Thursday, April 25, 2024
Homeঅবাক বিশ্বট্রয় নগরী 'হেলেন অব ট্রয়' এর ইতিকথা !

ট্রয় নগরী ‘হেলেন অব ট্রয়’ এর ইতিকথা !

হেলেন অব ট্রয়

গ্রিক পুরাকথার অন্যতম গুরুত্বপূর্ন অংশ – ট্রয় যুদ্ধ ও ট্রয় শহর ধ্বংস হওয়ার কাহিনী।সেই যুদ্ধ সম্পর্কে আমরা অনেকেই কম বেশি জানি কিন্তু এর পেছনের লোমহর্ষক কাহিনীটি অনেকেরই অজানা। তাই পাঠকদের জন্য আজ বিশেষ আয়োজন- ট্রয়ের যুদ্ধ।

ট্রয় নগরীর অবস্থান

একটি কিংবদন্তির শহর যাকে কেন্দ্র করে বিখ্যাত ট্রয়ের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এই শহর এবং সংশ্লিষ্ট যুদ্ধের বর্ণনা প্রাচীন গ্রিসের অনেক মহাকাব্যেই দেখা যায়। বর্তমানে ট্রয় একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের নাম।

হোমারের ইলিয়াডে যে ট্রয়ের উল্লেখ রয়েছে সেটিকেই এখন ট্রয় নামে আখ্যায়িত করা হয়। এর অবস্থান আনাতোলিয়া অঞ্চলের হিসারলিক নামক স্থানে।

‘হেলেন অব ট্রয়’ পরিচিতি

প্রাচীন গ্রীকের পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে জিউস এবং লেডারের কন্যা ছিলেন হেলেন। তার বিবাহ হয় স্পার্টার রাজা মেনিলাউসের সাথে। ক্যাস্টর, পলিডিউসিস এবং ক্লিটেমনেসট্রা ছিল তার ভাই-বোন। ট্রয়ের রাজপুত্র প্যারিসের সাথে তিনি স্পার্টা থেকে পালিয়ে গেলে মেনিলাউস যুদ্ধ ঘোষণা করেন। মাত্র একজন নারীকে উদ্ধার করতে এজিলান সাগর পাড়ি দিয়েছিলো এক হাজার জাহাজ।

ট্রয় নগরীর হেলেনের ছবি

এমনি রূপ এবং গরিমা ছিল তার। তবে এই সৌন্দর্যই তার জীবনে পথের কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। তার কারনে হাজার হাজার যোদ্ধা ট্রয়ের রণক্ষেত্রে প্রান দিল এবং ধ্বংসের মুখে চলে গেল পুরো সাম্রাজ্য। অনেকে মনে করেন হেলেন নামে কেউ ছিলেনই না। দেবী আফ্রোদিতিই হেলেন নাম নিয়ে মর্ত্যে নেমে এসেছিলেন। তারপর আশ্রয় নিয়েছিলেন স্পার্টার রাজা টিন্ডারাসের প্রাসাদে।

১৮৩৩ এবং ১৮৪১ সালে হেলেনের দুটি প্রাচীন মন্দির উদ্ধার হয়েছে। এর থেকে একটি কথা স্পষ্ট যে স্পার্টার অনেক মানুষ হেলেনকে দেবী হিসাবে পুজা করতো। যদিও জিউস কন্যা হিসাবেও অনেক জায়গায়ে তার বর্ননা পাওয়া যায়। তবে প্রত্নতাত্বিকদের মতে হেলেন হলেন উর্বরতার দেবী। গ্রিক ভাষায় ট্রয়কে বলা হয় ত্রাইয়া বা ইলিয়ন। প্রাচীন গ্রিসের অনেক মহাকাব্যেই ট্রয়ের উপস্থিতি দেখা যায়।

হোমারের দুই মহাকাব্যর একটি ইলিয়াড। ইলিয়াডের অনেক খানি অংশ জুড়ে আছে ট্রয়। হাইনরিথ স্লাইন্ম্যান নামে এক জার্মানীর ব্যাবসায়ী শেষ পর্যন্ত আবিস্কার করে এই ট্রয় নগরী। তুরস্কের আনাতোলিয়া অঞ্চলের হিসারলিক নামক জায়গায এটি অবস্থিত। স্থানীয় ভাষাতে এই জায়গাতী ত্রুভা নামে খ্যাত। বর্তমানের হিসারলিক শহর প্রাচীন কালে ছিল ট্রয় নগরী।

ট্রয়ের যুদ্ধ ইতিহাস

প্রাচীন এশিয়া মাইনরে (বর্তমানে তুরস্কের আনাতোলিয়া রাজ্য) ছিল ট্রয় নামক এক নগরী। এই ঐতিহাসিক ট্রয় নগরীর রাজা ছিলেন প্রিয়াম এবং রাণীর নাম ছিলেন হেকবা। তাদের আদরের পুত্রের নাম ছিল প্যারিস।

এই প্যারিসই ছিল মুলত ট্রয় যুদ্ধের পেছনে মুল হোতা। রাজপুত্র প্যারিস, গ্রিসের স্পার্টা রাজ্যের রাজা মেনেলাস এর স্ত্রী হেলেন এর প্রেমে পড়ে যান।

ট্রয়ের যুদ্ধ ইতিহাস

এরপর তিনি হেলেনকে নিয়ে ট্রয়ে পালিয়ে আসেন। এর ফলে শুরু হয় স্পার্টা আর ট্রয়ের মধ্যকার সেই যুদ্ধ! এই কাহিনি এতোটাই চমকপ্রদ এবং রোমাঞ্চকর যে, গ্রিক সাহিত্য এবং রোমান সাহিত্যের একটা উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে ট্রয়ের যুদ্ধ।

আপনারা নিশ্চয়ই মহাকবি হোমারের নাম শুনেছে। তার দুটো মহাকাব্য ইলিয়াড এবং ওডিসির কারনে এই রোমান্টিক ট্র্যাজেডি অমর হয়ে আছে।

এরপর আরও অনেক বিখ্যাত কবি ট্রয়ের যুদ্ধ নিয়ে লিখেছেন। এদের মদ্ধে আছেন গ্রিক কবি হেরোডোটাস, সোফোক্লেস এবং রোমান কবি ভার্জিল আর ওভিড।

তাদের এসব লেখার মধ্যমেই আমরা জানতে পারি হেলেন, প্যারিস, অ্যাকিলিস, হেক্টর, আগামেমনন, অডিসিয়াস এবং অ্যাজাক্সের মত ট্রয়ের যুদ্ধের সাথে জড়িত অন্যান্য চরিত্রগুলো সম্পর্কে কাহিনি।

আগেই বলেছি ট্রয়ের রাজপুত্র প্যারিস আর স্পার্টা রাজ্যের রানি হেলেনের মধ্যকার প্রেমের কথা। কিন্তু প্রশ্ন হলো- প্রেম না হয় হয়েছে, কিন্তু কীভাবে প্যারিস হেলেনকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার প্ররোচনা পেল? রাজার প্রাসাদ থেকে একজন রাণীকে নিয়ে পালানো তো চাট্টিখানি কথা নয়!

তাছাড়া এটা কোনো জোরপূর্বক অপহরণের ঘটনাও ছিল না। রানি নিজেই প্যারিসের হাত ধরে প্রাসাদ থেকে পালিয়ে গেলেন।

ট্রয় যুদ্ধের সঠিক কারন নিয়ে বিভিন্ন মত চালু রয়েছে। অনেকেই বলে থাকেন, গ্রিক মিথোলজিতে বলা হয়েছে – পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা বিপজ্জনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছিলো। ফলে দেবতাদের প্রধান যিউস চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি চাচ্ছিলেন জনসংখ্যা কমিয়ে আনতে। আর এজন্যই একটি যুদ্ধ সৃষ্টি করার পরিকল্পনা তার মাথায় আসে। সেখান থেকেই ট্রয় যুদ্ধের সূত্রপাত।

তবে, হোমারের লেখায় মূলত ফুটে উঠেছে – প্যারিস আর হেলেন এর ভালোবাসার কাহিনী। হেলেন প্যারিসকে এতোটাই ভালোবেসে ফেলেছিল যে স্বামী মেনেলাসকে আর স্পার্টার রাজপ্রাসাদ ছেড়ে যেতে বাঁধেনি তার। তাই তো সে ট্রয় নগরীর রাজপুত্রের সাথে পালিয়ে যায়।

কিন্তু এমন শক্তিশালী এক রাজ্যের রাণী আরেকজনের হাত ধরে পালিয়ে যাবে, আর রাজা ঘরে বসে থাকবে? তা তো হয় না! তাই মেনেলাস তার সমস্ত শক্তি নিয়ে ট্রয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে পরলেন। প্রায় দশ বছর স্থায়ী ছিল সেই যুদ্ধ। এর ফলস্বরূপ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল ঐতিহাসিক ট্রয় নগরী!

ট্রয় যুদ্ধের কারন

দেবী আফ্রোদিতি দেওয়া বিশেষ বর হিসেবে প্যারিস পেল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরীর ভালোবাসা। আর সে সময় পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মানবী ছিলেন হেলেন, যার রুপের প্রশংসায় সবাই পঞ্চমুখ ছিল। কিন্তু হেলেন তখন ছিলেন স্পার্টার রাজা মেনেলাসের স্ত্রী।

অন্যের স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও আফ্রোদিতির দেওয়া বরের কারনে হেলেন তার মনপ্রাণ সঁপে দিলেন ট্রয়ের রাজপূত্র প্যারিসকে। দুজনের মধ্যে গভীর ভালোবাসা হয়ে গেল। এক রাতের আধারে দুজনে হাত ধরে পালিয়ে চলে এলেন ট্রয় শহরে।

এদিকে রানি হেলেন পালিয়ে যাওয়ার পরে স্পার্টার রাজা মেনেলাসের বুকে জ্বলছিল ক্রোধের আগুন। মেনেলাস তার ভাই আগামেমননকে আহ্বান করলেন তার পক্ষে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য।

আগামেনন ছিলেন পার্শ্ববর্তী মাইসিন রাজ্যের রাজা। ভাইয়ের স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার জন্য আগামেমনন তার বিশাল অ্যাশিয়ান্স দল নিয়ে রওনা দিলেন ট্রয়ের উদ্দেশ্যে।

তারপর ট্রয় নগরের সম্মুখে শুরু হল এক ভয়ংকর যুদ্ধ। প্রায় দশ বছর ধরে চলল এই যুদ্ধ! আগামেমননের সৈন্যবাহিনী চারদিক দিয়ে ট্রয় নগরীকে ঘিরে রাখলো। এদিকে ট্রয়ের বাসিন্দারা কিছুতেই হেলেনকে ফেরত দিতে রাজি হল না। তারা শক্ত প্রতিরোধ ধরে রাখলো।

রক্তক্ষয়ী সেই যুদ্ধে মারা গেলেন অ্যাশিয়ান্স বীর অ্যাকিলিস, অ্যাজাক্স এবং ট্রোজান বীর প্যারিস ও তার ভাই হেক্টর।

কিন্তু দুই পক্ষ ছিল শক্তিতে সমান ফলে যুদ্ধে কারো জয় বা পরাজয় হল না। এর পরই ঘটলো সেই ট্রোজান হর্স নামক বিশাল আকৃতির কাঠের ঘোড়ার ঘটনা।

দশ বছরের চেষ্টার পরও যুদ্ধে জয়লাভ করতে না পেরে গ্রিক যোদ্ধারা এক চাতুরির আশ্রয় নিল। এই চাতুরির নামই হচ্ছে ট্রোজান হর্স। তারা সবার অজান্তে কালো রঙের বিশাল আকৃতির এক ঘোড়া এনে ট্রয় নগরির সম্মুখে রেখে গেল। ট্রয়ের মানুষজন মনে করলো স্পারটানরা যুদ্ধে হার মেনে নিয়েছে আর তাদের জন্য উপহার হিসেবে এই ঘোড়া রেখে গেছে। তারা কিছু না বুঝে এই ঘোড়াটিকে ট্রয় নগরীর ভেতরে নিয়ে আসলো। আর এটাই ছিল তাদের সবচেয়ে বড় ভুল।

মাঝরাতে যখন ট্রয়ের বাসিন্দারা ঘুমিয়ে পড়েছে। তখন এই কাঠের ঘোড়া খুলে গেল। আর ভেতর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে বেরিয়ে এলো স্পারটান যোদ্ধারা। নগরে ঢুকার পর অ্যাশিয়ান্সরা সামনে যাকে পেলো, তাকেই জবাই করা শুরু করলো। শুধুমাত্র কয়েকজন শিশু আর মহিলা রক্ষা পেলো, যাদেরকে পরে দাসদাসী হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিলো। এভাবেই ধ্বংস হয়ে গেলো ঐতিহ্যবাহী ট্রয় নগরী।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments