Wednesday, April 24, 2024
Homeরম্য গল্পবিখ্যাতদের ২০টি মজার ঘটনা

বিখ্যাতদের ২০টি মজার ঘটনা

বিখ্যাতদের ২০টি মজার ঘটনা

সৃষ্টিশীল মানুষ মাত্রই রসিক মানুষ! জীবনের সাধারণ ও বিরক্তিকর ঘটনাগুলোকে হাস্যরসে পরিপূর্ণ করে তোলার ক্ষমতা তাঁদের থাকে। বিখ্যাত লেখকদের জীবনেও আছে এমন কিছু মজার ঘটনা । চলুন, জেনে আসি-

কঠিন পিঠা

এক মহিলা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্য কিছু পিঠা বানিয়ে নিয়ে যান। কেমন লাগল পিঠা জানতে চাইলে কবি গুরু উত্তর দেন-

‘লৌহ কঠিন, প্রস্তর কঠিন, আর কঠিন ইষ্টক,

তাহার অধিক কঠিন কন্যা তোমার হাতের পিষ্টক!’


আপদ-বিপদ

ইংরেজ শাসনামলের প্রথম বাঙালি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্রোপাধ্যায়। ম্যাজিস্ট্রেট হতে গিয়ে আর সবার মতো তাকেও ইন্টারভিউর মুখোমুখি হতে হয়েছিল। স্বভাবতই পরীক্ষক ছিলেন একজন ইংরেজ। ইংরেজ মহাশয় ইন্টারভিউর এক পর্যায়ে বঙ্কিমচন্দ্রকে প্রশ্ন করলেন,

– হোয়াট ইজ দ্য ডিফারেন্স বিটুইন আফদ (আপদ) অ্যান্ড বিফদ (বিপদ)?

বঙ্কিমচন্দ্র উত্তর দিলেন,

– ধরুন, আমি নৌকায় চড়ে নদী পার হচ্ছি এমন সময় প্রচণ্ড ঝড় উঠল, এটা হচ্ছে বিপদ। আর এই যে আমি একজন বাঙালি হয়েও ইংরেজের কাছে বাংলার পরীক্ষা দিচ্ছি এটা হচ্ছে আপদ।


নারায়ন দে’র ‘দে

এলাকার অন্যতম ধনী দেব নারায়ন দে’র বাড়িতে একটা বড়সড় অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছিল। লেখা হচ্ছিল দেনাপাওনা ও খরচাপাতির ফর্দ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রসিক লেখক প্যারীচাঁদ মিত্র। খরচের ফর্দ দেখে প্যারীচাঁদ মিত্র বললেন-,

– একি! মিষ্টান্নের জন্য এতো কম টাকা? ব্রাম্মণকেও তো তেমন দেয়া হচ্ছে না। এসব খরচ কিছু বাড়িয়ে দিন।

দেবনারায়ন বললেন,

– প্যারীচাঁদ বাবু, আপনি শুধু খরচ বাড়াতে বলছেন। টাকাটা কে দেবে শুনি?

– কেন? আপনি দেবেন। আপনার নামের আগে দে, নামের পরেও দে। দিতে আপনাকে হবেই।


চোরের উপর বাটপারি

লেখক প্রেমেন্দ্র মিত্র তখন নামকরা চিত্রপরিচালক। তার নতুন একটা ছবি মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু ঐ ছবির কাহিনী নিয়ে কথা উঠেছে! বুদ্ধদেব গুহ পত্রিকায় বিবৃতি দিয়েছেন যে কাহিনীটি তার, প্রেমেন্দ্র মিত্র যা নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন। সবাই উদগ্রীব, প্রেমেন্দ্র মিত্র কী বলেন? ক’দিন পর প্রেমেন্দ্র মিত্র বিবৃতি দিলেন। তিনি বললেন,

– চলচ্চিত্রের কাহিনীটি আমার না সেটা সত্যি, তবে বুদ্ধদেব গুহ যেখান থেকে গল্পটি নিয়েছেন- আমিও ঐ একই জায়গা থেকে নিয়েছি।


মানুষের উপকার

একবার এক ছাত্র মার্ক টোয়েনের কাছে এসে বলল,

– আমি ডাক্তারি পড়া ছেড়ে দিয়েছি। এখন সাহিত্যচর্চার মধ্য দিয়ে মানুষের উপকার করতে চাই।

মার্ক টোয়েন উত্তর দিলেন,

– তুমি ডাক্তারী পড়া ছেড়ে দিয়ে এমনিতেই মানবজাতির অনেক উপকার করেছ। আর উপকার না করলেও চলবে!


মুখের মতো জুতা

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং দীনবন্ধু মিত্র দুজনে ছিলেন পেয়ারা বন্ধু। দীনবন্ধু ডাক বিভাগে কাজ করতেন। আর সে সুবাদে তাকে প্রায়ই ঘুরে বেড়াতে হতো বিভিন্ন অঞ্চলে।

একবার আসামে গিয়ে সেখান থেকে বঙ্কিম এর জন্য কাপড়ের একজোড়া জুতো কিনে এনেছিলেন। লোক মারফত সে উপহার বঙ্কিমের কাছে পাঠিয়েছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে একটা চিরকুটে লিখে দিলেন- ‘জুতো কেমন হয়েছে জানিও।’

বঙ্কিম চিরকুটটি পড়ে হাসলেন। তারপর তার উত্তরে লিখে দিলেন- ‘ঠিক তোমার মুখের মতো!’


মৃত’র চিঠি

নোবেল বিজয়ী ইংরেজ লেখক রুডইয়ার্ড কিপলিং যে পত্রিকাটির গ্রাহক ছিলেন সেখানে একবার ভুলবশত কিপলিং এর মৃত্যু সংবাদ ছাপা হল। সংবাদটি পড়ে তৎক্ষণাৎ কিপলিং পত্রিকা সম্পাদককে চিঠি লিখলেন- আপনার পত্রিকা মারফত জানতে পারলাম যে আমার মৃত্যু হয়েছে। তাই দয়া করে আপনাদের গ্রাহক তালিকাটা থেকে আমার নামটি বাদ দিয়ে দিবেন!


সাজিয়ে রাখা

বিখ্যাত লেখক জর্জ বার্নার্ড শ-র বাড়িতে বেড়াতে এসে এক মহিলা অবাক হয়ে বললেন,

– মিস্টার শ, আপনার ঘরে দেখছি একটাও ফুলদানি নেই। আমি ভেবেছিলাম, আপনি এত বড় একজন লেখক; আপনি নিশ্চয়ই ফুল ভালবাসেন। তাই আপনার বাসার ফুলদানিতে বাগানের তাজা ও সুন্দর ফুল শোভা পাবে।

প্রত্যুত্তরে শ সঙ্গে সঙ্গেই বললেন,

– ম্যাডাম, আমি বাচ্চা ছেলেমেয়েদেরকেও ভালবাসি। তার অর্থ এই নয় যে, আমি তাদের মাথা কেটে নিয়ে এসে ঘরে সাজিয়ে রাখব।


কাঁদানো

দাঁতের ব্যথায় অস্থির হয়ে আর্নেস্ট হেমিংওয়ে ডেন্টিষ্টের কাছে গেলেন। ডেন্টিষ্ট দাঁত দেখে বললেন,

– তোমার লেখা পড়ে আমার বৌ কেঁদে ফেলে। এবার দেখ আমি তোমাকে কীভাবে কাঁদাই!


জর্জ বার্নার্ড শ’র ভূমিকা

জর্জ বার্নার্ড শ একবার এক প্রবন্ধে লিখলেন, ‘বাড়ি হল বালিকাদের জেলখানা আর নারীদের কারখানা’।

এক রসিক পাঠক লেখাটি পড়ে প্রশ্ন করলেন,

– তাহলে একটি বাড়িতে পুরুষের ভূমিকা কী?

বার্নার্ড শ উত্তর দিলেন,

– একই সঙ্গে একজন জেলার আর কারখানার মালিক।


আর্শিবাদ

বিদ্যাসাগর-রচনাসম্ভার সম্পাদনা করার সময় প্রমথনাথ বিশী লিখেছিলেন, ‘ঈশ্বরচন্দ্র কেবল বিদ্যাসাগর বা করুণার সাগর নয়, রসসাগরও বটে।‘

এমনি একদিন এক বিধবার বিয়ে দেয়ার আসরে বিদ্যাসাগর গেছেন। সেখানে তাঁর এক বন্ধুর মেয়ে এসে তাঁকে প্রণাম করলে, তিনি সবাইকে শুনিয়ে বলেন,

– বেঁচে থাকো মা। বিয়ে হোক, বিধবা হও, আমি আবার বিয়ে দিই।


দর্পণ ও মেরুদণ্ড

নাট্যকার সেলিম আল দীনকে একদল নাট্যকর্মী তাদের নাটক দেখার আমন্ত্রণ-পত্র দিতে এলে তিনি তাদেরর জিজ্ঞাসা করলেন,

– আচ্ছা তোমরা নাটক কেন করো বলো তো?

– স্যার, নাটক হলো সমাজের দর্পণ।

– নাটক সমাজের দর্পণ! (এই জাতীয় কথায় স্যার বড়ই বিরক্ত হতেন) তা এ কথাটা একটি অথেনটিক বইতে আমাকে তুমি দেখাতে পারো? শোনো, পত্রপত্রিকাও তো সমাজের দর্পণ, তাই না? এমন আরো আছে, বাজারে গেলে সমাজ চেনা যায়। এমন কত না দর্পণ আছে। এক সময় আবার শুনলাম শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, আবার শুনলাম তরুণ সমাজ জাতির মেরুদণ্ড, এখন শুনি নারীপ্রগতি জাতির মেরুদণ্ড। এত মেরুদণ্ড নিয়ে একটা জাতি কি হাঁটতে পারে?


যেমন প্রশ্ন তেমন উত্তর

১৮৬২ সালে প্রকাশিত হয় ভিক্টর হুগোর বিখ্যাত বই ‘লা মিজারেবল‘। তখন এটি নিয়ে হৈ চৈ পড়ে যায়। নানা সমালোচক এবং নানা খবর পত্র-পত্রিকায় আসে। কিন্তু সেখান থেকে ভিক্টর হুগো বুঝতে পারলেন না বইটি বিক্রি হচ্ছে কেমন।

অবশেষে তিনি এর উত্তর জানার জন্য প্রকাশককে খুব ক্ষুদ্র একটা চিঠি দিলেন শুধুমাত্র ‘?’লিখে। প্রকাশক ‘?’ এর মানে বুঝতে পারলেন এবং জবাব দিলেন ‘!’


মাতালের জবাব

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের অর্থিক অনটনের সময় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর উনাকে টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করতেন। একদিন এক মাতাল উনার কাছে সাহায্য চাইতে এলে বিদ্যাসাগর বললেন,

– আমি কোন মাতালকে সাহায্য করি না।

– কিন্তু আপনি যে মধুসুদনকে সাহায্য করেন, তিনিও তো মদ খান, মাতাল।

– ঠিক আছে আমিও তোমাকে মধুসূদনের মত সাহায্য করতে রাজি আছি তবে তুমি তার আগে একটি ‘মেঘনাদ বধ’ কাব্য লিখে আন দেখি?


ধীরগতির ট্রেন

অনেক বছর আগের কথা। সে সময় আমেরিকান ট্রেনগুলো বেশ ধীরগতিতে চলত। দেরী করত ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সকাল ৮টার ট্রেন রাত ৮টায় আসবে কী-না সে বিষয়ে সবাই থাকত সন্দিহান।

এমনই এক সময়ে বিখ্যাত রম্যসাহিত্যিক মার্ক টোয়েন একবার কোথাও যাওয়ার জন্য ট্রেনে চেপে বসে ছিলেন। কিছুক্ষণ পর কামরায় উঠল টিকিট চেকার। মার্ক টোয়েন গম্ভীর মুখে চেকারের দিকে একটা ‘হাফ টিকিট’ বাড়িয়ে দিলেন। বুড়ো মানুষের হাতে ‘হাফ টিকিট’ দেখে টিকিট চেকার অবাক! তাঁর প্রশ্ন,

– কী মশাই, আপনি হাফ টিকিট কেটেছেন কেন? গোঁফ-মাথার চুল সবই তো সাদা। আপনি কী জানেন না চৌদ্দ বছরের বেশি হলে তার বেলায় আর হাফ টিকিট চলে না?

মার্ক টোয়েনের সোজা জবাব,

– যখন ট্রেনে চড়েছিলাম, তখন তো বয়স চৌদ্দই ছিল। কে জানত, ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছতে এত দেরী করবে!


দাড়ি কামানো রেজার

খ্যাতনামা আইরিশ সাহিত্যিক, সমালোচক ও নাট্যকার জর্জ বার্নার্ড শ‘র মুখের লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য ছিল তার দাড়ি। একবার একটি ইলেকট্রিক রেজর নির্মাতা কোম্পানির কর্তারা বাজারে আসা তাদের নতুন রেজরের প্রচারণায় শ’র এই দাড়িকে নিশানা করল। শ’কে তারা এই নতুন রেজার দিয়ে দাড়ি কামানোর অনুরোধ করল। বিনিময়ে দেয়া হবে লোভনীয় অঙ্কের টাকা। শ তাদের হতাশ করে বললেন,

– তার বাবা যে কারণে দাড়ি কামানো বাদ দিয়েছিলেন তিনিও ঠিক একই কারণে এ জঞ্জাল ধরে রেখেছেন।

কোম্পানির কর্তারা কারণটি জানতে আগ্রহী হলে বার্নার্ড শর বললেন,

– আমার বয়স তখন পাঁচ বছর। একদিন বাবা দাড়ি কামাচ্ছেন। আমি তাকে বললাম, ‘বাবা তুমি দাড়ি কামাচ্ছ কেন!’ তিনি এক মিনিট আমার দিকে নীরবে তাকিয়ে থেকে বললেন, ‘আরে তাই তো, আমি এ ফালতু কাজ করছি কেন?’ এই বলে তিনি সেই যে জানালা দিয়ে রেজার ছুঁড়ে ফেললেন জীবনে আর কখনও তা ধরেননি।


দাঁড়িয়ে থাকা

মার্ক টোয়েন একবার শেভ করতে সেলুনে গেছেন। শেভ করানোর ফাঁকে ফাঁকে নাপিতের সঙ্গে আলাপ করছিলেন তিনি।

– আপনাদের শহরে এবারই প্রথম বেড়াতে এলাম।

– ভালো সময়ে এসেছেন। আজ রাতে আমাদের এখানে মার্ক টোয়েন বক্তৃতা করবেন। আপনি সেখানে যাচ্ছেন তো?

– হুম। আশা করছি যাব।

– টিকিট কিনেছেন?

– না তো!

– মনে হয় আর টিকিট পাবেন না। পেলেও আপনাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।

– আমার ভাগ্যটাই আসলে খারাপ। ভদ্রলোক যখনই বক্তৃতা করেন, তখনই আমাকে সব সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়!


এমন ঘটনা জীবনে বারবার ঘটে না

লিও টলস্টয় একবার বক্তৃতা করছিলেন। বক্তৃতায় সব প্রাণীর প্রতি অহিংস ও সহানুভূতিশীল হওয়ার কথা বলছিলেন তিনি। এমন সময় একজন প্রশ্ন করল,

– বনের ভেতর একটা বাঘ যদি আমাকে আক্রমণ করে, কী করব বলুন তো?

টলস্টয় বললেন,

– নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করুন। এমন ঘটনা জীবনে বারবার ঘটে না!


রূপ ও মেধা

বিখ্যাত নর্তকী ইসাডোনা ডানকান একবার জর্জ বার্নার্ডশকে লিখলেন, ‘ভাবুন তো, আপনি আর আমি যদি একটা শিশুর জন্ম দিই, ব্যাপারটা কী চমৎকারই না হবে! সে পাবে আমার রূপ, আর আপনার মতো মেধা।’

বার্নাড শ জবাবে লিখলেন, ‘যদি আমার রূপ আর আপনার মতো মেধা পায়, তবে?’


জর্জ বার্নাড ‘শ’র আবিষ্কার

জর্জ বার্নাড ‘শ’ প্রায় সত্তর বছর পর্যন্ত মাথা ব্যথায় ভুগেছিলেন। এ ব্যাপারে শ উত্তর মেরুর আবিষ্কারক নানসেনকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন,

– আচ্ছা, আপনি মাথা ধরার কোন ঔষধ আবিষ্কার করেছেন কি?

নানসেন তো অবাক। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন,

– না তো!

– কী আশ্চার্য! উত্তর মেরু আবিষ্কারের জন্য সারাজীবন কাটালেন। অথচ পৃথিবীর কাছে তার মূল্য দু পয়সাও নয়। আপনি মাথা ধরার কোন ঔষধ আবিষ্কারের চেষ্টাও করেননি; কিন্তু পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই এই রোগে আক্রান্ত হয়।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments