Friday, March 29, 2024
Homeকিশোর গল্পশিল-পাটা (নুহাশ এবং আলাদিনের আশ্চর্য চেরাগ-১) - হুমায়ূন আহমেদ

শিল-পাটা (নুহাশ এবং আলাদিনের আশ্চর্য চেরাগ-১) – হুমায়ূন আহমেদ

নুহাশ এবং আলাদিনের আশ্চর্য চেরাগ - হুমায়ূন আহমেদ

জানালার কাছে কে একজন চেঁচাচ্ছে শিল-পাটা ধার করাইবেন? শিল-পাটা ধার। লোকটার গলার স্বর খুব মিষ্টি, মনে হচ্ছে গান গাচ্ছে। কেমন টেনে টেনে বলছে শিল-পাটা ধা—- র।

নুহাশের বিছানা জানালার পাশে। সে ‘সাত ভূতের কাণ্ড’ নামের একটা বই পড়ছিল। বই ফেলে জানালার শিক ধরে দাঁড়াল। উঁচু গলায় ডাকল, অ্যাই অ্যাই।

লোকটা অবাক হয়ে তাকাল। রোগা একজন মানুষ। পরনে সবুজ রঙের লুঙ্গি, গায়ে ময়লা গেঞ্জি। হাতে ছোট্ট একটা পুঁটলি। লোকটা বিস্মিত হয়ে বলল, শিল-পাটা ধার করাইবেন?

নুহাশ বলল, হ্যাঁ করাব। আপনি আসুন। কাছে আসুন।

লোকটা কাছে আসছে না। মনে হয় নুহাশকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না। নুহাশের বয়স মাত্র নয়। হলি ক্রস স্কুলে ক্লাস ফোরে পড়ে। আজ তাদের স্কুল খোলা। সে স্কুলে যায় নি। গতকালও যায় নি, তার আগের দিনও না। কারণ নুহাশের শরীর ভাল না। গত দুদিন জ্বর ছিল। আজ অবশ্যি জ্বর নেই।

নুহাশ বলল, কাছে আসছেন না কেন? কাছে আসুন।

লোকটা এগিয়ে এল। অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে বলল, শিল-পাটা ধার করাইবেন?

নুহাশের খুব মজা লাগছে। লোকটা তার সঙ্গে কেমন আপনি আপনি করে কথা বলছে। কেউ তাকে আপনি বলে না। ক্লাস ওয়ান, ক্লাস টু-র মেয়েগুলিও না। কিন্তু ওদের তো আপনি বলা উচিত। সে বয়সে তাদের চেয়ে বড়।

শিল-পাটা ধার করাইবেন?

হ্যাঁ করাব।

দশ টেকা লাগব।

দশ টাকাই দেব। আমার কাছে টাকা আছে।

লোকটা মনে হল তার কথা বিশ্বাস করছে না। কেমন করে যেন তাকাচ্ছে। ছোটদের কোন কাজে বিরক্ত হলে বড়রা যে রকম করে তাকায়, সে রকম করে তাকাচ্ছে। সে বোধহয় ভাবছে-এই মেয়েটির টাকা নেই। সে মিথ্যা কথা বলছে। নুহাশের টাকা কিন্তু আছে। জমানো টাকা। হরলিক্সের কাচের বৈয়মে ভরা। প্রথমে সে টাকাগুলি রেখেছিল তার ছোট্ট কাঠের বাক্সটায়। ছোটচাচা বললেন, ও কি নুহাশ! টাকা কেউ এভাবে রাখে? টাকা রাখতে হয় এমনভাবে যেন সবাই দেখতে পায়। টাকা দেখতেও আনন্দ আছে। কাচের বৈয়মে ভরে রাখ।

টাকা দেখলে আনন্দ হয় কেন চাচা?

টাকা হচ্ছে ফুলের মত। কিংবা কে জানে হয়ত ফুলের চেয়েও সুন্দর। এখন বুঝবি না। বড় হয়ে বুঝবি।

ছোটচাচা কথাবার্তাই এ রকম। কিছু বলেই দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলবে, সারগর্ভ বাণী দিলাম। এই বাণীর মর্ম এখন বুঝবি না। বড় হয়ে বুঝবি।

নুহাশ বড় হবার জন্যে অপেক্ষা করছে। বড় হতে আর কতদিন লাগবে কে জানে। এস.এস.সি. পাস করার পর কি বড় হয়? ছোটচাচাকে জিজ্ঞেস করেছিল। চাচা বললেন, কত বছর বয়সে বড় হয় এটা বলা খুব মুশকিল। ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। কেউ কেউ দশ বছরেই বড় হয়ে যায়। আবার কেউ কেউ আছে নব্বই বছরেও হয় না। বয়স যত বাড়ে বুদ্ধিশুদ্ধি তত কমে।

ছোটচাচা কথার কোন আগামাথা নেই। নুহাশের বাবার ধারণা–তাঁর ভাইটির মাথায় ব্রেইন বলে কোন পদার্থ নেই। মাথাটা সাবানের ফেনা দিয়ে ভর্তি। তাও গায়ে-মাখা সাবানের ফেনা না। কাপড়-ধোয়া সাবানের ফেনা। কে জানে হতেও পারে। বাবা তো আর মিথ্যা কথা বলবেন না। জেনেশুনেই বলেছেন। তাছাড়া বাবা হলেন টিচার। টিচাররা মিথ্যা বলতে পারে না। নিয়ম নেই।

লোকটা সরু চোখে তাকিয়ে আছে। এবার সে নিঃশ্বাস ফেলে চলে যেতে ধরল। নুহাশ বলল, ও কি চলে যাচ্ছেন কেন? আপনাকে তো বলেছি। আমার কাছে দশ টাকা আছে। হরলিক্সের কৌটায় ভরা আছে। দাঁড়ান, এনে দিচ্ছি। চকচকে টাকা নেবেন, না ময়লা টাকা নেবেন? আমার কাছে দুটা দশ টাকার নোট আছে–একটা চকচকে নোট, একটা ময়লা।

লোকটা জবাব দিল না। নুহাশ হরলিক্সের কৌটা খুলে চকচকে নোটটাই বের করল। চকচকে নোট পেলে সবাই খুশি হয়। লোকটাও খুশি হবে। লোকটা খুশি হলে হেসে ফেলবে। ছোটচাচা বলেছেন, শোন নুহাশ, তুই যদি সারাদিনে তিনজন মানুষকে হাসাতে পারিস তাহলে ধরে নিতে হবে–তুই অসাধারণ একজন মানুষ।

মাত্র তিনজনকে হাসাতে পারলেই হবে?

হ্যাঁ মাত্র তিনজন। কিংবা একজনকেই তিনবার। সময়সীমা হচ্ছে। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।

তিনজনকে হাসানো তো খুব সহজ চাচা।

মোটেই সহজ না। ভয়ংকর কঠিন কাজ। গল্প বলে হাসাননা নয়। তুই এমন কোন কাজ করবি যা দেখে খুশি হয়ে মানুষটা হাসবে। যত সহজ ভাবছিস তত সহজ না। কঠিন কর্ম। পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে যারা সারাজীবনেও একজনকে খুশি করতে পারে নি।

কাজটা যে কঠিন নুহাশ এখন তা জানে। যেমন আজ সে এখন পর্যন্তু কাউকে হাসাতে পারেনি। সকাল এগারোটা বাজে, দিনের অর্ধেক তো চলেই গেল। নুহাশ জানালা দিয়ে চকচকে নোটটা বের করে রেখেছে, কিন্তু লোকটা হাসছে না। নুহাশ বলল, নিন। নিচ্ছেন না কেন?

ধার করাইবেন?

অবশ্যই করাব।

লোকটা হাত বাড়িয়ে টাকা নিল। নুহাশ বলল, খুব ভাল করে ধার করবেন।

অবশ্যই ভাল কইরা ধার দিমু আম্মা। অবশ্যই দিমু।

শিল-পাটা ধার ব্যাপারটা কি নুহাশ জানে না। ছুরি কাঁচি ধার দেয়া হয় তা সে জানে। সে দেখেছেও–চাকতির মত একটা জিনিস আছে, রিকশা যেভাবে প্যাডেল করা হয়, সেভাবে প্যাডেল করে জিনিসটা ঘুরানো হয়। বঁটি, ছুরি, কাঁচি, চাকতির কাছে ধরলেই আগুনের ফুলকি বের হয়। এর নাম ধার দেয়া।

শিল-পাটা ধার দিতে নুহাশ কখনো দেখে নি। আজ হয়ত দেখা যাবে। নুহাশ বলল, ধার দেবার যন্ত্রপাতি কোথায়?

আছে, যন্ত্রপাতি আছে। এই ব্যাগের মইদ্যে আছে।

বের করুন তো একটু দেখি।

লোকটা কিছু বের করতে পারল না। তার আগেই নুহাশদের কাজের মেয়ে-মুনার-মা ঘরে ঢুকে আকাশ ফাটিয়ে চিৎকার দিল-আফা!

নুহাশ বলল, চিৎকার করছ কেন?

আপনেরে না আম্মা নিষেধ করছে–জানালা দিয়া কারো সাথে কথা বলন যাইব না। নিষেধ করছে না? বলেন করে নাই?

আমি তো অকারণে কথা বলছি না। কাজের কথা বলছি।

আপনার আবার কি কাজের কথা?

ঐ লোকটা খুব ভাল শিল-পাটা ধার করতে পারে। ব্যাগের মধ্যে তার সব যন্ত্রপাতি আছে। সে আমাদের শিল-পাটা ধার করবে।

মুনার মা লোকটার দিকে তাকিয়ে কর্কশ গলায় বলল, যান কইলাম। যান। এই বাড়িত শিল-পাটার কারবারই নাই-মসলা গুঁড়া হয় মেশিনে। যান কইলাম।

লোকটা বিব্রত ভঙ্গিতে বলল, খুকী আম্মা আমারে দশটা টেকা দিছেন।

মুনার-মা হতভম্ব গলায় বলল, ও আল্লা, এর মধ্যে টেকাও দিয়া দিছে। দেন, ফিরত দেন। টেকা ফিরত দেন কইলাম। বাচ্চা মানুষ পাইয়া টেকা নেওন। ছিঃ ছিঃ।

লোকটা মুখ করুণ করে দশ টাকার নোটটা এগিয়ে দিল। নুহাশ বলল, না, টাকা ফেরত দিতে হবে না।

মুনার মা বলল, এইটা কোন কথা হইল আফা? এক টেকা দুই টেকা হইলে একটা বিষয় ছিল। দশ টেকা। দশ টেকা কি সহজ জিনিস? দশ টেকা রোজগার করতে শইলের রক্ত পানি হইয়া যায়।

নুহাশ বলল, আমি বললাম টাকা ফেরত দিতে হবে না। সে জানালা দিয়ে গলা বের করে বলল, এই যে শুনুন। আপনি এখন চলে যান। আরেকদিন আসবেন-তখন আমরা শিল-পাটা ধার করাব। আমি পাশে বসে দেখব।

জ্বি আইচ্ছা আম্মা।

কাজটা কি খুব কঠিন?

কঠিন না, আবার ধরেন সহজও না। নিয়ম-কানুন আছে।

আমি কি শিখতে পারব?

অবশ্যই শিখতে পারবেন। তবে আম্মা এইসব ছোট কাজ আপনে কেন শিখবেন? আপনে শিখবেন-বড় বড় কাজ। ভাল কাজ।

কিন্তু আমি আপনারে শিখায়ে দিব।

কাজটা শেখা হয়ে গেলে আমিও মানুষের শিল-পাটা ধার করে বেড়াব।

লোকটা হেসে ফেলল। বোঝাই যাচ্ছে, সে খুশি হয়ে হাসছে। মুনার মা কঠিন গলায় বলল, জানালার সামনে খাড়াইয়া হাইসেন না। যান কইলাম। না যাইলে অসুবিধা আছে। মুনার-মা খট করে জানালা বন্ধ করে দিল।

নুহাস ক্ষীণ গলায় বলল, জানালা বন্ধ করছ কেন বুয়া?

আম্মা জানালা বন্ধ রাখতে বলছে। আম্মা আপনারে বলছে শুইয়া বিশ্রাম করতে। দুধ আনতেছি, খান। খাইয়া শুইয়া থাকেন।

দুধ খাবেন না।

এই কথা মুখেও আইনেন না আফা। দুধ আনতেছি, এক টান দিয়া দুধ শেষ করন লাগব।

মুনার-মা শুধু দুধ আনল না, একটা পিরিচে কয়েক টুকরা পেঁপেও নিয়ে এল। নুহাশের ধারণা পৃথিবীতে সবচে খারাপ খাবারের মধ্যে এক নম্বর হচ্ছে দুধ, দুনম্বর হল পেঁপে। তিন নম্বরে অনেকগুলি আছে-করলা ভাজি, শাকসবজি। অথচ এগুলি না-কি বেশি বেশি করে খেতে হবে। এগুলির মধ্যে নাকি সবচে বেশি ভিটামিন। খারাপ খারাপ জিনিসগুলির মধ্যে ভিটামিন থাকে আর ভাল জিনিসগুলির মধ্যে কেন থাকে না? এ রকম পচা নিয়ম কেন? আইসক্রিমের ভেতর যদি সবগুলি ভিটামিন থাকত তাহলে কত ভাল হত। সকালে, বিকেলে আর রাতে তিন বাটি আইসক্রিম খেয়ে ফেললে ঝামেলা শেষ।

নুহাশ এক টুকরা পেঁপে মুখে দিল। মনে হচ্ছে বমি হয়ে যাবে। সে দুধের গ্লাসে ছোট্ট করে চুমুক দিল। আজকের দুধটা অন্য দিনের চেয়েও খারাপ, সব ভাসছে। আজ মনে হচ্ছে বমি হবেই হবে। পেটের মধ্যে কেমন যেন করছে। ইশ, সে যদি তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যেতে পারত! বড়দের এসব খেতে হয় না। বড়রা তাদের ইচ্ছেমত খাবার খেতে পারে।

বুয়া।

কি?

তুমি ঐগুলি রেখে যাও। আমি পরে খাব।

না। আপনে আমার সামনে খাইবেন। মানুষে খাওন পায় না, ক্ষিধা পেটে পথে পথে ঘুরে, আর আপনে …।

জানালাটা খুলে দাও বুয়া।

না। আম্মা বইল্যা দিছে জানালা বন থাকব। জানালা কি মানুষ বন্ধ করে রাখার জন্যে বানায়? মানুষ জানালা বানায় খুলে রাখার জন্যে। টিভিতে খবরের সময় ওরা কি গান গায়–সব কটা জানালা খুলে দাও না।

আফা, দুধটা শেষ করেন তো। আফনে খালি ঝামেলা করেন।

বুয়া আমার বমি আসছে।

আসলে আসব। আফনে লম্বা একটা টান দেন।

নুহাশ দুধের গ্লাসে লম্বা টান দিল এবং তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বমি করে মেঝে ভাসিয়ে ফেলল। সে লজ্জিত গলায় বলল, তোমাকে বলেছিলাম না বুয়া আমার বমি হবে। এখন দেখলে তো ঘর কেমন নষ্ট হল। তোমারই তো কষ্ট হবে। পরিষ্কার করতে হবে।

দুপুরে নুহাশ কিছু খেল না। কারণ দুপুরে তার জ্বর এল। বেশ ভাল জ্বর। থার্মোমিটার দিলে একশ দুই কিংবা তিন হবে। বুয়া থার্মোমিটার দেখতে জানে না। নুহাশও জানে না। কিন্তু সে বুঝতে পারছে জ্বর অনেক বেশি। যখন জ্বর অনেক বেশি হয় তখন শরীর হালকা হয়ে যায়। কিন্তু মাথা হয়ে যায় ভারী। মনে হয় মাথাটা বিছানায় পড়ে আছে, আর শরীরটা আকাশে উঠে যাচ্ছে।

মুনার-মা শুকনো গলায় বলল, মাথায় পানি দিমু আফা?

না।

একটু দেই। শইল বেশি গরম ঠেকতাছে।

তাহলে দাও।

একজন ডাক্তার খবর দিয়া আনি আফা। আপনে একলা একলা থাকতে পারবেন?

ডাক্তার লাগবে না। বাবার আসার সময় হয়ে গেছে। সাড়ে তিনটা বাজে।

মুনার-মা ড্রয়ার থেকে থার্মোমিটার বের করে অনেকক্ষণ ঝাঁকিয়ে নুহাশের কাছে নিয়ে এল।

বগলে থামটার দেন দেহি আফা। জ্বরটা দেহি।

জ্বর তো তুমি দেখতে পার না। আমিও পারি না।

আপনে দেন দেহি।

নুহাশ থার্মোমিটার দিল। জ্বর বোধ হয় আরো বাড়ছে। কানের কাছে কেমন ভোঁ-ভোঁ শব্দ হচ্ছে। জ্বর খুব বেড়ে গেলে এমন শব্দ হয়। নুহাশ তার বাবার জন্যে অপেক্ষা করতে লাগল। তার বাবা চারটার ভেতর চলে আসবেন। পাঁচটার সময় নুহাশকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন। এরকম কথা হয়ে আছে। মা রোজ পাঁচটার মধ্যে চলে আসেন। চারটার সময় তাঁর অফিস শেষ হয়। বাসায় আসতে আসতে বাজে পাঁচটা। আজ মার আসতে দেরি হবে। কারণ অফিসের শেষে তিনি তাঁর অফিসের এক কলিগের বাড়িতে যাবেন। রাতে সে বাড়িতে তার খাবার দাওয়াত। কলিগ কি জিনিস নুহাশ জানত না। মাকে জিজ্ঞেস করে জেনেছে। মা বলেছেন, কলিগ হল সহকর্মী এক সঙ্গে যারা কাজ করে তারা সবাই কলিগ। নুহাশ বলেছে, তাহলে ভিখিরীরা সবাই কলিগ, তাই না মা?

উদ্ভট কথা বলবে না নুহাশ। উদ্ভট কথাবার্তা তুমি তোমার বাবার সঙ্গে বলো কিংবা তোমার ছোটচাচার সঙ্গে বলল, আমার সঙ্গে না। ভিখিরী হচ্ছে ভিখিরী। ওরা কাজ করে না।

মাকে নুহাশ অসম্ভব ভালবাসে। রেগে যখন মা তর্ক করেন তখন মাকে তার সবচে বেশি ভাল লাগে। এমিতেই মা খুব ফর্সা। রেগে গেলে গাল লাল টুকটুকে হয়ে যায়। তখন মাকে যা সুন্দর লাগে! বাবা রাগলে কেমন লাগে নুহাশ জানে না। কারণ বাবাকে সে কখনো রাগতে দেখি নি।

মা যখন খুব রেগে বাবার সঙ্গে তর্ক করেন তখনো বাবা হাসেন। হাসতে হাসতে বলেন, কোন লাভ নেই রেবেকা, তুমি আমাকে রাগাতে পারবে না। তুমি যত ইচ্ছা হৈচৈ কর, চেঁচামেচি কর, আমি শুধু মিটিমিটি হাসব। চেষ্টা করে দেখ। যদি সত্যি কোনদিন রাগাতে পার–তাহলে নগদ পাঁচশ টাকা পাবে। নগদ পাঁচশ দেব-সব চকচকে দশ টাকার নোট।

নুহাশের খুব ইচ্ছা করে বাবাকে রাগিয়ে চকচকে দশ টাকার নোটে নগদ পাঁচশ টাকা নিয়ে নেয়। টাকাটা পেলে সে হরলিক্সের কৌটায় রেখে দিত। কিন্তু বাবাকে রাগানো আসলেই মুশকিল-বুয়া একবার বাবার হাতঘড়ি টেবিল থেকে ফেলে ভেঙে ফেলল। বাবা সেই ভাঙা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললেন। মা রাগী গলায় বললেন, তুমি হাসছ কেন? দামী ঘড়ি ভেঙে ফেলেছে এর মধ্যে হাসির এলিমেন্ট কি আছে?

আছে। হাসির একটা এলিমেন্ট এর মধ্যেও আছে।

বল আমাকে, আমি জানতে চাই হাসির এলিমেন্টটা কি?

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখ- ঘণ্টার এবং মিনিটের কাঁটা ঠিক বারোটায়। অর্থাৎ ঘড়িরও বারোটা বেজেছে। হা হা হা …।

বাবা শব্দ করে হাসতে লাগলেন। ভাবটা এরকম যেন এমন মজার ব্যাপার তার জীবনে এর আগে ঘটে নি।

.

ছটা বেজে গেছে। নুহাশের বাবা সিটি কলেজের ইতিহাসের লেকচারার মিনহাজ উদ্দিন এখনো ফেরে নি। মুনার-মা মোড়ের ডিসপেনসারি থেকে এক ডাক্তারকে নিয়ে এসেছে। ডাক্তার সাহেব জ্বর দেখলেন। গম্ভীর গলায় বললেন, একশ তিন পয়েন্ট পাঁচ।

পয়েন্ট পাঁচ ব্যাপারটা কি নুহাশ বুঝতে পারছে না। ডাক্তার সাহেবকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা হচ্ছে। কিন্তু মনে হচ্ছে জিজ্ঞেস করলেই উনি রেগে যাবেন। কিছু কিছু মানুষ আছে প্রশ্ন করলেই রেগে যান। ডাক্তার সাহেবকে সেই রকম মনে হচ্ছে। তা ছাড়া উনি এমিতেই রেগে আছেন। রাগী রাগী গলায় বললেন, এমন অসুস্থ বাচ্চা ফেলে বাবা-মা দুজনই চলে গেলেন। এটা কেমন কথা? নুহাশের ইচ্ছে করছিল, বলে-উনারা যখন যান তখন আমার অসুখ ছিল না। কিন্তু সে কিছু বলল না। ডাক্তার সাহেব যখন বললেন, এখন কেমন লাগছে খুকী? সে বলল, ভাল লাগছে। আসলে তার ভাল লাগছিল না। খুব খারাপ লাগছিল। তবু সে মিথ্যা করে বলল, ভাল লাগছে। মিথ্যা বলাটা ঠিক হয় নি। মিথ্যা বললে পাপ হয়। তবে ছোটচাচা বলেছেন–সব মিথ্যায় পাপ হয় না। কিছু কিছু মিথ্যা আছে যেগুলি শুনলে মানুষ খুশি হয়। সেইসব মিথ্যায় পাপ হয় না। বরং খানিকটা পুণ্য হয়।

ডাক্তার সাহেব গম্ভীর মুখে বললেন, জ্বর কমানোর জন্যে অষুধ দিয়ে গেলাম। সিরাপ। তিন চামচ এখন খাও। ছঘণ্টা পর আবার তিন চামচ খাবে।

জ্বি আচ্ছা।

মাথায় পানি ঢালতে হবে। আর গা স্পঞ্জ করে দিতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত জ্বর একশ না হয়েছে ততক্ষণ পর্যন্ত মাথায় পানি ঢালতে হবে।

নুহাশ বলল, আপনার ভিজিট কত ডাক্তার সাহেব?

ডাক্তার সাহেব চমকে উঠে বললেন, কেন?

আমার কাছে টাকা আছে। হরলিক্সের কৌটায় আছে।

বাইরের কলে গেলে একশ টাকা ভিজিট নেই। তবে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে কমও নেই। তোমার ক্ষেত্রে কম নেব।

কত?

এক টাকা দাও। পুরানো ময়লা নোট না। ঝকঝকে নোট দাও।

নুহাশ এক টাকার একটা নোট বের করল। ডাক্তার সাহেব হেসে ফেললেন। হাসতে হাসতে টাকাটা মানিব্যাগে রাখলেন। আশ্চর্য এত গম্ভীর একজন মানুষ কি সুন্দর করে হেসে ফেলল। তাহলে আজ দিনে নুহাশ কজনকে হাসাতে পারল? দুজনকে। আরো একজন বাকি রয়েছে।

ডাক্তার সাহেব বললেন, খুকী, আমি এখন যাচ্ছি। যা করতে বলছি করবে। আর রাত দশটার ভেতর যদি তোমার বাবা-মা কেউ না আসেন, আমাকে খবর দেবে।

খবর পেয়ে আপনি কি করবেন?

কি করব বুঝতে পারছি না। খুব খারাপ কিছু করে বসতে পারি। আমি আবার ভয়ংকর রাগী মানুষ। কাজের মেয়েটা গেল কোথায়? তাকে বললাম মাথায় পানি ঢালতে। সে করছে কী? এ বাড়ির সবাই দেখি খুব ঢিলাঢালা। এসব তো সহ্য করা যাবে না। ওর নাম কি?

ওর নাম আমি জানি না। ওকে সবাই মুনার-মা ডাকে।

মুনা’স মাদার? ভাগ্য ভাল সে আমার বাড়িতে চাকরি করছে না। আমার বাড়িতে চাকরি করলে এতক্ষণে চাকরি নট হয়ে যেত।

মুনার-মা চায়ের কাপ ট্রেতে সাজিয়ে ঢুকল। সে ডাক্তার সাহেবের জন্যে এতক্ষণ চা বানাচ্ছিল। ডাক্তার সাহেব বিরক্ত মুখে বললেন, তোমাকে বলা হয়েছে রুগীর মাথায় পানি ঢালতে। তুমি বানাচ্ছ চা। তুমি নিতান্ত ভাগ্যবতী যে আমার বাড়িতে চাকরি করছ না। আমার বাড়িতে চাকরি করলে এতক্ষণে তোমার চাকরি নট হয়ে যেত। চা-টাও তো ভাল হয় নি। ঠাণ্ডা হয়ে আছে। এখনো চা বানানো শেখ নি? তাহলে এতদিনে কি শিখেছ?

ডাক্তার সাহেব এক চুমুকে চা শেষ করে উঠে দাঁড়ালেন। গম্ভীর গলায় বললেন, রাত দশটার মধ্যে এই মেয়ের বাবা-মা না ফিরলে তুমি এক দৌড়ে আমাকে খবর দেবে। আমি রাত এগারোটা পর্যন্ত চেম্বারে থাকি। মনে থাকবে?

জ্বি-থাকব।

এখন আর দেরি না করে পানি ঢালা শুরু কর। খুকী আমি যাচ্ছি।

নুহাশ খুব উদ্বেগ নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। যা রাগী ডাক্তার। বাবা মা রাত দশটার মধ্যে না এলে তাঁকে খবর দিতে হবে। তিনি এসে বাবা মার সঙ্গে হয়ত একটা ঝগড়াই বাঁধিয়ে বসবেন।

.

নুহাশের মা রেবেকা এগারোটা বাজার ঠিক পাঁচ মিনিট আগে বাসায় ফিরল। অসুস্থ মেয়েকে ফেলে এতক্ষণ বাইরে থাকতে তার নিজেরই খারাপ লাগছিল। বাধ্য হয়ে থাকতে হয়েছে। ভদ্রলোক খাবারই দিয়েছেন দশটার পর।

রেবেকা সব সময় ঘরে ঢুকেই কিছুক্ষণ মুনার মার সঙ্গে ঝগড়া করে। কেন ঘর পরিষ্কার হয় নি? কেন আলনা অগোছালো? মেঝেতে ধুলা কেন? চায়ের কাপটা কাত হয়ে আছে কেন? চেয়ারের উপর ভেজা তোয়ালে কেন?

আজ রেবেকা ঝগড়া করল না। নুহাশের খুব জ্বর এসেছিল শুনে চুপ করে গেল। নুহাশের ঘরে ঢুকে তার কপালে হাত রাখল। নুহাশ জেগেই ছিল। কিন্তু ভান করল যেন সে গভীর ঘুমে।

কই জ্বর তো নাই।

মুনার-মা বলল, এখন কমছে। মাথাত পানি ঢালছি। তারপরে ডাক্তার সাব অষুধ দিছেন।

ডাক্তার সাব অষুধ দিয়েছেন মানে। ডাক্তার পেলে কোথায়?

আমি খবর দিয়া আনছি আম্মা। পাড়ার ডাক্তার।

আলগা মাতব্বরি কর কেন মুনার-মা? তোমাকে আলগা মাতব্বরি করতে কে বলেছে?

জ্বর খুব বেশি ছিল আম্মা।

পানির মত ঠাণ্ডা গা। বলে জ্বর বেশি ছিল। কাকে না কাকে ডেকে নিয়ে এসছে। আমি লক্ষবার বলেছি–আমরা বাসায় না থাকলে কোন বাইরের লোক যেন ঘরে না ঢুকে। তোমাকে কি এই কথা অসংখ্যবার বলা হয় নি?

জে আম্মা বলছেন–আফার জ্বর দেইখ্যা আমরার মাথা গেল আউলাইয়া।

চট করে মাথা আউলানো ভাল না। বড় ডাক্তার নুহাশের চিকিৎসা করছেন। মাঝখান থেকে অন্য একজন এসে কি-না-কি অষুধ দিয়েছে–

অষুধ ভাল দিছে আম্মা। খাওনের পরে পরে জ্বর কমতির দিকে।

আমার সামনে থেকে যাও তো মুনার-মা। মুখে মুখে কথা বলবে না। নুহাশের বাবা আসে নি?

জ্বে-না।

কোন খবর পাঠায় নি?

জে না।

রেবেকার মুখ পাথরের মত হয়ে গেল। গলার স্বর হল হিমশীতল। নুহাশের মনে হল আজ রাতে বাবা-মার মধ্যে ভয়ংকর একটা ঝগড়া হবে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ঝগড়াটা আজ তাদের বাসায় হবে। অবশ্যি বাবা কিছুই বলবেন না, চুপ করে শুনবেন, মাঝে মাঝে দুএকটা হাসির কথা বলে মাকে হাসাবার চেষ্টা করবেন। বাবার জন্যে নুহাশের খুব খারাপ লাগতে শুরু করল।

.

মিনহাজ উদ্দিন এক হাতে দুটা আনারস ঝুলিয়ে রাত সাড়ে এগারোটায় শিস দিতে দিতে বাড়ি ফিরল। রেবেকা যে কাপড় পরে বাইরে গিয়েছিল সেই কাপড় এখনো বদলায় নি। হাত-মুখ ধোয়নি। চোখ-মুখ কঠিন করে সে। স্বামীর জন্যে অপেক্ষা করছে। কলিং বেল বাজতেই সে নিজেই উঠে দরজা খুলল। মিনহাজ আনন্দিত গলায় বলল, ওরে বাপরে, আজ দেখি তোমাকে পরীর মত লাগছে। সবুজ শাড়িটা তো আগে কখনো দেখি নি। খুব সুন্দর।

রেবেকা কিছু বলল না। মিনহাজ আনারস দুটি রাখতে রাখতে বলল, আসল জলডুবি। মধুর চেয়ে এগারো গুণ বেশি মিষ্টি। এই আনারস খাবার পর রসগোল্লা খেলে পানসে লাগবে।

রেবেকা বলল, তোমার সঙ্গে কথা আছে। বস এখানে।

মিনহাজ হাসিমুখে বলল, কথা বলার ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে ঝগড়া করবে। দূরবর্তী বিপদ সংকেত পাচ্ছি।

রসিকতা করবে না। আমার সামনে বস, আমি কি বলছি মন দিয়ে শোন।

যা বলার দয়া করে আধঘণ্টা পর বল। আধঘণ্টা পরে বললে কি হবে জান? এখন বাজে সাড়ে এগারোটা। আধঘণ্টা পর বারোটা বাজবে নতুন দিন শুরু হবে। এবং আমি বলতে পারব যে একটা পুরো দিন আমরা ঝগড়া ছাড়া পার করেছি।

নুহাশকে আজ বিকেল পাঁচটায় ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবার কথা ছিল না?

হ্যাঁ, ছিল।

নিয়ে গিয়েছিলে?

মনে হয় নিয়ে যাই নি।

কেন?

বলতে চাচ্ছি না।

কেন বলতে চাচ্ছ না?

নুহাশকে ডাক্তারের কাছে না নিয়ে যাবার কারণ বলার সঙ্গে সঙ্গে তুমি খুব লজ্জা পাবে। এই জন্যে বলতে চাচ্ছি না।

কারণটা বল।

রেবেকা, না বললেই ভাল হয়। যদি বলি তাহলে তোমার খুব খারাপ লাগবে। এই ভেবে খারাপ লাগবে যে কেন সব না জেনেই রাগ করলাম। যাই হোক, জানতে চাচ্ছ যখন বলি–আমি বদরুলের মাকে দেখতে গিয়েছিলাম। তোমাকে তো আগেই বলা হয়েছে বদরুলের মা গত একমাস ধরে মরার চেষ্টা করছেন। পারছেন না। আজরাইল এর মধ্যে চার-পাঁচ বার এসেছে-মুখ বেজার করে ফিরে গেছে। আজরাইলের মত ক্ষমতাধর একজন ফেরেশতাকে যদি নব্বই বছরের একজন বৃদ্ধাকে নেবার জন্যে এতবার আসেত হয় তাহলে …

তুমি আসল কথা বল। রসিকতা ভাল লাগছে না।

ও আচ্ছা। আসল কথা। আসল কথা হল–আমার যাবার কথা পাঁচটায়। আমি ঠিক সাড়ে চারটার সময় বললাম, বদরুল, দোস্ত আমি উঠি। মেয়েকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।

বদরুল বলল, কোন্ ডাক্তার?

আমি বললাম, চাইল্ড স্পেশালিস্ট ডাক্তার রহমান। বদরুল বলল, টেলিফোন করে যা। নয়ত দু তিন ঘণ্টা বসে থাকতে হবে। ব্যাটার কাছে রোজ দু তিনশ রুগী যায়। আমি টেলিফোন করলাম। ডাক্তারের অ্যাসিসটেন্ট বলল, আজ ডাক্তার সাহেব আসবেন না। তাঁর কি যেন জরুরী কাজ পড়েছে মেডিকেল এসোসিয়েশনে। কাজেই আমি নুহাশকে নিয়ে যাই নি। তারপরেও অবশ্যি দেরি করে আসার জন্যে তুমি আমার উপর রাগ করতে পার। এখন দয়া করে আমাকে ভাত দাও। খিদেয় প্রাণ যাচ্ছে।

রেবেকা উঠে চলে গেল। মিনহাজ ঢুকল নুহাশের ঘরে। পাঞ্জাবী খুলতে খুলতে বলল, নুহাশ, মা মণি, তুমি যে ঘুমের ভান করে পড়ে আছ তা আমি বুঝতে পারছি। দয়া করে চোখ মেলে তাকাও এবং ছোট্ট একটা হাসি দাও।

নুহাশ বাবার দিকে তাকিয়ে হাসল।

মিনহাজ গলার স্বর নিচু করে বলল, সমূহ বিপদ থেকে বাঁচার জন্যে তোমার মার কাছে মিথ্যে কথা বলেছি।

তুমি টেলিফোন কর নি বাবা?

টেলিফোন কোত্থেকে করব? আমি কি ঐ ব্যাটার টেলিফোন নাম্বার জানি নাকি? ডাক্তারের ব্যাপারটা পুরোপুরি ভুলে গিয়েছিলাম। এখন কেন জানি আমার আশংকা হচ্ছে মিথ্যাটা ধরা পড়ে যাবে। কাল যদি তোর মা ডাক্তারের কাছে যেতে চায় তাহলে সমস্যা হবে।

তুমি আমাকে নিয়ে যাও।

আমিই তো নিয়ে যাব। তোর মাকে কোন মতেই ডাক্তারের কাছে। যেতে দেয়া যাবে না।

.

মিনহাজ ভাত খেতে খেতে বলল, ডাক্তার সাহেবের কাছে আমি অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে রেখেছি। কাল ছটার সময় আমি নুহাশকে নিয়ে যাব। এই ব্যাপারে তোমাকে আর চিন্তা করতে হবে না। আমার উপর ছেড়ে দাও।

রেবেকা বলল, আমি তোমার সঙ্গে ঝগড়া করতে চাই না। ঝগড়া করতে করতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। ডাক্তার রহমানের সঙ্গে তুমি টেলিফোনে কোন কথা বল নি। আমি বলেছিলাম। নুহাশের কি হয়েছে জানার জন্যে টেলিফোন করেছিলাম। উনি বললেন, তুমি নুহাশকে নিয়ে যাও নি।

মিনহাজ অন্যদিকে তাকিয়ে কাঁচামরিচে কামড় দিল।

রেবেকা বলর, কোথায় গিয়েছিলে?

জোছনা দেখতে গিয়েছিলাম।

জোছনা দেখতে?

হু। বদরুল বলল, আজ পূর্ণিমা আছে- চল শালবনে গিয়ে পূর্ণিমা দেখে আসি। ও একটা জীপও জোগাড় করেছিল।

পূর্ণিমা দেখেছ?

হু।

ভাল লেগেছে?

হু।

খুব ভাল লাগল?

হ্যাঁ খুব ভাল লাগল। দেখার মত দৃশ্য। অরণ্যের সঙ্গে জোছনার খুব ভাল সম্পর্ক আছে। আমাদের উচিত পূর্ণিমার রাতগুলি বনে কাটানো। এই জন্যেই রবীন্দ্রনাথ বলেছেন–আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে।

রেবেকা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, পূর্ণিমা দেখতে তোমার আর অসুবিধা করব না। তুমি মনের সমস্ত মাধুরী মিশিয়ে পূর্ণিমা দেখতে পারবে। হাঁ করে সারারাত চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারবে। কারণ আমি তোমার সঙ্গে বাস করব না।

তার মানে?

তুমি থাকবে তোমার পূর্ণিমা নিয়ে, তোমার বন্ধুবান্ধব নিয়ে। আমি থাকব নুহাশকে নিয়ে।

আমি কিছু বুঝতে পারছি না।

বুঝতে না-পারার তো কিছু নেই। আমি যা বলেছি সহজ বাংলায় বলেছি। রেবেকা উঠে চলে গেল। মিনহাজ মনের ভুলে কচ করে একটা আস্ত কাঁচামরিচ চাবিয়ে ফেলল।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments