এক কাক এক তাঁতির বাড়ির ‘তানা’র কাছে বার বার বিরক্ত করছিল। তানার কাছেই সূতা ফেলে ভিজিয়ে মাড় দেয়ার জন্য রাখা হয়েছিল একটা ফেনের চাড়ি। কাকের লোভটা সেই ফেনের দিকে। তাঁতি বউ তানা কাড়াচ্ছিলো। তার তিন বছরের ছেলেটা একটা বাটিতে গুড়মুড়ি নিয়ে মাটিতে বসে খাচ্ছিল। কাকের নজরটা সেদিকেও। একবার ঠোকরও মেরেছে ছেলের হাতের মুড়ির বাটিতে। তাঁতি তখন কাছে বসেই তামাক খাচ্ছিল। কাক ফেনে মুখ দেওয়ায় সে হুসহুস করে কাক তাড়িয়েছিল। আর যখন ছেলের হাতে মুড়ির বাটিতে ঠোকর মারে তখন তাঁতি ক্ষিপ্ত হয়ে চিৎকার করে বলে :
“শালার কাইয়া, আমার পুলার আতে ঠোহর মারছ—–ঢেহিডা দেখছস-এডা ফেইকা মাইরা তরে ছাতু বানামু।”
তাঁতির বউ বলে ; ঠিহঐ (ঠিকই), একটা কিছু করণ দূরহার (দরকার)। কাইয়াডা মেলা কানাকানা (বিরক্ত করে। তানা কাড়াইবার সুময় ওইরা আইয়া একবার তানার সূতা আওলা-ঝাওলা কইরা ফালাইতাছে। কাইয়াডারে একটা কিছু করণ লাগে।
তাঁতি বলে : খাড়ও (অপেক্ষা কর)! আমি তক্কে তক্কে আছি। অরে আইজ অজিমত (মজা দেখানো বা প্রতিশোধ নেয়া) দেখামু। তাঁতি তানার একটা নাইল হাতে নিয়ে ঢেঁকির ওপর গিয়া বসে। মনে হয় সে বুঝি খুঁটিয়ে নাইলটি পরীক্ষা করছে। সে খুব ব্যস্ত ও মগ্ন নাইল নিয়ে।
তাঁতির নাইলে এই মনোসংযোগের সুযোগে কাক আবার ফেনের চাড়িতে বসে পাছা ও লেজ ওপরের দিকে তুলে মুখ চাড়িতে ডুবিয়ে যেই ফেনের সুর মুখে তুলে উড়াল দিয়েছে অমনি তাঁতি তার দিকে নাইল ছুঁড়ে মারায় তা কাকের বাঁ পায়ে লেগে পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা পায়। মুখের ফেনের সর ফেলে দিয়ে কাছেই একটা গাছে গিয়ে বসে যন্ত্রণায় কাতর কাক বলে :
দেখাইল পেঁকি, মারল নাইল,
বুঝলাম না। জোলার ভাইল।