Friday, March 29, 2024
Homeকিশোর গল্পএক চাষী, তার মুরগি আর একটি শেয়ালের গল্প

এক চাষী, তার মুরগি আর একটি শেয়ালের গল্প

এক চাষী, তার মুরগি আর একটি শেয়ালের গল্প

খরগোশ আর কচ্ছপের দৌড় প্রতিযোগিতার গল্প শোনেনি এমন কাউকে বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ গল্পটিসহ অসংখ্য শিক্ষণীয় ও মজার গল্প যিনি লিখেছেন তিনি হলেন গ্রীসের বিখ্যাত গল্পকার ঈশপ। ঈশপ ছিলেন মিসরের ফারাও বাদশাহ আমাসিসের সময়কার লোক। সামস দ্বীপে তিনি বাস করতেন। ইয়াডমন নামে এক নাগরিকের ক্রীতদাস ছিলেন তিনি।

ঈশপ দেখতে ছিলেন কদাকার কিন্তু বুদ্ধিতে ছিলেন অপরাজেয় আর রঙ্গরসে ছিলেন অদ্বিতীয়। তিনি বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে তাঁর শিক্ষাপ্রদ অমর কাহিনীগুলো মানুষকে শোনাতেন।

বিখ্যাত গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিস থেকে শুরু করে সব শ্রেণীর মানুষ ছিলেন তার গল্পের ভক্ত। তার মৃত্যুর পর গ্রীসের দার্শনিক জিমট্রিয়াস তার গল্পগুলো সংগ্রহ করে রাখেন। সেই থেকে ঈশপের গল্প আজো সারা বিশ্বের অমূল্য সম্পদ। রংধনু আসরে আমরা ঈশপের দু’টি গল্প প্রচার করেছি। এক চাষী তার বাড়ীতে মুরগি পালত। ওই বাড়ীর পাশেই বাস করত একটি শেয়াল।

মুরগি দেখলেই শেয়ালের জিভে পানি এসে যেত। আর তাই ধুর্ত শেয়াল প্রতিদিন মাঝরাতে চুপিসারে খাঁচায় ঢুকে একটি করে মুরগি খেয়ে ফেলত। অবশ্য আরো বেশি খেতে যে ওর লোভ হতো না তা নয়। কিন্তু মনে মনে ভাবত : “যদি বেশি বেশি খেয়ে ফেলি তাহলে চাষী টের পেয়ে যাবে। আর তখনই আমাকে ধরার জন্য ফাঁদ পাতবে। তার চেয়ে বরং একটি করেই খাই। কথায় বলে না, অতি লোভে তাঁতি নষ্ট।” এভাবে বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর একদিন সকালে চাষী গেল খাঁচা থেকে মুরগি ছেড়ে দিতে। কিন্তু আশপাশে তাকিয়ে মাটির ওপর শেয়ালের পায়ের ছাপ দেখতে পেল। তার মনে সন্দেহ হলো শেয়াল নিশ্চয়ই তার মুরগি খেয়ে ফেলেছে। তারপর সে খাঁচার দরজা খুলে দিয়ে এক এক করে মুরগি গুনতে লাগল। কিন্তু একি?

অনেক মুরগি কমে গেছে! চাষীর আর বুঝতে বাকী রইল না যে, রাতের অন্ধকারে শেয়াল এসে মুরগি খেয়ে যাচ্ছে। ওইদিনই চাষী শেয়ালকে উচিত শিক্ষা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খাঁচার চারপাশে জালের ফাঁদ বিছিয়ে দিয়ে চাষী একপাশে ওঁৎ পেতে বসে রইল। এদিকে প্রতিরাতের মত আজও শেয়াল এল মুরগি ধরতে। কোনদিকে না তাকিয়ে সোজা সে খাঁচার দিকে পা বাড়ালো। আর এমনি চাষী ফাঁদ ধরে দিল টান। মুহূর্তেই শেয়াল জালের ভেতর আটকা পড়ে গেল। শেয়ালকে হাতের মুঠোয় পেয়ে রাগে চাষীর গা রি রি করতে লাগল। চরম শিক্ষা দেয়ার জন্য সে শেয়ালের লেজে আগুন ধরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল। যেমন ভাবা তেমন কাজ। তেলের পাত্রে একটা ন্যাকড়া ভিজিয়ে শেয়ালের লেজে বেধে তারপর আগুন ধরিয়ে দিল।

দেখতে দেখতে লকলক করে জ্বলে উঠল আগুন। শেয়াল সেখান থেকে পালানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগল। মুহূর্তের আগুন লেগে গেল ফাঁদ পাতা জালে। জাল পুড়ে যেতেই শেয়াল ছাড়া পেয়ে গেল। এরপর প্রাণ বাঁচানোর জন্য দিশেহারা শেয়াল দিল ভোঁ দৌড়। লেজের আগুন নেভানোর জন্য সোজা চাষীর ধানক্ষেতের মাঝ বরাবর দৌড়াতে লাগল। পাকা ধানক্ষেতের মধ্যদিয়ে যাওয়ার সময় শেয়ালের লেজের আগুন মুহূর্তেই লেগে গেল ধানগাছে। আর অমনি দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল আগুন। শেয়াল কোনমতে জ্বলন্ত মাঠ থেকে বাইরে গিয়ে মাটিতে গড়াগড়ি করতে লাগল।

কিছুক্ষণ পর শেয়ালের লেজের আগুন নিভে গেল। পেছনে তাকিয়ে শেয়াল দেখতে পেল পুরো মাঠজুড়ে আগুন আর আগুন। অসহায় চাষী দূর থেকে তার ধানক্ষেত পুড়ে যেতে দেখে হতাশ হয়ে পড়ল। ধপ করে মাটিতে বসে সে বলতে লাগল : হায় হায়! শেয়ালকে শাস্তি দিতে গিয়ে আমার এতবড় শাস্তি হল! আহা! শেয়ালটাকে এতবড় শাস্তি না দিয়ে যদি দু’চার ঘা লাগিয়ে দিতাম তাহলেই তো চুরি করে আমার মুরগি খেতে আসতো না। লঘু পাপে গুরু দণ্ড দিতে গিয়েই তো আমার এতবড় ক্ষতি হল।

Anuprerona
Anupreronahttps://www.anuperona.com
Read your favourite literature free forever on our blogging platform.
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments