Friday, April 26, 2024
Homeথ্রিলার গল্পভৌতিক গল্পকবরস্থানের মাঠে একরাতে - রোদেলা রিদা

কবরস্থানের মাঠে একরাতে – রোদেলা রিদা

কবরস্থানের মাঠে একরাতে - রোদেলা রিদা

একবার আমার বাসায় আমার বান্ধবীরা এসেছিল। রাপা, সাফা, রামিশা, অর্চি,সামিয়া,সাবরিনা, মুনতাহা আর লুরি থুক্কু নুরি। আমরা একসাথে হওয়া মানে গল্পেরঝুড়ি! আমরা একসাথে হইলেই অনেক মজা করি, হোরার মুভি দেখি,এডভেঞ্চার করি! প্রতিবারের মতো এবারও আমরা হোরার মুভি দেখলাম। কিন্তু এবার আর এডভেঞ্চার কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না! পরে অনেক ভাবতে ভাবতে একটা ভুতুড়ে এডভেঞ্চার এর বুদ্ধি আসলো! বুদ্ধিটা বের করলো আমাদের বান্ধবীদের মধ্যে সবচেয়ে চঞ্চল সাফা। এডভেঞ্চার হলো কবরস্থানের মাঠে একরাত!

আমার বাসার সামনের মাঠের কাছে একটা কবরস্থান আছে। আমার বাসার বেলকুনি থেকেই সেটা দেখা যায়! অবশ্য ভয় লাগে না পাশে মসজিদ আর মাদ্রাসা আছে।তো ঠিক হলো আজকে মাগরিবের নামাজের পরে কবরস্থানের মাঠে যাবে। সেখানে সারারাত থাকবো সকালে চলে আসবো। রাতে আমরা তাঁবু টাঙাবো, সেখানে সারারাত কাটাবো। অবশ্য সেদিনই একজন মারা গিয়েছে ওনাকে এই কবরস্থানেই কবর দেয়া হয়েছে। আমাদের মধ্যে মুনতাহা খুব ভিতু টাইপের মেয়ে। খুব সহজ সরল। ও এসব করতে চাচ্ছিল না। ও বলছিল “কি রে এসব করার কি দরকার! কি থেকে কি হয়ে যাবে! দরকার নাই! যাবো না রে!” আমরা সবাই হেসে উঠলাম।

নুরিঃ আরে ভিতুর ডিম কিছু হবে না! একটাই তো রাত!

সামিয়াঃ হুমম… এ থেকে এটাও প্রমাণ হয়ে যাবে আমরা কে কতোটা সাহসী!

সাবরিনাঃ হ্যাঁ রে…. খুব মজা হবে!

রাপাঃ আচ্ছা মোবাইল তো যাবে??

হাসতে হাসতে আমিঃ হ্যাঁ, যাবে।

রাপাঃ আহ! তাহলে আমার আর কিছু লাগবে না। কবরস্থানের সাথে সেলফি তুলে ওয়াটসএপ এ স্টাটাস দিবো ” কবরস্থানের মাঠে একরাত। “

রামিশাঃ হ্যাঁ হ্যাঁ…. তারপর কবর খুঁড়ে একটা কঙ্কাল বের করে তার সাথে সেলফি তুলে স্টাটাস দিস “কবরস্থানের কঙ্কালের সাথে একরাত!” (হি হি হি)

অর্চিঃ আরে.. ও তো নিজেই কঙ্কাল! ও কি কঙ্কালের সাথে সেলফি তুলবে! হা হা হা

রামিশাঃ ও হ্যাঁ তো! তাহলে স্টাটাস দিস ” কবরস্থানে আমরা দুই কঙ্কাল!” হি হি হি

রাপাঃ -_-

সবাইঃ হা হা হা…………

অনেক জেদাজেদির পর আম্মুকে রাজি করালাম। আলহামদুলিল্লাহ বাবা কাজে ঢাকায় গিয়েছে, বাবা থাকলে কিছুই হতো না! আম্মু একটু সহজ সরল কিনা! তাই আর ভেজাল হলো না! সাথে লাহিন যেতে চাইলো কিন্তু ও ছোটো তাই ওকে নিলাম না। কিন্তু ও জেদ নিয়ে বসে ছিল তাই ওকে নিতে হলো। আপু প্রথমেই বলে দিয়েছে ও এসবে নাই! (আসল কথা ভয়ে)। তাছাড়াও আমরা ওকে সাথে নিতামও না, ওর সামনে পরীক্ষা, পরে বলবে আমাদের জন্য ওর পড়াশোনা হয়নি আর ও আমাদের থেকে বড় , আমাদের সাথে গেলে সব প্লান ফ্লপ হওয়ার সম্ভবনা আছে!

মাগরিবের আজান পড়লো, আমরা নামাজ পড়ে মাঠটাতে চলে আসলাম। সাথে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস নিলাম। লাহিন আর সাথে আসলো না। প্রথমে খুব সাহস দেখাচ্ছিল, কিন্তু যেই মাগরিবের পর অন্ধকার পড়লো অমনি ওর সব সাহস ফুটোত করে উড়ে গেল। ভালোই হইছে বাচ্চা মানুষ! পরে কিছু হইলে কেলেংকারী হয়ে যাবে!

বেশি অন্ধকার হওয়ার আগেই আমরা তাঁবু টাঙ্গায় নিলাম। কবরস্থানটার একটু দূরে! শরদের রাত। রাত বড় হয়েছে দেখতে দেখতেই চারদিক বেশ অন্ধকার হয়ে গেল। রাতের পোকাগুলোর ডাক শোনা যাচ্ছে! ঝিঁ ঝিঁ পোকা ডাকছে। আমরা ক্যামফায়ার জ্বালায় গোল করে তাঁবুর সামনে বসে গল্প করতে থাকলাম। এই মাঠে অনেক গাছপালা ঝোপঝাড় আছে। মনে হচ্ছিল আমরা একটা জঙ্গলে! খুবই রোমাঞ্চকর লাগছিল! পিছনে একটা গ্রামও আছে! কবরস্থানের পাশে একটু দূরে মসজিদ আর মাদ্রাসা আছে৷ মাদ্রাসার ছাত্রদের কুরআন পাঠের সুরধ্বনি আমরা শুনতে পাচ্ছিলাম। আমাদের তখন কোনো ভয়ই করছিল না। আম্মু আমাদের জন্য রাতের খাবার রান্না করে টিফিন করে দিয়েছে, আমরা রাতের খাবার খেয়ে নিলাম। এরপর আমরা অনেক গল্প করলাম, খেললাম, সেলফি তুললাম। রাপা কিন্তু ঠিকই কবরস্থানের সাথে সেলফি তুলে ওয়াটসএপ এ স্টাটাস দেয় “কবরস্থানের মাঠে একরাত “!
তখন সাফা বলে,

সাফাঃ যা এখন তোর সাথী কঙ্কালের সাথে গিয়ে সেলফি তুল! যা!

রাপাঃ সাফার বাচ্চির মা! তোকে মারে কঙ্কাল বানায় দিবো!

সবাইঃ হা.. হা..হা….

এভাবেই না না খুনসুটি, গল্পে আমাদের সময় কাটছিল। আমরা এখনো কোনে ভয়ের সম্মুখীন হইনি চাদঁনী রাত। চারদিকের চাদেঁর আলো আর জোনাকি পোকার খেলা। আহ! যা লাগছিল!
প্রায় ১০টা নাগাদ, তখন আর মাদ্রাসা ছাত্রদের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে না। সম্ভবত তাদের এখন ঘুমানোর সময়। চারদিক কেমন জানি নিশ্চুপ হয়ে আছে। শুধু পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। আমাদের এবার মশা কামড়ানো শুরু করেছে। তাবু্ঁতে ঢুকলাম। চাঁদটাও মেঘে ঢেকে গেল আর আলো আসছে না চাঁদের।

মুনতাহাঃ এই তোদের ভয় করছে না?

আমিঃ কেন? তোর করছে??

মুনতাহঃ হুমম একটু একটু!

নুরিঃ আরে পাগলি ভয়ের কি আছে?

সামিয়াঃ আরে ভয় কেন পাচ্ছিস? দেখ আমরা কতোজন! কবরস্থান থেকে ভূত উঠে আসলে ভূতের মাথা ফাটায় দিবো!

অর্চিঃ মাথা ফাটায় কি হবে?

সামিয়াঃ ভূত মরে ভূত হবে! (হি হি হি)

রাপাঃ না না ভূত মরে আরো ভয়ংকর আত্মা হবে! সেটা এসে তার প্রতিশোধ নিবে মুনতাহার থেকে! হি হি হি!

মুনতাহাঃ হইছে! ভূত আসে না তোকে ধরবে!!

এরই মধ্যে সাফা মুনতাহার পিছনে যেয়ে ভূতের মতো চিল্লালো! মুনতাহার সাথে সাথে আমরা সবাইও চমকিয়ে উঠলাম! সবাই একে অপরকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার দিয়ে উঠলাম! আর মুনতাহা তো কান্না করে প্রায়! আর সাফা -_-!! আমাদের অবস্থা দেখে খুব মজা পাইছে! হাসি থামে না ওর! -_-। তারপর আমরা সবাই মিলে দিলাম ওরে গণধোলাই!

সাবরিনাঃ অনেক রাত হয়ে গেছে রে চল ঘুমায় পড়ি। এখন চোখ বন্ধ করবো একেবারে সকালে চোখ খুলবো!

আমিঃ হুমম.. আর ভয়ের কিছু থাকবে না!

আমরা সবাই শুয়ে পড়লাম। চার্জার লাইটটা বন্ধ করে দিলাম।

হঠাৎ করেই আমার ঘুম ভাঙ্গে যায়, দেখি চার্জার লাইট জ্বালানো। উঠে বসে দেখি নুরি উঠেছে। আমি নুরির কাছে যেয়ে জিগেস করি

আমিঃ কিরে নুরি ঘুমাস নাই??

নুরিঃ ঘুমাইছিলাম, আম্মু ফোন দিয়েছিলো, আম্মুর সাথে কথা বললাম।

আমিঃ ওহ।

পিছন ঘুরে দেখি রাপাও ঘুৃমায় নাই! ফোন টিপছে! ওর ওটাই কাজ! ১টা ২টা পর্যন্ত ফোনে পড়ে থাকে!

আমিঃ কিরে কঙ্কাল ঘুমাস নাই??

রাপাঃ ঘুম ধরে না রে!

এমন সময় তাঁবুর বাহিরে কি যেন একটা ধুপ করে পড়ার শব্দ হলো! আমরা তিনজন চমকে উঠলাম!
রাপা লাফ দিয়ে উঠে বলল, কি পড়ল??

নুরিঃ জানি না।

আমিঃ মনে হয় বাহিরে কিছু পড়ল! গাছপালা হবে হয়তো!

নুরিঃ এতোরাতে গাছপালা কিভাবে পড়বে? বাতাসও তো নাই যে বাতাসের চাপে পড়বে!

আমিঃ কি জানি!

রাপাঃ একবার যেয়ে দেখবি?

আমিঃ বাহিরে যাবি? তাও ফির এখন??

রাপাঃunsure

নুরিঃ চল যাই!

রাপাঃ হুমমম… তাঁবু থেকে শুধু উঁকি মারে দেখি কি পড়লো!

আমিঃ আচ্ছা তা!

গায়ে একটা চাদর পলটায় আমরা একটা টর্চ লাইট নিয়ে বাহিরে এলাম। দেখি আমাদের ক্যামফায়ারটা একদমই নিভে গিয়েছে কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি তো এভাবে নেভার কথা না! একদম সব ছাই হয়ে গেয়িছে একটা আগুনের কণাও নাই! অদ্ভুত ব্যপার! ভাবলাম কূয়াশার জন্য হয়তো! চারিপাশে আলো মারে দেখি,, কই কিছু তো পড়ে নাই! শিয়াল ডেকে উঠলো!
নুরি আর রাপা আমাকে জড়ায় ধরলো দুই পাশ দিয়ে! আমি মাঝখানে স্যান্ডউইচ!

নুরিঃ এই শিয়াল আসলো কই থেকে??

আমিঃ আরে… এটা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা না! ক্যান্টনমেন্ট থেকে হয়তো আসছে!

রাপাঃ এ তাঁবুতে চল!

আমিঃ হ্যাঁ চল!

আমরা তাঁবুতে ফিরতে যাচ্ছিলাম কিন্তু এরই মাঝে একটা আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে! পিছন ঘুরে দেখি আমরা তাঁবু থেকে বেশ দূরে চলে এসেছি কিন্তু কিভাবে? আমরা তো তাঁবু থেকে মাত্র ছয় সাত পা আগালাম উঁকি মারে দেখার জন্য যে কি পড়ল! তাতেই এতো দূরে চলে আসলাম! স্ট্রেন্জ!
কবরস্থানের একটু কাছে দাঁড়িয়ে আমরা। এবার আমাদের প্রচন্ড ভয় লাগা শুরু করেছে। তাঁবুর দিকে হাঁটতে লাগলাম! কেমন একটা মরা মরা গন্ধ পাচ্ছি! কিসের গন্ধ? কই থেকে আসতেছে? রাপা আর নুরিও ঠিক একি গন্ধ পাচ্ছে!

রাপাঃ ইইই.. কিসের জানি গন্ধ আসতেছে!

নুরিঃ হুমমম!!

আমিঃ হ্যাঁ! মনে হয় কবরস্থান থেকে! আজকেই তো একজনকে কবর দেয়া হয়েছে!

রাপাঃ তাড়াতাড়ি চল তাঁবুতে!

আমরা তাঁবুর দিকে যেতে লাগলাম এবার একটা ভারী বাতাস অনুভব করলাম। বাতাসটা ভারী হলেও বেশ শিতল! চারদিক ধীরে ধীরে আরও অন্ধকার হয়ে গেল! ঘুটঘুটে অন্ধকার! কিছুই দেখা যাচ্ছে না! ভাগ্যিস টর্চটা সাথে নিয়েছিলাম! পোকাগুলোরাও আর ডাক শোনা যাচ্ছে না! হঠ্যাৎ করেই পরিবেশটা কেমন নিশ্চুপ হয়ে গেল।

আমিঃ আমার কিন্তু খুব ভয় করছে!

রাপাঃ শুধু তোর না আমাদেরও!

নুরিঃ হুম…

টর্চ লাইটের সাহায্যে আমরা সামনে এগোতে থাকি। মনে হলো কেউ আমাদের উপর নজরদারি করে রাখছে। আমাদের সাথে সাথেই চলছে কারণ আমাদের চলার শব্দটা ডাবল মনে হচ্ছিল আর পরিবেশটা নিশ্চুপ হওয়ার কারণে সেটা আরও ভয়ংকর মনে হচ্ছিল! হয়তো মনের ভুল! gj

আমরা সামনে থেকে কাদের দৌড়ানোর শব্দ শুনতে পেলাম। আমরা তিনজন থমকে দাঁড়ালাম সামনে থেকে কেউ দৌড়ে আমাদের দিকে আসছে! কে আসছে?

আমিঃ মনে হচ্ছে না কেউ সামনে থেকে দৌড়ে আমাদের দিকে আসছে??

নুরিঃ হ্যাঁ! কে..কে.. আসছে???

রাপাঃ এখন আমাদের কি হবে?? আমরা এখন কি করবো??

আমরা বেশি না ভেবে পিছন ঘুরে দৌড়াতে লাগলাম! এছাড়া তো আর উপায়ও ছিলো না!
দৌড়াতে দৌড়াতে আমরা ভুলে কবরস্থানের শেষ মাথায় চলি আসি! অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছিল না! কোন দিকে যাচ্ছি সেটাও বুঝতে পারছিলাম না! আমরা দাঁড়ালাম! হাঁপাছি! এবার শুনতে পেলাম কারা জানি রিসু, নুরি, রাপা বলে ডাকছে! পিছনে ঘুরলাম দেখলাম পিছনে যারা আমাদের পিছনে দৌড়াছিল তারাই, ওরাও অনেক হাঁপায় গেছে! তারা আর কেউ না তারা হলো সাফা, সামিয়া, অর্চি, মুনতাহা, রামিশা আর সাবরিনা!

আমিঃ তোরা এখানে??

অর্চিঃ আরে..কি যেন একটা শব্দ গলো.. তোদের খুজতে.. এখানে…( হাঁপাতে হাঁপাতে)

রাপাঃ কি??? কি বলতেছিস ভালো করে বল!

সাবরিনাঃ আরে.. তোরা কই ছিলি?? আমরা তাঁবুতে ঘুমাচ্ছিলাম, হঠ্যাৎ কে জানি ভয়ংকর একটা চিৎকার দেয়! সেই চিৎকারে আমাদের সবার ঘুম ভাঙ্গে যায়! তারপর দেখি দেখি তোরা তাঁবুতে নাই! ভাবলাম তোদের হয়তো কিছু হয়েছে, তাই তোদের খুঁজতে আমরা তাঁবু থেকে বের হই কিন্তু চারপাশ দেখি ঘুটঘুটে অন্ধকার। কিছু দেখা যাচ্ছিল না! একটু সামনে আগাই কিন্তু পরে পিছন ঘুরে দেখি তাঁবু নাই! আমরা তো ভয় শেষ! পিছন থেকে কে জানি আবার একটা ভয়ংকর চিল্লান দেয় আর একটা ভারি বাতাস বইতে থাকে! আমরা ভয়ে সামনে দৌড়াতে থাকি। তারপর মনে হলো তোরা তিনজন দাঁড়ায় আছিস তাই তোদের কাছে যাইতে থাকি! কিন্তু তোরাও কেন জানি পিছন ঘুরে দৌড় মারলি! তাই তোদের পিছন পিছন আমরাও দৌড়াই!

নুরিঃ আরে আমরা তো ভাবছি অন্য কেউ হয়তো আমাদের দিকে তেড়ে আসছে তাই আমরাও দৌড়াই!

আমিঃ তাঁবুতে থাকাকালীন আমরাও একটা কি যেন ধুপ করে পড়ার শব্দ পাই ওইজন্য দেখতে বের হই কি পড়ল! দেখি কিছুই পড়ে নাই! তারপর যখন তাঁবুতে ফিরবো দেখি তাঁবু থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি আমরা!

সামিয়াঃ কি হচ্ছে এসব???gj

মুনতাহাঃ আমি তো আগেই বলেছিলাম এখানে আসার কোনো দরকার নাই! এখন কি হবে?? আমরা এখন কি করবো??

আমরা মুনতাহার দিকে ভিতু দৃষ্টিতে তাকায় থাকি!

মুনতাহাঃ কি রে,আমার দিকে এভাবে তাকায় আছিস কেন??

রামিশাঃ তোর দিকে না তোর পি..পি…পিছনে দেখ!

মুনতাহা পিছন না ঘুরেই চিৎকার দিয়ে আমাদের কাছে চলে আসে!
মুনতাহার পিছনে একটা বুড়ে করে লোক, একটা চোখ নষ্ট, চুল আর দাড়ি সাদা মনে হয়! অন্ধকারে কিছুই ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে না! ওনার উপর একটু টর্চের আলো মারতেই ওনি গর্জন দিয়ে বললেন,

– কে তোমরা?? এখানে কি করো? এই মাঝরাতে এখানে এসেছো কেনো??

আমিঃ আসলে…আমরা… কবরস্থানে…..

আমার পুরো কথা শেষ না হতেই ওনি বলে উঠে,

– ভালো চাইলে পালাও এখান থেকে! এই জায়গা ভালো না জানো না? পালাও! পালাও! বলতে বলতে ওনি পালিয়ে যায়! কেনদিকে গেল সেটা অন্ধকারে দেখা গেল না!

সাফাঃ কে ছিল এটা??

সাবরিনাঃ পাগল মনে হয়!

রামিশাঃ হুমমম…

মুনতাহাঃ আজব পাগল!

সামিয়াঃ কিন্তু এখন আমরা কি করবো??

আমরা কি করবো বুঝতে পারছিলাম না!
আবার সেই উদ্ভট গন্ধ পাই! আমাদের প্রচন্ড ভয় করছিল!

আমিঃ চল সামনে আগাই!

নুরিঃ সামনে আগাবি??

আমিঃ এছাড়া উপায় কি??

নুরিঃ তাও ঠিক!

আমরা সামনে এগোতে থাকি। সামনে এগিয়ে দেখি কবরস্থানের পাশে এক লোক কি যেন বিড়বিড় করে পড়ছে! আমরা তার কাছে গেলাম। লোকটা অন্য মুখ হয়ে বসে ছিল। কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,

– এই যে দাদু!

– (নিশ্চুপ)

আমি আবার ডাকলাম,
– দাদু?

– (নিশ্চুপ)

সামিয়া কাছে গিয়ে লোকটার কাঁধে হাত দিয়ে ডাকল,
– দাদু শুনছেন??

লোকটা বিড়বিড় করা বন্ধ করল। সামিয়া আবার ডাকল,
– দাদু?

তিনি এবার উত্তর দিলেন,
– কি? কি চাই?

আমিঃ আসলে আমরা পথ হারায় ফেলেছি, অন্ধকারে সঠিক পথটা খুঁজে পাচ্ছি না, একটু পথ চেনায় দিবেন প্লিস?

লোকটা দাঁড়াল। আমদের পিছনে হঠ্যাৎ করে কি যেন একটা ভয়ংকর শব্দ হলো, আমরা পিছনে ফিরলাম , কিছু দেখা যাচ্ছে না! সামনে তাকাতেই দেখি লোকটা নেই!

রামিশাঃ লোকটা গেলো কই??

সাবরিনাঃ হ্যাঁ কই গেলো লোকটা??

আমরা আরে বেশি আতঙ্কিত হয়ে গেলাম। এরই মধ্যে আমাদের হাতের টর্চটাও বন্ধ হয়ে যায়! আশ্চর্যকর ব্যাপার হলো সবগুলো টর্চ একসাথে বন্ধ হয়ে যায়। চারপাশ আরও গভীর অন্ধকার হয়ে গেল। পূর্ণিমার রাত হওয়া সত্ত্বেও আকাশে কোনো আলো নেই! একটা শীতল হাওয়া বইতে থাকল ধীরে ধীরে। মনে হলো কোনো অশরীর কিছু আমাদের চারপাশে আছে! জানি না কতো রাত! হাতের ঘড়ি টাও তাঁবুতে ফেলে এসেছি! আমাদের হাত – পা কাঁপতে থাকে! আমরা ওই জায়গায়ই দাঁড়ায় থাকি। আমাদের পিছন থেকে কারও চলার শব্দ শুনতে পাই, উদ্ভট গন্ধটা এখন আরও অনেক তীব্র! পিছন থেকে কে জানি কানে ফুঁ দিল! চিৎকার দিয়ে পিছন তাকিয়ে দেখি, এক ভয়ংকর কিছু দাঁড়িয়ে! অন্ধকারে ভালোভাবে কিছু দেখা যাচ্ছিল না! আর কিছু খেয়ালও নেই! কিন্তু শুধু এইটুকু বুঝতে পারলাম সেটি ছিল অশরীরির কিছু! আমরা সবাই সেই মুহূর্তে জ্ঞান হারালাম!

ভোরের আলোয় চোখ খুলল আমাদের! মাদ্রাসার ছাত্ররা কুরআন পাঠ করছে। দেখি আমরা ঠিক তাঁবুর সামনে পড়ে আছি! অশরীরির কিছু দেখার পর কি হলো, জ্ঞান হারানোর পর কি হয়েছে আর আমরা তাঁবুর সামনেই বা কিভাবে আসলাম কোনো কিছুই মনে নেই! কিছুই জানি না!
আমরা তাড়াতাড়ি তাঁবু থেকে সব জিনিস নিয়ে বাসায় আসি। আসার সময় কবরস্থানের দিকে একবার তাকায় দেখি কবরস্থান থেকে ধোঁয়া উড়ছে!
বাসায় এসে আপু জিজ্ঞাসা করে,
– কেমন কাটলো কবরস্থানে একরাত?

আমরা একে অপরের মুখের দিকে তাকালাম! কালকে রাতে যা যা হয়েছে তা সবই একটা গভীর রহস্য! দুশস্বপ্ন বলতে গেলে! কিসের শব্দে আমরা তাঁবু থেকে বের হই! কিভাবে আমরা তাঁবু থেকে আমরা তাঁবু থেকে এতো দূরে চলে যাই! কে ছিল সেই দাদু! কোথা থেকে সেই উদ্ভট গন্ধ আসছিল সবই রহস্য! ওই ঘটনার পর আমাদের এমন এডভেঞ্চার করার শখ একেবারে মিটে গেছে!!!

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments