িয়ে দিয়েছিলেন…!!!

গল্প-১০
টমাস আলভা অ্যাডিসনের গ্রামোফোন আবিষ্কার উপলক্ষে এক সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। এক তরুণী তাঁর বক্তৃতায় অ্যাডিসনকে অ-যথাই আক্রমন করে বসলেন, ‘কী এক ঘোড়ার ডিমের যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন, সারাক্ষণ কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর করতেই থাকে। আর তাই নিয়ে এত মাতামাতি! ইতিহাস আপনাকে ক্ষমা করবে না…।’ তরুণী বলেই যাচ্ছেন থামার কোনো লক্ষণ নেই।

অ্যাডিসন চুপ করে শুনে গেলেন। বক্তৃতা দিতে উঠে তিনি বললেন,‘ম্যাডাম, আপনি ভুল করছেন। আসলে সারাক্ষণ কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর করার যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন ঈশ্বর। আমি যেটা আবিষ্কার করেছি সেটি ইচ্ছে মতো থামানো যায়।’

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments